২০০৯ সালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন প্রণয়ণ করে তার অধীনে একটি শক্তিশালী জাতীয় মানবাধিকার কমিশন প্রতিষ্ঠা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই কমিশন দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে। যেখানেই মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, সেখানেই কমিশন ভুক্তভোগী মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। বলেছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপদেষ্টা নাকাতানি জেনের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে বাংলাদেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষায় আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঐ একই বছর জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন প্রণয়ণ করে তার অধীনে একটি শক্তিশালী জাতীয় মানবাধিকার কমিশন প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এই কমিশন দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে। যেখানেই মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, সেখানেই কমিশন ভুক্তভোগী মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের বিচার করেছে। একাত্তরের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করছে।
বৈঠকে আইনমন্ত্রী বলেন, দেশের নাগরিকদের খাদ্য ও গৃহসংস্থানের অধিকার পূরণে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার যুগান্তকারী বহু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে গৃহহীন সব মানুষকে বিনামূল্যে গৃহনির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার।
মন্ত্রী জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে আদালতের রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত। তিনি কারাগারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে জননেত্রী শেখ হাসিনার মহানুভবতায় তার কারাদণ্ড স্থগিত করা হয়েছে এবং বর্তমানে তিনি নিজ বাসায় থেকে সুচিকিৎসা নিচ্ছেন।
আনিসুল হক জানান, রানাপ্লাজা দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নয়ন ও শ্রমিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে সরকার শ্রম আইন সংশোধনসহ কার্যকর বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে গার্মেন্টস খাতের কর্মপরিবেশ আগের তুলনায় অনেক উন্নত হয়েছে। সরকার শ্রম আইনকে সংশোধন করে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন আইনে পরিণত করার চেষ্টা করছে; আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার চাহিদা অনুযায়ী আইনটিকে আরও শ্রমবান্ধব করার কাজ চলছে।
কোনো কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে ওই কারখানার ৩০ শতাংশ শ্রমিকের সমর্থনে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের বিধান করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন প্রক্রিয়াটিকে পুরোপুরি ডিজিটাইজড করা হয়েছে। এছাড়া কারখানার আরও অনেক অপারেটিং সিস্টেম অনলাইন করা হয়েছে। শ্রমিকদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। শ্রম আদালতের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ফলে শ্রম আদালতে মামলা নিষ্পত্তির হার আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে।
সরকার সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে বলেও এসময় দাবি করেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতার কারণে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বর্তমানে অনেক কমেছে।
হলি আর্টিজান মামলার অগ্রগতির বিষয়ে আইনমন্ত্রী জানান, অধস্তন আদালতে যথাযথ প্রক্রিয়ায় এ মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য বর্তমানে মামলাটি উচ্চ আদালতে আছে। সেখানে খুব অল্প সময়ে এ মামলা নিষ্পত্তি হবে বলে জাপানি প্রতিনিধি দলকে আশ্বস্ত করেন তিনি।
মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে সহযোগিতার জন্য আইনমন্ত্রী জাপান সরকার ও জনগণকে ধন্যবাদ জানান। সেই সঙ্গে জাপান-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের সম্পর্ক আগামীতে আরও দৃঢ় হবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
হলি আর্টিজান মামলায় অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাপানের পাশে থাকার জন্য জাপানি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
আইন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বিশেষ উপদেষ্টা নাকাতানি জেন ৯ সদস্যের জাপানি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। এসময় আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ারসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।