গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে বন্দি মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
আজ শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায় নবনির্মিত চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় উদ্বোধন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারের ভেতরেই মুশতাক হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে কারা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাত ৮টা ২০ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মুশতাক নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজার থানার ছোট বালাপুর এলাকার মো. আবদুর রাজ্জাকের ছেলে। ঢাকা মেট্রোপলিটনের রমনা মডেল থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গত বছরের ৬ মে ঢাকা জেলে এবং পরে ২৪ আগস্ট থেকে তিনি কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'কারাবন্দি মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর সঠিক কারণ ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে। তিনি আগেও দুয়েকবার তার লেখনিতে আইনশৃঙ্খলা কিংবা অন্যের বিশ্বাসের প্রতি আঘাত করেছিলেন। সেজন্য অনেকেই মামলা করেছিলেন। সম্প্রতি ২০২০ সালে যে মামলাটি হয়েছিল, সেই মামলার জন্য তিনি কাশিমপুর জেলখানায় অন্তরীণ ছিলেন। মুশতাক সাহেব হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লে কারাগারের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থা খারাপের দিকে গেলে গাজীপুর তাজউদ্দিন মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন'।
মুশতাকের মৃত্যুর বিষয়ে তদন্ত হবে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'সব মৃত্যুর এগেইনস্টে এনকোয়ারি হয়। একটা অস্বাভাবিক মৃত্যু বলুন বা স্বাভাবিক মৃত্যু বলুন, নানান প্রশ্ন আসে। সেজন্য যে কোনো মৃত্যুর ঘটনায় কারাগারে হোক বা এক্সিডেন্ট হোক, একটা পোস্টমর্টেম হয়। পোস্টমর্টেমের পর সঠিকভাবে আমরা বলতে পারব কেন এই মৃত্যুটা হয়েছে'।
এ সময় ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ শিরোনামে কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আলজাজিরার প্রতিবেদন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আলজাজিরার প্রতিবেদন তৈরিতে জড়িত বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাংলাদেশে থেকে কারা এই মিথ্যা প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছে সেটা নিয়ে তদন্ত করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি করার জন্য অনেকে অনেক রকম কাজ করে যাচ্ছে। আলজাজিরা যে নিউজ দিয়েছে বাংলাদেশের মানুষ তা বিশ্বাস করেনি। এদেশের মানুষ আলজাজিরা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় নির্মাণের ফলে চট্টগ্রাম শহরের আইনশৃঙ্খলা উন্নত হবে। বাংলাদেশ পুলিশ সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করে এগিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন এই কার্যালয়ের মাধ্যমে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে। চট্টগ্রাম শহরের সুবিধাজনক স্থানে হওয়ায় পুরো জেলা তদারকিতেও সহজ হবে। সরকার বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে আধুনিক বিশ্বের অন্যতম একটি বাহিনীতে রূপান্তর করতে কাজ করে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন: শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি, মো. মোছলেম উদ্দিন আহমদ এমপি, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপি, ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভি এমপি, চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া, সিডিএ চেয়ারম্যান মো. জহিরুল আলম দোভাষ, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক প্রমুখ।
শেখ সোহান