যুক্তরাষ্ট্র থেকে কী কী পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ? কী কী রপ্তানি করে?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৬০টি দেশের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিলেও, কিছু দেশের জন্য তা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। মূলত, মার্কিন পণ্যে ‘বৈষম্যমূলক শুল্ক’ আরোপ করার অভিযোগে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি করেন, বাংলাদেশে তাদের পণ্যে প্রায় ৭৪% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়, যেখানে বাংলাদেশি পণ্যে তারা আগে থেকেই ১৫% শুল্ক নিচ্ছে। তাই এবার ৩৭% বাড়তি শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে মোট শুল্ক দাঁড়াবে ৫২%। যদিও অর্থনীতিবিদদের একাংশ এই শুল্ক হারের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
বাংলাদেশ মূলত যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, খাদ্যসামগ্রী ও মাছ রপ্তানি করে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি পাঠিয়েছে তৈরি পোশাক।
বাংলাদেশে কুচিয়া বা ইল তেমন জনপ্রিয় না হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে এর চাহিদা ব্যাপক। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই গত কয়েক মাসে এক মিলিয়ন ডলারের বেশি ইল মাছ রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এছাড়া অন্যান্য নানা পদের মাছসহ প্রচুর পরিমাণে চিংড়ি ও কাঁকড়াও রপ্তানি করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে।
কৃষি ও খাদ্যপণের মাঝে রয়েছে ‒ মাখন, মধু, কুমড়া, মটরশুঁটি, বাদাম, চা, মশলা, ময়দা, ভুট্টা, সরিষা, ঔষধি উদ্ভিদ, নারিকেল, আখের চিনি, পাস্তা, আলু, টমেটো, তামাক ইত্যাদি।
এর বাইরে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় ক্যালসিয়াম কার্বনেট, সোডিয়াম সালফেট, বোরিক এসিড, সুগন্ধি, সাবান, শ্যাম্পু, মোমবাতি, কাগজসহ অনেককিছু পাঠানো হয়।
বিভিন্ন প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য ‒ বোতল, ফ্লাস্ক, সাইকেল, দরজা, র্যাক ইত্যাদিও রপ্তানি হয়।
আর বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবচেয়ে বেশি এনেছে সয়াবিন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা এই সয়াবিনের মূল্য প্রায় ১০৬ মিলিয়ন ডলার।
এরপরই হলো ৩৩ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলার মূল্যের স্ক্র্যাপ লোহা বা লোহার টুকরা এবং ২৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের চাল।
ট্রেডিং ইকোনমিক্স এর তথ্য অনুযায়ী গেলো বছর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে ৬৫৮ দশমিক ২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের লোহা ও স্টিল রপ্তানি করেছে। দেশটি থেকে বাংলাদেশ আরও অনেক পণ্য আমদানি করলেও ওই বছর লোহা ও স্টিল-ই বেশি এনেছে।
এরপরের স্থানে আছে তৈলবীজ, তেলজাতীয় ফল, শস্য, বীজ ও ফল। ওই বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে সাড়ে তিনশো মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি মূল্যের এসব পণ্য কিনেছে বাংলাদেশ।
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১.৬৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, সেখানে আমদানি মাত্র ২৯০ মিলিয়নের মতো।
এই ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরও ১০০টি পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু যুক্তরাষ্ট্রকে সুবিধা দিলে তা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম লঙ্ঘন করতে পারে এবং বাংলাদেশকে চাপের মুখে ফেলতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সমাধান হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু নির্দিষ্ট, অপরিহার্য পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়া। নয়তো বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টায় উল্টো ক্ষতি হতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতির।
এমএ//