দেশে মসলিনের গল্প কে না জানে! হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী এই শাড়ি বাজারে আসছে চলতি বছরই। হাতে পেতে খরচ করতে হবে কয়েক লাখ টাকা। আদি মসলিনের গুণাগুণ সমৃদ্ধ এই কাপড়ের বুনন হচ্ছে এবার আরও মিহি। একটি আংটির ভেতর দিয়ে অনায়াসে গলে যায় দুইটি শাড়ি।
আগামী মাসে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কাছে মসলিন তৈরির প্রযুক্তি হস্তান্তর করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে তাঁত বোর্ড। তারপরই পূর্ণ উদোমে শুরু হবে এই ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের উৎপাদন।
নারায়ণগঞ্জের মসলিন হাউজ ঘুরে দেখা যায়, চরকা ঘুরছে। তৈরি হচ্ছে মসলিনের জন্য বিশেষ তুলার বিশেষ ধরনের সুতা। সুতাকাটা কাজে নিয়োজিত নারীরা এতই দক্ষ যে, তাদের তৈরি মাত্র আড়াই গ্রাম সুতার দৈর্ঘ্য প্রায় দুই কিলোমিটার। যা দিয়ে একটি ফুটবল মাঠকে পাঁচবারের বেশি পেঁচানো সম্ভব। বলা যায়, সেখানে পুরোদমে চলছে মসলিন তৈরির কাজ।
মসলিন শিল্পে কর্মরত নারীরা জানান, এমন সুতা কাটা চাট্টিখানি কথা নয়। নিখুঁতভাবে কাজ করতে হলে থাকতে হয় নিবিড় মনোযোগ। সুতায় তুলা ছাড়তে বাম হাতের তিন আঙুলকে রাখতে হয় মোলায়েম।
স্ত্রী রেখা আক্তারকে নিয়ে একসাথে মসলিন বুনতে থাকা মোকসেদ আলী জানান, ইংরেজরা যাদের আঙুল কেটে নিয়েছিল, সেই হতভাগাদের কেউ হয়তো তারই পূর্বপুরুষ। হারিয়ে যাওয়া মসলিন এখন তাদের হাত ধরে আবারও প্রাণ পাচ্ছে। তাই এর গর্বটাও কম নয়।
বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. ইউসুফ আলী বলেন, এ প্রযুক্তি আমরা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেবো। ফলে এটার বাণিজ্যিকীকরণ হবে। আমরা আশা করছি, বেসরকারি খাতে এর উৎপাদন খরচ কমে যাবে।
বেসরকারি পর্যায়ে তৈরি হলে ঐতিহ্য আর অহংকারের কাপড় যে আদি মানের হবে তার নিশ্চয়তা কী জানতে চাইলে মসলিন পুনরুদ্ধার প্রকল্পের পরিচালক মো. আইয়ুব আলী বলেন, জনগণ যেন প্রতারিত না হয় এজন্য আমরা তাঁত বোর্ড থেকে প্রতিটি স্টেজ দেখভাল করবো। কাপড় দেখে আমরা নিশ্চিত হয়ে বলবো, এটা ঢাকাই মসলিন। তারপর সেটা বাজারজাত করতে পারবে, এর আগে নয়।