ইবিতে ছাত্রী নির্যাতন, ১৯ জুলাইয়ের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের নির্দেশ হাইকোর্টের

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় আগামী ১৯ জুলাইয়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জমা দিতে বলেছে হাইকোর্ট। সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন প্রশাসক অধ্যাপক ড. আনিচুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন। এদিকে ঈদের ছুটির পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে বলে যুক্ত করেছেন প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ।

এদিকে প্রশাসনের নির্দেশে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে ক্যাম্পাসে এসেছেন সাময়িক বহিষ্কার হওয়া পাঁচ ছাত্রী। সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উপাচার্যের কার্যালয়ের সভাকক্ষে ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির কাছে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। কারণ দর্শানো নোটিশের লিখিত জবাব দেওয়ার পরও কোন বক্তব্য থাকলে তা জানতে এই বক্তব্য গ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ। সেখানে ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী ফুলপরী খাতুনেও সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এসময় উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা সহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, লিখিত জবাব ছাড়াও অন্য কোন বক্তব্য আছে কি না- জানতে আজ ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনে সাক্ষ্য নিয়েছি। অভিযুক্তদের মধ্যে দুই জন (মোয়াবিয়া জাহান ও হালিমা আক্তার উর্মি) নতুন বক্তব্য সংযোজন করেছেন। বাকীরা বলেছে তাদের লিখিত বক্তব্যই চূড়ান্ত। আগামী ১৯ জুলাইয়ের মধ্যে সকল কার্যক্রম শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। ঈদের ছুটি শেষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে ক্যাম্পাসে উপস্থিত হতে নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছিলেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা। নিরাপত্তা শঙ্কা ও ধর্ষণের হুমকির অভিযোগ তুলে তিনি ফেসবুকেও একটি ভিডিও পোস্ট করেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, র‌্যাগিংয়ের ঘটনার সাথে আমার সংশ্লিষ্টতা নেই। ফুলপরির বোন, ক্যাডার কাজিন ও পরিচিত নানা পলিটিকাল লিডারের দ্বারা আমি যে হুমকি ধামকি ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলাম এর প্রেক্ষিতে আমি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম। আল-আমিন নামে ছাত্রলীগ পরিচয় দানকারী এক ক্যাডার আমাকে হুমকি দিতে থাকে। সে আমাকে ভার্সিটি থেকে তুলে নেওয়ার ও ধর্ষণের হুমকি দেয়। এজন্য আমার সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে বলেছিলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাকে সেভাবে নিরাপত্তা দেয়নি। তারা শুধু ক্যাম্পাসের ভেতরে নিরাপত্তা দিতে চেয়েছেন। ক্যাম্পাসের ভিতরে এমনিই আমি নিজেকে নিরাপদ মনে করছি। তাছাড়া আমাকে যে তুলে নেওয়া ও ধর্ষণের হুমকি দিয়েছিল তার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।

ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন বলেন, আমরা গত মিটিংয়ে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে নিরাপত্তার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু ক্যাম্পাসে তাদেরকে গাড়িতে উঠতে বলা হলেও তারা গাড়িতে ওঠেনি। তারা বলেছে আমরা হেটেই যাবো। তারা আমাদের নিরাপত্তা নেয়নি।

হুমকির বিষয়ে প্রক্টর ড. আজাদ বলেন, বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন। সব অভিযোগ আমলে নিয়েই তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল। তদন্ত প্রতিবেদনেও বিষয়টি উঠে এসেছে। সবগুলো তদন্ত প্রতিবেদন, তাদের শোকজের জবাব ও তাদের আজকের হেয়ারিংয়ের প্রেক্ষিতে আমরা একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে যাবো।

গত ১১ ও ১২ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন রাতভর নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের অভিযোগ উঠে শাখা ছাত্রলীগ নেত্রী ও পরিসংখ্যান বিভাগের সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম, মোয়াবিয়া জাহান, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম ও ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মীর বিরুদ্ধে। এ নিয়ে হল, বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলা প্রশাসন এবং শাখা ছাত্রলীগ পৃথক চারটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তদন্ত শেষে প্রতিবেদনের আলোকে হাইকোর্টের নির্দেশে বিশ^বিদ্যালয় থেকে পাঁচ অভিযুক্তকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া হল প্রশাসন ও ছাত্রলীগ তাদের তদন্তের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বহিষ্কার করে।

Recommended For You

Leave a Reply