আইন-বিচার

ভালবাসা দিবসেই স্বামীর মরদেহ কাঁধে নিয়ে ভারতে গেলেন শেফালী!

ভালবাসা দিবসেই স্বামীর মরদেহ কাঁধে নিয়ে ভারতে গেলেন শেফালী!
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে বোনের বিয়েতে এসে ভারতীয় নাগরিক ও প্রাণপ্রিয় স্বামী বিকাশ চন্দ্র সরকার (৪২) কে হারিয়ে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের দিনেই মরদেহ কাঁদে নিয়ে ভারতের শ্বশুরবাড়িতে গেলেন স্ত্রী শেফালী। অবশেষে আইনি জটিলতা কাঁটিয়ে ভারতীয় নাগরিকের মৃত্যুর চারদিন পর বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে বিশ্ব ভালবাসা দিবসের দিনেই বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনদের কাঁদিয়ে স্বজনদের থেকে বিদায় জানিয়ে তিন বছরের সন্তানসহ ভারতে যান। নিহত ভারতীয় নাগরিকের শ্বশুরবাড়ীর লোকজন লালমনিরহাট জেলার বুড়িমারী ইমিগ্রেশন দিয়ে মরদেহ ভারতে পৌঁছান বলে নিশ্চিত করেছেন। নিহত ভারতীয় নাগরিকের বাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার পুন্ডীবাড়ী থানার দক্ষিণ খাপাইটারী গ্রামে। তিনি ওই এলাকার মিলন চন্দ্র সরকারের ছেলে। পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা জানান, শ্যালিকার বিয়ে উপলক্ষে গত ১৭ দিন আগে জামাই বিকাশ চন্দ্র সরকার তার স্ত্রী শেফালী রানী রায় (৩৬) ও তিন বছর বয়সী ছেলে বিবেক চন্দ্র সরকারসহ দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার দক্ষিণ বড়ভিটা এলাকায় শ্বশরবাড়িতে আসেন। গেলো (১১ ফেব্রুয়ারি) রোববার শ্যালিকার গায়ে হলুদের দিনে বিকালে বুকের ব্যাথা অনুভব হলে শ্বশুড়বাড়ির লোকজন ফুলবাড়ী হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ মোছাঃ নাজমিন আক্তার ভারতীয় নাগরিককে মৃত ঘোষণা করেছেন। দিকে একমাত্র শ্যালিকার গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে দুলাভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনায় মুর্হুতেই বিয়ে বাড়ির সব আনন্দনসহ পরিণত হলো শোকপুরী। বাগরুদ্ধ হয়ে পড়েন স্ত্রী শেফালী ও একমাত্র শ্যালিকা কাকলী রায়সহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন। পুরো বিয়ে বাড়ী শোকপুরীতে পরিণত হয়। আইনি জটিলতার কারণে সোমবার দিনের বেলা ভারতীয় নাগরিকের মরদেহ পাঠাতে না পাড়ায় সেই দিন রাতে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের হীমঘরে মরদেহ রেখে সোমবার রাতেই আনন্দ-উৎসব ছাড়াই শ্যালিকা (বোন) এর বিয়ে সম্পূর্ণ হয়। শেফালীর প্রতিবেশি আত্মীয় মিলন চন্দ্র রায় ও চন্দন চন্দ্র রায় জানান, শেফালী তার বোনের বিয়ে উপলক্ষে গত ১৭ দিন আগে স্বামী বিকাশ চন্দ্র সরকার ও তিন বছর বয়সী ছেলে বিবেক চন্দ্র সরকারসহ বাংলাদেশে বাবার বাড়ীতে আসেন। বোনের বিয়েতে এসে স্বামী হারিয়ে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের দিনেই আবার স্বামীর লাশ কাঁদে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে গেলেন। কি নির্মম নিয়তি। কখন কার মৃত্যু হবে কেউ জানেন না। নিহত বিকাশের স্ত্রী শেফালী রানী (৩৬) কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, একমাত্র বোনের বিয়েতে এসে ভাল মানুষটাকে (স্বামী) কে হারাবো ভাবতে পারিনি। কোলে তিন বছরের দুধের শিশুটাকে বিভাবে মানুষ করবো ভগবান, বলে বার বার বাগরুদ্ধ হয়ে পড়েন। নিহত বিকাশের শ্বশুড় কৃষ্ণ চন্দ্র রায় কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, আমার দুই সন্তান। শেফালী বড়। শেফালী ১০ বছর বয়সে ভারতের পুন্ডীবাড়ী এলাকায় দাদুর (নানা) বাড়ীতে মানুষ হয়েছে। পাঁচ বছর আগে আমার শ্বশুর মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন। ছোট মেয়ের বিয়ে ঠিক হওয়ায় মেয়ে- জামাইকে জানিয়ে দিলে ১৭ দিন আগেই পার্সপোট ভিসা করে আমাদের বাড়ীতে আসে। গায়ের হলদের দিনেই আমার জামাইয়ের মৃত্যু হবে এটা মানতে পারছি না বাহে। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে জামাইয়ের মরদেহ, মেয়ে-নাতিকে বিদায় জানাতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। জানি না আমার নাতিসহ আমার মেয়েটার ভাগ্যে কি আছে। এভাবে বলতে বলতে শেষ বারের মতো মেয়ে-ও নাতিকে বুকে জরিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রাণকৃষ্ণ দেবনাথ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ ব্যাপারে থানায় একটি সাধারণ জিডি হয়েছে। সকল প্রক্রিায় শেষে মৃত্যুর চার দিন পর ভারতীয় নাগরিকের মরদেহ নিয়ে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিব্বির আহমেদ জানান, বিয়ে অনুষ্ঠানে এসে ভারতীয় নাগরিকের মৃত্যুটি দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক। নিহতের স্বজন মঙ্গলবার রাজশাহীতে ভারতীয় দুতাবাসে গিয়ে ভারতীয় নাগরিকের মরদেহ ফেরত পাঠানের আবেদন করেন। দুতাবাস মরদেহ ভারতে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিলে বুধবার বিকালে ভারতীয় নাগরিকের মরদেহ বুড়িবাড়ী ইমিগ্রেশন দিয়ে নিজ দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়ার সব খরচ প্রদান করা হয়েছে। এএম/

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন ভালবাসা | দিবসেই | স্বামীর | মরদেহ | কাঁধে | নিয়ে | ভারতে | গেলেন | শেফালী