আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

শতাধিক কিডনী পাচারকারী চক্র গ্রেফতার

শতাধিক কিডনী পাচারকারী চক্র গ্রেফতার

একশর’ও বেশী কিডনী পাচারকারী চক্রের প্রধান ইমরানসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে র্যা পিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান, র্যা ব। রাজধানীর বাড্ডার নদ্দা এবং জয়পুর হাট জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় জব্দ করা হয়, পাসপোর্ট, মেডিকেল চিকিৎসা, ভিসা সম্পর্কিত বেশকিছু কাগজপত্র, মোবাইল ফোন সেট এবং দেশী বিদেশী মুদ্রা ।

  মঙ্গলবার (১২ অক্টেবার)  রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাথার পরিচালক, কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, র‌্যাবের কাছে খবর আসে অনলাইনে বিভিন্ন প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে গ্রাহক ও ডোনারদের আকৃষ্ট করে একটি চক্র মানবদেহের কিডনিসহ নানা অঙ্গের অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের সাথে সক্রিয় রয়েছে।

 

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন
সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন
এসব চক্রের ফাঁদে পড়ে অসহায় নিন্ম আয়ের মানুষ ক্ষেত্র বিশেষ গ্রাহকরাও প্রতারিত হচ্ছে। এমন অভিযোগে সাইবার মনিটরিং সেল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গোয়েন্দা নজরদারী শুরু করে। সেই ধারাবাহিকতায় সোমবার গভীর রাত থেকে আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত র্যা ব-৫, র্যা ব-২ এর সদস্যরা যৌথ অভিযান চালায়। এসময় জয়পুরহাট এবং রাজধানীর নর্দা থেকে কিডনি ক্রয়-বিক্রয় সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা মোঃ শাহরিয়ার ইমরান আহম্মেদ (৩৬), মোঃ মেহেদী হাসান (২৪), মোঃ সাইফুল ইসলাম (২৮), মোঃ আব্দুল মান্নান (৪৫) এবং মোঃ তাজুল ইসলাম তাজু(৩৮) কে গ্রেফতার করা হয়। জব্দ করা হয় চারটি পাসপোর্ট, মেডিকেল চিকিৎসার ভিসা সম্পর্কিত কাগজপত্র, পাঁচটি মোবাইল ফোন সেট এবং দেশী বিদেশী মুদ্রা ।

                                    কিডনী পাচারে দায়ে গ্রেফতারকৃত  পাঁচজনের পরিচয়
কিডনী পাচারে দায়ে গ্রেফতারকৃত পাঁচজনের পরিচয়

  গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তাদের চক্রে ১৫ থেকে ২০ জন সদস্য আছে। তারা তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে কিডনি কেনা-বেচা কার্যক্রম করে। প্রথম গ্রুপ ঢাকায় অবস্থান করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রয়োজন এমন বিত্তশালী রোগীদের সাথে যোগাযোগ করে। তারা কিডনী কিংবা শরীরের অন্যান্য অঙ্গের চাহিদা যোগাড় করে দরদাম নির্ধারণ করে।

  দ্বিতীয় চক্র দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরীব ও অভাবী মানুষদের চিহ্নিত করে।তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অর্থের বিনিময়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের জন্য তাদেরকে প্রলুব্ধ করে ঢাকায় নিয়ে আসে।

  তৃতীয় চক্রটি প্রলোভনের শিকার ভুক্তভোগী কিডনিদাতাকে ঢাকায় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন রোগীর সাথে রক্তের সামঞ্জস্য এবং অন্যান্য পরীক্ষা নিরিক্ষা করিয়ে দেয়। কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন এর উপযুক্ততা নিশ্চিত হলে তার পাসপোর্ট, ভিসা প্রসেসিং এবং ভূয়া কাগজপত্র তৈরির করে কিডনী বিক্রেতা বা দাতাকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া করে।

  এই চক্রের সাথে পাশের দেশে অবস্থানকারী আরেকটি চক্র পারস্পরিক যোগসাজশ আছে। তারা কিডনি দাতাকে বিদেশের এয়ারপোর্ট অথবা স্থলবন্দর থেকে হাসপাতালের ডকুমেন্টেশন, অস্ত্রপচারসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে বৈধ-অবৈধ প্রক্রিয়ায় উড়োজাহাজ কিংবা উত্তর পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত পথে দেশে ফেরত পাঠায়।

  গ্রেফতারকৃতরা স্বীকার করেছে, প্রতিটি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য তারা রোগীদের কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা নেয়। কিডনিদাতা কিংবা বিক্রেতাকে তিন থেকে চার লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করে। অগ্রীম হিসেবে দুই লাখ টাকা প্রদান করে। কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন এর পর প্রলোভনের শিকার কিডনি দাতাকে প্রতিশ্রুত অর্থ না দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।

  চক্রের মূল হোতা ইমরান প্রতিটি কিডনি প্রতিস্থাপন বাবদ পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা নিতো। তার সহযোগী মান্নান ও তাজুল প্রতি কিডনি দাতা সংগ্রহ বাবদ যথাক্রমে পাঁচ লাখ এবং তিন লাখ টাকা নিতো। গ্রেফতারকৃত সাইফুল ইসলাম এবং মেহেদী হাসান র্যা বের কাছে স্বীকার করেছে, কিডনি দাতাকে পাশের দেশে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট, মেডিকেল ভিসা এবং অন্যান্য কাগজপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে প্রস্তুত করে জনপ্রতি ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা নিতো।

  র‌্যাব জানায়, ইমরান আহম্মেদ পার্শ্ববর্তী দেশে অবস্থানরত কিডনি কেনা-বেচা চক্রের পারস্পরিক সহযোগিতায় একটি দালাল চক্র গড়ে তুলেছে। অনলাইনের মাধ্যমে আগ্রহী বিত্তশালী কিডনি রোগী এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে কিডনি দাতা সংগ্রহসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করতো। ইমরান ফেসবুক এ “বাংলাদেশ কিডনি ও লিভার পেশেন্ট চিকিৎসা সেবা”এবং “কিডনি লিভার চিকিৎসা সেবা” নামক দু’টি পেজের অ্যডমিন। সে কিডনি বিক্রির উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে শতাধিক মানুষকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করেছে।

  গ্রেফতারকৃত চক্রের অন্যতম সদস্য আব্দুল মান্নান আগেও এমন অপরাধে গ্রেফতার হয়েছিলো। তার বিরুদ্ধে মানব দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনে ছয়টি মামলা আছে।

গ্রেফতার তাজুলের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা রয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন শতাধিক | কিডনী | পাচারকারী | চক্র | গ্রেফতার