প্রথম পর্যায়ে ৩১ মার্চের মধ্যে দেশের ৫০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ২০টি জেলা হাসপাতাল, ৮টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ৫টি বিশেষায়িত হাসপাতালে এই সেবা চালু হবে।
আগামী ১ মার্চ থেকে সরকারি হাসপাতালে অফিস সময়ের পর বিকেলের শিফটে অতিরিক্ত ফি নিয়ে রোগী দেখতে পারবেন চিকিৎসকেরা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের 'ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস নীতিমালায়' বলা হয়েছে, ৩০০ টাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক (প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট-অ্যাসিসটেন্ট প্রফেসর) ও ১৫০ টাকায় এমবিবিএস চিকিৎসক দেখাতে পারবেন রোগীরা। পরবর্তীতে ৮০০ থেকে ৪,০০০ টাকায় সার্জারির সুযোগও চালু করা হবে।
রোগী দেখার টাকা সরকারি তহবিলে জমা হবে; পরবর্তীতে তা চিকিৎসক, কর্মচারী ও হাসপাতালের ফান্ডে বণ্টন করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে নীতিমালায়।
১ মার্চ থেকে নীতিমালাটি কার্যকর করা হবে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ খলিলুর রহমান বলেন, ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিসের জন্য আমরা প্রস্তুতি শুরু করেছি। প্রত্যেক ডিপার্টমেন্টের ডাক্তার বিকেলে রোগী দেখবেন। কবে কোন ডাক্তার রোগী দেখবেন সেই রোস্টার আমরা করে দেবো।
বর্তমানে দেশের সব সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকরা রোগী দেখেন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত। এরপর বেশিরভাগ চিকিৎসক বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক বা ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখে থাকেন।
খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রোগী দেখবেন চিকিৎসকেরা। তবে বিকেলে অফিস শেষে মানুষ যাতে সেবা নিতে পারে সেজন্য ৩টা থেকে ৭টা পর্যন্ত রোগী দেখার সময় নির্ধারণের পরিকল্পনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের।
নীতিমালা অনুযায়ী, রোস্টার ভিত্তিতে প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট ও অ্যাসিসটেন্ট প্রফেসর ২ দিন করে রোগী দেখবেন। এক্ষেত্রে টিকিট নেয়া যাবে দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ফি ৩০০ টাকা।
এই ৩০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পাবেন চিকিৎসক, চিকিৎসকের সহকারী পাবেন ৫০ টাকা এবং বাকি ৫০ টাকা জমা হবে হাসপাতালের তহবিলে
আর এমবিবিএস চিকিৎসকের ১৫০ টাকা ভিজিটের মধ্যে চিকিৎসক পাবেন ১০০ টাকা, সহকারী ২৫ ও সরকারি তহবিলে জমা হবে ২৫ টাকা। রোগীরা সরকারি হাসপাতালে প্যাথলজিক্যাল টেস্টও করতে পারবেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি হাসপাতালের অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও ল্যাব ব্যবহারের জন্য চিকিৎসকদের ফির একটি অংশ সরকারি তহবিলে জমা পড়বে।
প্রথম পর্যায়ে ৩১ মার্চের মধ্যে দেশের ৫০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ২০টি জেলা হাসপাতাল, ৮টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ৫টি বিশেষায়িত হাসপাতালে এই সেবা চালু হবে।
পরবর্তীতে, আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে দেশের সব হাসপাতালে ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস চালু করা হবে বলে জানা যায়।
বিকেলে ডাক্তারেরা কতজন রোগী দেখবেন তা এখনো চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হয়নি। তবে প্রাথমিকভাবে ৫০জন করে রোগী দেখবেন বলে ঠিক করা হয়েছে। রোগী দেখার ক্ষেত্রে পুরাতন রোগীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি যাতে নীতিমালা চূড়ান্ত হলে ১ তারিখ থেকে ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস শুরু করতে পারি। ডাক্তারদের কোথায় বসানো হবে, সেজন্য জায়গা ঠিক করা হচ্ছে, কোন কোন ডাক্তার বসবেন তাও ঠিক করা হচ্ছে।
শুরুতে আমরা ধীরে এগোতে চাই। রোগীরা যে টাকা দেবেন, তা কীভাবে সংরক্ষণ ও বণ্টন করা হবে সেসব প্রস্তুতিও নেয়া হচ্ছে, যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস চালু হলে বিকেলে আউটডোর খোলা থাকবে, যা এতদিন বন্ধ ছিল। এতে রোগীরা বিকেলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা নিতে পারবেন। প্রাইভেট চেম্বারে বিশেষজ্ঞদের সেবা নিতে অনেক টাকা খরচ হয়; যারা বিনা পয়সায় সেবা নিতে চান না, আবার প্রাইভেট চেম্বারের খরচ দেয়াও কঠিন- এমন মধ্যবিক্তরা স্বাচ্ছ্যন্দে কম খরচে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে পারবেন।
২০১১ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বিকেলে রোগী দেখেন চিকিৎসকেরা। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রোগী দেখেন। ২০০ টাকার টিকেট দিয়ে ২৪টি বিভাগের চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে পারেন রোগীরা।
নতুন চালু হওয়া বিএসএমএমইউ'র সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালেও চলছে ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস।
এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বিএসএমএমইউর ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডঃ শরফুদ্দিন আহমেদ অবশ্য বলেন, প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ করা যাবে না। কারণ প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ করতে চাইলে চিকিৎসকরা সরকারি হাসপাতালে বসতে চাইবেন না বলে জানান তিনি।
এর আগে, ২২ জানুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন, মার্চ থেকে সরকারি হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজের চিকিত্সকদের তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের অনুমতি দেয়া হবে।