আর্কাইভ থেকে অর্থনীতি

৫২ বছরে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৭০২ গুণ

বর্তমানে এমন এক জিনিস আছে যার দাম বাড়তে বাড়তে আজ পাহাড় চূড়ায় পৌঁছে গেছে।  হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন।  জিনিসটি হলো মূল্যমান ধাতু স্বর্ণ।  হু হু করে বাড়ছে এই ধাতু।  মধ্যবিত্তের হাতের নাগালে নেই বললে ভুল হবে না।

দেশের বাজারে স্বর্ণের ভরি এখন ১ লাখ ৮ হাজার ১২৫ টাকা।  ২০ বছর আগেও এক ভরি স্বর্ণ ৯ হাজার ৪০১ টাকায় বিক্রি হতো।  তার মানে দুই দশকে দামি এই ধাতুটির দাম ভরিতে বেড়েছে প্রায় লাখ টাকা।  এর মধ্যে গত তিন বছরেই দাম বেড়েছে ৩২ হাজার ৬৫৯ টাকা।

চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে জানুয়ারি-নভেম্বরে দেশের বাজারে ২৭ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।  এর মধ্যে দাম কমানো হয়েছে ১১ বার, আর বাড়ানো হয়েছে ১৬ বার।

গত জানুয়ারিতে হলমার্ক করা ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ছিল ৮৮ হাজার ৪১৩ টাকা।  দেশের বাজারে প্রথমবারের মতো প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম লাখ টাকা ছাড়ায় ২১ জুলাই।  ৩০ নভেম্বর সেই দাম ১ লাখ ৯ হাজার ৮৭৫ টাকায় পৌঁছায়, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।  তবে ৭ ডিসেম্বর ভরিপ্রতিতে  স্বর্ণের দাম কমে ১ হাজার ৭৫০ টাকা।

বিশ্ব অর্থনীতিতে যখনই মূল্যস্ফীতির দেখা যায় তখনই স্বর্ণের বাজার চাঙ্গা হয়ে যায়।  এদের দুজনের সম্পর্ক বেশ গভীর।

যেমন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিশ্ব বাজার ছিলো অস্থির।  ২০২০ সালের আগস্টের প্রথম সপ্তাহে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৭০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।  সেটিই ছিল ইতিহাসের সর্বোচ্চ দাম।

করোনার পর আসলো ইউক্রেন-রাশিয়ার আগ্রাসন।  আর এখন দুই মাস ধরে চলা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের প্রকোপে গত ১ ডিসেম্বর সেই রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতায়, মানে আউন্সপ্রতি স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৭২ ডলারে উঠেছে।

স্বর্ণের দামের সঙ্গে কিন্তু চাহিদা ও জোগানের একটা সম্পর্ক আছে।  গয়নার চাহিদা ও স্বর্ণের বিনিয়োগ বৃদ্ধি এই দুইভাবে মূলত স্বর্ণের চাহিদা তৈরি হয়।  চাহিদার মতো সরবরাহও নিশ্চিত হয় দুইভাবে—খনি থেকে নতুন উত্তোলন এবং পুরোনো স্বর্ণ বিক্রি।  যদিও খনি থেকে স্বর্ণ উত্তোলন একটি চলমান প্রক্রিয়া।

বিশ্বজুড়ে স্বর্ণের বিপুল চাহিদা বেশি থাকলেও জোগানের ভিড়ে বাংলাদেশের বাজার খুবই ছোট।  সুনির্দিষ্ট হিসাব না থাকলেও মনে করা হয়, দেশে বছরে ২০-৪০ টন স্বর্ণের চাহিদা রয়েছে।  যার মাত্র ১০ শতাংশ চাহিদা পূরণ হয় পুরোনো অলংকার দিয়ে।  বাকিটা ব্যাগেজ রুলের আওতায় বিদেশ থেকে আসে।  অবৈধভাবেও প্রচুর স্বর্ণের আসে।

বাংলাদেশ যে বছর স্বাধীন হয়, তার আগের বছর স্বর্ণের ভরি ছিল ১৫৪ টাকা।  তার মানে গত ৫২ বছরে দাম বেড়েছে ৭০২ গুণ।  দীর্ঘ এ সময়ে পুরোনো স্বর্ণের অলংকারের দামও আনুপাতিক হারে বেড়েছে।

সাধারণত পুরোনো অলংকার জুয়েলার্সে বিক্রি করতে গেলে বিক্রেতারা ওজন করার পর তা কোন ক্যারেটের স্বর্ণ, তা আগে নিশ্চিত হয়।  এরপর অলংকারটির বর্তমান ওজন থেকে ২০ শতাংশ বাদ দিয়ে মূল্য নির্ধারণ করে।

ধরা যাক, আপনার কাছে ১৩ হাজার ৮৩৩ টাকা ভরিতে কেনা ২২ ক্যারেটের এক ভরির স্বর্ণের অলংকার আছে।  এখন যদি সেই স্বর্ণ বিক্রি করতে যান, আপনি এখন পাবেন ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা।  তাতে মুনাফা দাঁড়ায় ৭২ হাজার ৬৬৭ টাকা।  ২১ ও ১৮ ক্যারেটের অলংকার হলে মুনাফা কিছুটা ভিন্ন হবে।

একইভাবে স্বর্ণের দাম বাড়লে জুয়েলার্স ব্যবসায়ীদের লাভ হয়।  ধরা যাক, গত জানুয়ারিতে একজন ব্যবসায়ী ২২ ক্যারেটের এক ভরির একটি অলংকার তৈরি করেন।  তখন স্বর্ণের ভরি ছিল ৮৮ হাজার ৪১৩ টাকা।  এখন সেই অলংকার বিক্রি করলে শুধু স্বর্ণের দামই বেশি পাবেন ১৯ হাজার ৭১২ টাকা।

স্বর্ণের দাম অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় অলংকার তৈরির ক্রয়াদেশ কমেছে।  এ কারণে পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারের স্বর্ণশিল্পীদের সংখ্যাও দিন দিন কমছে।  সেখানে গত দুই দশকের ব্যবধানে স্বর্ণশিল্পীদের সংখ্যা কমে চার ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন জুয়েলারি দোকানের মালিকরা।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন