আর্কাইভ থেকে দেশজুড়ে

দেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় যোগ হচ্ছে নতুন মাইলফলক

দেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় যোগ হচ্ছে নতুন মাইলফলক
প্রকল্পের অর্থায়ন নিয়ে চলা দীর্ঘদিনের বাধা কেটে যাওয়ায় অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে চট্টগ্রামে ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট (ইআরএল-২)। প্রকল্প ব্যয়ের সরকারি অংশের টাকা ছাড়ে পাওয়া গেছে সবুজ সংকেত। কাজ শেষ হলে রিফাইনারির নতুন ওই ইউনিটের বার্ষিক পরিশোধন সক্ষমতা হবে বর্তমান ইউনিটের দ্বিগুণ। ফলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় যোগ হবে নতুন মাইলফলক। সংশ্লিষ্টরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ২৩ হাজার ৫৯ কোটি টাকার ওই প্রকল্পের সরকারি (জিওবি) অংশের ১৬ হাজার ১৪২ কোটি টাকা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) ঋণ হিসেবে দিতে সম্মত হয়েছে অর্থবিভাগ। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পাঁচ বছর মেয়াদের প্রকল্পটি ২০২৭ সালের জুন মাসে শেষ হবে। তবে ঋণের জন্য ৫ শতাংশ হিসেবে ২০ বছরে বিপিসিকে সুদ হিসেবে দিতে হবে আরও ১৬ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলেও প্রকল্প শুরুর ২০ বছরেই প্রকল্পের দাম দাঁড়াবে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। এদিকে ইপিসি (ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন) ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ পেতে ফ্রান্সের টেকনিপ চার বছরের বেশি সময় ধরে প্রস্তাবনা নিয়ে কাজ করলেও শেষ মুহূর্তে প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়িয়েছে তারা। এ কারণে নতুন প্রকল্প উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সংশ্লিষ্টরা জানান, ইস্টার্ন রিফাইনারির বর্তমান প্লান্টটির মেয়াদ ছিল ২৫ বছর। বর্তমানে এটির বয়স পেরিয়েছে প্রায় ৫৫ বছর। এত বছর পরে এখনো পুরোদমে উৎপাদন চলছে রিফাইনারিতে। ওই ইউনিট নির্মাণ করেছিল টেকনিপ। এ কারণেই দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণের কাজও টেকনিপকে দিতে চেয়েছিল বিপিসি। কিন্তু ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠানটি ভেঙে দুটো আলাদা প্রতিষ্ঠানে রূপ নেওয়ায় তারা কাজে অপারগতা জানায়। ফলে এখন নতুন করে উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক টেন্ডারে যাচ্ছে সরকার। এ বিষয়ে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী লোকমান হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ইপিসি কাজের জন্য ফ্রান্সের টেকনিপ প্রস্তাব জমা দিয়েছিল। কিন্তু ২০২১ সালের শেষ দিকে টেকনিপ তাদের অপারগতার কথা জানায়। এখন উন্মুক্ত টেন্ডারের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। তিনি বলেন, বর্তমান রিফাইনারিটি ৫৫ বছর আগের হলেও প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতার মাধ্যমে ২০২০-২১ অর্থবছরে তারা সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা ১৫ লাখ মেট্রিক টনের বেশি পরিশোধন করেছেন। এর মাধ্যমে একটি মাইলফলক অর্জিত হলেও দেশীয় জ্বালানি চাহিদার মাত্র ২৫ শতাংশের কাছাকাছি পূরণ করতে সক্ষম হচ্ছে। সে কারণে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বার্ষিক ৩০ লাখ মেট্রিক টন পরিশোধন সক্ষমতার ইআরএল-২ করা হচ্ছে। প্রকল্পের জন্য ২৩ হাজার ৫৯ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৬ হাজার ১৪২ কোটি টাকার জিওবি (সরকারি অংশ) অর্থায়ন নিয়ে জটিলতা ছিল। এখন সে জটিলতা কেটে গেছে। অর্থবিভাগ থেকে এই পরিমাণ অর্থ বিপিসিকে ঋণ হিসেবে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। লোকমান হোসেন আর বলেন, ইআরএল-২ প্রকল্পে ক্রুড অয়েল পরিশোধনের মাধ্যমে পেট্রোলিয়াম পণ্য উৎপাদন করা গেলে আমদানির তুলনায় প্রতি ব্যারেলে প্রায় ১৫ ডলার সাশ্রয় হবে। ১৯৬৬ সালে নগরীর গুপ্তখাল এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্র মালিকানাধীন পেট্রোলিয়াম রিফাইনারি। ১৯৬৮ সালের ৭ মে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হয় রিফাইনারিতে। জ্বালানি সক্ষমতা ও নিরাপত্তা বাড়াতে ইস্টার্ন রিফাইনারির বর্তমান স্থাপনার মধ্যেই ৩০ লাখ মেট্রিক টন সক্ষমতার নতুন ইউনিটের প্রকল্প হাতে নেয় বিপিসি। শুরুর দিকে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয় ধরা হলেও পরবর্তীসময়ে সংশোধন হয়ে ১৬ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। সেটি পরে আরও সংশোধন হয়ে ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। অন্যদিকে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্ট (পিএমসি) হিসেবে নিয়োগ পায় ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিরয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেড (ইআইএল)। ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল ভারতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি করে বিপিসি। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর উপস্থিতিতে হয় চুক্তি সই। সেদিন মন্ত্রী বলেছিলেন, পরবর্তী বছরের মধ্যেই ইআরএল-২ প্রকল্পের ভৌত কাজ শুরু হবে। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় সাত বছরেও প্রকল্পের মূল কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। অর্থ বিভাগের নতুন সিদ্ধান্তে প্রকল্পটি নতুন করে আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে। গেলো ৩০ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বাজেট-১৫ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব ফয়সল জহুর স্বাক্ষরিত পত্রে উল্লেখ করা হয়, বিপিসির অধীন ইআরএল কর্তৃক বাস্তবায়িতব্য ‘ইনস্টলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২’ প্রকল্পে জিওবি অংশের প্রাক্কলিত ১৬ হাজার ১৪২ কোটি টাকা ‘১০০ শতাংশ উন্নয়ন ঋণ’ হিসেবে অর্থায়নে অর্থ বিভাগ সম্মতি প্রদান করছে। পত্রে ঋণের শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়, জিওবি ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার ৫ শতাংশ, ঋণ পরিশোধে সময়সীমা পাঁচ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ২০ বছর (ত্রৈ-মাসিক কিস্তিতে)। ইআরএল সূত্রে জানা গেছে, ইআরএল-২ চালু হলে ক্রুড অয়েল পরিশোধন ক্ষমতা প্রতি বছর ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে দাঁড়াবে। এতে মোট চাহিদার ৭৫ শতাংশ মেটানো সম্ভব হবে। ইআরএল-২ এর মাধ্যমে ফিনিশড প্রডাক্ট হিসেবে পাওয়া যাবে এলপিজি, গ্যাসোলিন ইউরো-৫, জেট এ-১, ডিজেল ইউরো-৫, গ্রুপ-৩ বেজ অয়েল, ফুয়েল অয়েল, বিটুমিন ও সালফার।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন দেশের | জ্বালানি | নিরাপত্তায় | যোগ | হচ্ছে | নতুন | মাইলফলক