আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

১ মার্চ থেকে মাছ শিকারে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা

ইলিশের পোনা জাটকা সংরক্ষণে অভয়াশ্রমগুলোতে আগামী দুই মাসের জন্য সবধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। 

গেলো সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আজ মঙ্গলবার (১ মার্চ) থেকে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেউ মাছ ধরলে কমপক্ষে ১ বছর থেকে সর্বোচ্চ ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন ১৯৫০-এর ধারা ৩-এর উপধারা ৫-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকারঘোষিত এ পাঁচটি অভয়াশ্রমে প্রতিবছর মার্চ-এপ্রিল দুই মাস ইলিশ, জাটকাসহ (২৫ সেন্টিমিটার বা ১০ইঞ্চি অকারের ইলিশ) সব ধরনের মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকে। এ সময় অভয়াশ্রমে মাছ আহরণ আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী চাঁদপুরের মতলব উত্তরের ষাটনল থেকে হাইমচর চর ভৈরবী পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার পদ্মা-মেঘনা নদীতে অভয়াশ্রম চলাকালে কোনো জেলেকেই নদীতে নামতে দেয়া হবে না। জেলেরাও তাদের নৌকা তুলে রেখেছে ডাঙ্গা।
সরকারি এমন নিষেধাজ্ঞার কারণে এ সময় জেলেরা নদীতে নেমে মাছ ধরতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, অভয়াশ্রম এলাকায় জাটকা ধরা ক্রয় বিক্রয় এবং বিপনন নিষিদ্ধ থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে শুধু চাঁদপুরেই বেকার হচ্ছে ৫০ হাজারের বেশি জেলে। তবে সরকারি তালিকায় চাঁদপুরে ৪৪ হাজার ৩৫ জন জেলে রয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অভয়াশ্রম সংশ্লিষ্ট জেলায় এ সময় মৎস্য আহরণে বিরত থাকা নিবন্ধিত জেলেদের এরই মধ্যে ৮০ কেজি হারে ভিজিএফ চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

তবে জেলেদের অভিযোগ তাদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল তারা সঠিক ভাবে পাচ্ছেন না। সরকারিভাবে তাদের যে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়, তা পর্যাপ্ত নয়। খাবার তৈরি করতে চালের সঙ্গে অন্যান্য উপকরণও প্রয়োজন হয়। আর্থিক দৈন্যতার কারণে তা সংকুলান করা তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া জাল নৌকা তৈরি করতে বিভিন্ন সমিতি আর এনজিও থেকে নেয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধের দু:শ্চিন্তা তো রয়েছেই।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তারা জানিয়েছনে, চাঁদপুর সদর, হাইমচর, মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণের নদী পাড়ের মিলিয়ে ৪ উপজেলায় ৪৪ হাজার ৩৫জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। এ সপ্তাহ থেকে তাদের চাল দেয়া শুরু হবে। জনপ্রতি ৪০ কেজি করে চাল দেয়া হবে। ইতিমধ্যে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

জেলেদের অভিযোগ, জাটকা চাঁদপুরের জেলেরা নয় বরং পাশের জেলার জেলেরা এখানে এসে জাটকা ধরে। তারা চাঁদপুরের জেলেদের বদনাম করে দিচ্ছে। প্রকৃত জেলেদের বাদ দিয়ে স্বজন প্রীতির মাধ্যমে দোকানদার, রিক্সাচালকরাও জেলে কার্ড পেয়ে যাচ্ছেন। সরকার যদি এই সময় কিস্তি নেয়া লোকদের বলে দেয় কিস্তি না নিতে। তাহলে একটু স্বস্তি পেতেন প্রকৃত জেলেরা।

এদিকে নদীতে সবদিক নৌ পুলিশের নজরদারিতে রাখার কথা জানিয়ে নৌ পুলিশের চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোঃ কামরুজ্জামান। চাঁদপুর অঞ্চলে নৌ পুলিশের ১২টি ষ্টেশন রয়েছে এবং ১৭৫ জনের মতো পুলিশ সদস্য এতে কর্মরত রয়েছেন। সব মিলিয়ে ২৪টা টিম দিনে রাতে কাজ করার ডিউটি বন্টন করেছে।

অনন্যা চৈতী

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন