পানিতে মিশে গেল ৫০০ টন পটাশ, হুমকিতে সুন্দরবন
মোংলা বন্দরের পশুর নদীতে ডুবে যাওয়া লাইটার জাহাজের ৫০০ টন সার পানিতে মিশে গেছে। গেলো ২৫ জানুয়ারি ডুবে যাওয়া ওই জাহাজ থেকে উত্তোলনের সময় কোনো সার পাওয়া যায়নি। পুরোটাই নদীর পানিতে মিশে গেছে বলে জানিয়েছে জাহাজ কর্তৃপক্ষ।
এদিকে বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী ওই জাহাজটি উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয়েছে। গেলো ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে জাহাজটির মালিকপক্ষ এটি উদ্ধারে তৎপরতা চালায়।
জানা যায়, গেলো ২৫ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৩টার দিকে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে শাহজালাল এক্সপ্রেস নামে লাইটার জাহাজটি ডুবে যায়। এতে কানাডা থেকে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) আমদানিকৃত ৫০০ মেট্রিক টন পটাশ সার (এমওপি) ছিলো। উদ্ভিদে পোকা-মাকড় ও রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ ঠেকাতে এমওপি বা পটাশ সার ব্যবহার করা হয়। এ সারে ৫০ ভাগ পটাসিয়াম থাকে। এটি উদ্ভিদ কোষকে রক্ষা করে থাকে। এছাড়া গাছের কাঠামো শক্ত এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে থাকে এ সার।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, নদীতে সার ডুবে যাওয়ায় চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। বড় জায়গা হওয়ার কারণে হয়তো ক্ষতির পরিমাণটা কম হবে। তবে এ প্রক্রিয়া ধারাবাহিক চলতে থাকলে ভবিষ্যতে জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হবে। এক্ষেত্রে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
জাহাজের মালিক আজাহার সিদ্দিক বলেন, তার লাইটার জাহাজ ও জাহাজে থাকা সার ডুবে যাওয়ার ১১ দিন পর এটি উদ্ধারে মোংলা ও খুলনার ডুবোরি দলকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। শুরুতে তারা ওই জাহাজে সার অপসারণের চেষ্টা চালালেও কোনো সার পাওয়া যায়নি। ৫০০ টনের পুরো সারই নদীর পানির সঙ্গে মিশে গেছে। এ সময় সার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, লাইটার জাহাজটি উদ্ধার করার জন্য এরই মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে বিশেষ ধরনের একটি নৌযান (ফ্লাট বোট) রওনা হয়েছে। ২০ দিনের মধ্যে এটি উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, এতে জলজ সম্পদের মারাত্মক ক্ষতিসহ পার্শ্ববর্তী সুন্দরবনের পরিবেশও নষ্ট হবে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন শাহীন মজিদ বলেন, গেলো ২৫ জানুয়ারি মোংলা বন্দরের হারবাড়িয়া- ৯ এ অবস্থান করা লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী ‘এমভি ভিটা অলিম্পিক’ থেকে ৫০০ টন সার বোঝাই করে যশোরের নওয়াপাড়ার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলো লাইটার জাহাজ শাহজালাল এক্সপ্রেস। পথিমধ্যে হারবাড়িয়া-৮ এ ক্লিংকার নিয়ে অবস্থান করা ‘সুপ্রিম ভ্যালর’ নামে বিদেশি একটি জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে জাহাজটির ইঞ্জিন রুমে পানি ঢুকে ডুবে যায়। এ সময় লাইটারটিতে থাকা ৯ জন নাবিক ও ক্রুদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ডুবে যাওয়া লাইটার জাহাজটি উদ্ধারে ১৫ দিনের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে।