আর্কাইভ থেকে এশিয়া

মিয়ানমারে বিভেদ ভুলে একজোট হচ্ছে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী

মিয়ানমারে বিভেদ ভুলে একজোট হচ্ছে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী

মিয়ানমারে বিভেদ দূরে সরিয়ে রেখে সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে একজোট হচ্ছে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মের মানুষ। দেশটির চলমান বিক্ষোভে রাজপথে নেমেছে বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলিম, হিন্দু এবং জাতিগত নানা গোষ্ঠীর মানুষ।

ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা জানায়, অসহযোগ আন্দোলনে সমর্থন দিচ্ছে মিয়ানমারের বিশাল অংশজুড়ে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা বিদ্রোহী যোদ্ধাদের প্রধান সশস্ত্র সংগঠনগুলো। বিক্ষোভকারীদের ওপর সামরিক নেতাদের দমনপীড়ন সহ্য করবে না বলে ইঙ্গিতও দিয়েছে তারা।

একটি বিবৃতি দিয়ে অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে মিয়ানমার-ভারত সীমান্তবর্তী আদিবাসী নাগা জাতিগোষ্ঠী। ওই অঞ্চলে নাগা জাতিগোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল নাগা পার্টির এক যুবনেতা বলেন, এখন যা ঘটছে তা দলীয় রাজনীতি নিয়ে নয়।

ফোনে নাগা যুবনেতা বলেন, এ লড়াই সিস্টেমের বিরুদ্ধে। সেনাবাহিনীর সঙ্গে আমরা আপোস করতে পারি না। এরা আমাদের ইতিহাসে এক কালো চিহ্ন এঁকে দেবে।

মিয়ানমারের জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে প্রায়ই বিভক্তি, বৈরিতা দেখা গেলেও এবারের আন্দোলন-বিক্ষোভে ভিন্ন ভিন্ন জাতি পরিচয়ের বিক্ষোভকারীদের মধ্যে বিরল একতা দেখা যাচ্ছে।

এরই মধ্যে জাতিগোষ্ঠীগুলোর নেতাদেরকে তুষ্ট করার চেষ্টা নিয়েছে মিয়ানমারের নতুন সামরিক সরকার। জাতিগত বিশিষ্ট রাজনীতিবিদদের কয়েকজনকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছে সামরিক জান্তা। দুই একজন রাজনীতিবিদ দেশের গণতান্ত্রিক পথচলার বিরুদ্ধে থাকলেও স্বৈরতন্ত্রের বিরদ্ধেই অবস্থান নিয়েছে তাদের দল।

জান্তা সরকারের রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক পরিষদের সদস্যপদ নিয়েছেন কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন কেএনইউয়ের ঊর্ধ্বতন সাবেক নেতা পাদো মান নায়েন মায়ুং। টেলিফোনে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমাদের রাজনৈতিক দাবি মেটেনি-আমরা এ শিক্ষাই পেয়েছি।

তবে তার কথার বিপরীত অবস্থান নিয়েছে কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন। বৃহস্পতিবার সব জাতিগোষ্ঠীকে স্বৈরাচারের মূলোৎপাটন করতে একযোগে কাজ করে যাওয়ার ডাক দিয়েছেন দলটির নেতা স মুতু সায়ফো।

গত সপ্তাহের বিক্ষোভে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয় কারেন সশস্ত্র সংগঠনের আরেকটি দলছুট গোষ্ঠী ডেমোক্রেটিক কারেন বুড্ডিস্ট আর্মি ডিকেবিএ-এর যোদ্ধারা। অভ্যুত্থান বিরোধী আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছে তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি টিএনএলএ এবং রেস্টোরেশন কাউন্সিল অব শান স্টেট আরসিএসএস-সহ অন্যান্য প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলোও।

এদিকে, ২০১৮ সাল থেকে পশ্চিম রাখাইন রাজ্যে সরকারি সেনাদের সঙ্গে প্রাণঘাতী সংঘাতে লিপ্ত আরাকান আর্মি এএ’র এক মুখপাত্র বলেছেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি গভীরভাবে নজরে রেখেছে তারা।

সেনা অভ্যুত্থান নিয়ে প্রকাশ্যে কোন মন্তব্য করেনি উত্তরের কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মি কেআইএ। তবে ফেইসবুক পোস্টে সেনাবাহিনীকে সতর্ক করে দিয়ে দলটির এক উর্ধ্বতন নেতা বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের যেন গুলি করা না হয়।

কারেন গোষ্ঠীর এক নেতা এবং সালুইন ইন্সটিটিউট থিংক-ট্যাংকের কর্ণধার জানান, অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করাটা দায়িত্ব হিসাবে দেখছে তাদের অনেকেই। আজ দেশব্যাপী বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর হাজার হাজার তরুণ। সামরিক স্বৈরাচারকে প্রত্যাখ্যান করে মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য।

 

এসএন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন মিয়ানমারে | বিভেদ | ভুলে | একজোট | হচ্ছে | বিভিন্ন | জাতিগোষ্ঠী