আর্কাইভ থেকে ফিচার

উৎসবে রঙিন চৈত্র সংক্রান্তি

উৎসবে রঙিন চৈত্র সংক্রান্তি
চৈত্র সংক্রান্তি। বাংলা মাসের শেষ দিন। বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) দিনটিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শাস্ত্র মেনে স্নান, দান, ব্রত, উপবাস করবেন। নিজ নিজ বিশ্বাস অনুযায়ী, অন্য ধর্মাবলম্বীরাও নানা আচার-অনুষ্ঠান পালন করেন। চৈত্রের শেষ দিনকে বিদায় দিয়ে বাংলা বছরের প্রথম দিনটিকে বরণ করবে বাঙালি। কাল শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখ, নতুন বাংলা বর্ষ ১৪৩০। চৈত্র সংক্রান্তির প্রধান উৎসব চড়ক। চড়ক গাজন উৎসবের একটি প্রধান অঙ্গ। এ উপলক্ষে গ্রামের শিবতলা থেকে শোভাযাত্রা শুরু করে অন্য গ্রামের শিবতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। একজন শিব ও একজন গৌরী সেজে নৃত্য করে এবং অন্য ভক্তরা নন্দি, ভৃঙ্গী, ভূত-প্রেত, দৈত্য-দানব সেজে শিব-গৌরীর সঙ্গে নেচে চলে। চড়কমেলায় শূলফোঁড়া, বানফোঁড়া ও বড়শিগাঁথা অবস্থায় চড়কগাছে ঘোরা, আগুনে হাঁটার মতো ভয়ঙ্কর ও কষ্টসাধ্য দৈহিক কলাকৌশলগুলো বর্তমানে খুব একটা দেখা যায় না। তবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এখনও এর প্রচলন আছে। এখনো পালিত হয় শাস্ত্র ও লোকাচার অনুসারে স্নান, দান, ব্রত, উপবাস প্রভৃতি ক্রিয়াকর্ম। অপরদিকে এই দিনে বৈসাবি উৎসব পালন করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো। চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে নানা ধরনের মেলা ও উৎসব হয়। হালখাতার জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সাজানো, লাঠিখেলা, গান, সংযাত্রা, রায়বেশে নৃত্য, শোভাযাত্রাসহ নানা অনুষ্ঠান ও ভূত তাড়ানোর মধ্যদিয়ে উদযাপিত হয় চৈত্র সংক্রান্তি। বাংলার বিশেষ লোকজ উৎসব চৈত্র সংক্রান্তি। চিরায়ত অসাম্প্রদায়িক বাঙালির কাছে চৈত্র সংক্রান্তি পরিণত হয়েছে এক বৃহত্তর লোকজ উৎসবে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা দিনটিকে একটি পুণ্যদিন বলে মনে করে। হিন্দু পঞ্জিকা মতে, দিনটিকে গণ্য করা হয় মহাবিষুব সংক্রান্তি নামে। আবহমান বাংলার চিরায়িত বিভিন্ন ঐতিহ্যকে ধারণ করে আসছে এই চৈত্র সংক্রান্তি। বছরের শেষ দিন হিসেবে পুরাতনকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করার জন্য প্রতিবছর চৈত্র সংক্রান্তিকে ঘিরে থাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান-উৎসবের আয়োজন। মনে করা হয়, চৈত্র সংক্রান্তিকে অনুসরণ করেই পহেলা বৈশাখ উদযাপনের এত আয়োজন। তাই চৈত্র সংক্রান্তি হচ্ছে বাঙালির আরেক বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসব। চৈত্র সংক্রান্তির মাধ্যমে পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে আগামীকাল শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) সফলতা ও সমৃদ্ধির প্রত্যাশায় দেখা দেবে নতুন ভোর। পুরোনো বছরের সব জরাজীর্ণতা মুছে ফেলে শুক্রবার বাঙালি মিলিত হবে পহেলা বৈশাখের সর্বজনীন উৎসবে। জরাজীর্ণতা, ক্লেশ ও বেদনার সব কিছুকে বিদায় জানানোর পাশাপাশি সব অন্ধকারকে বিদায় জানিয়ে আলোর পথে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার থাকবে গোটা জাতির। চৈত্র সংক্রান্তিকে ঘিরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বুধবার (১২ এপ্রিল) পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের আয়োজনে চৈত্র সংক্রান্তিতে থাকছে বর্ষ বিদায়ের নানান পরিবেশনা। শুরুতেই পরিবেশিত হবে সরোদ বাদন, পরিবেশনায় থাকবেন শিল্পী ইলমা ফুলঝুরি ও শিল্পী ইসরি ফুলঝুরি, অর্কেস্ট্রা পরিবেশনায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি অর্কেস্ট্রা দল। বর্ণিল সাংস্কৃতিক এ আয়োজনের মধ্যে বর্ষ বিদায়ের সূচনায় বক্তব্য দেবেন মঞ্চসারথি আতাউর রহমান। এরপর থাকবে নাটকের গানের কম্পোজিশন পরিবেশনা। লোক নাট্যদলের পরিবেশনায় থাকবে—সোনাই মাধব, মেটোপথের পরিবেশনায় : মলুয়া, পদাতিক নাট্য সংসদের পরিবেশনায় : গুণজান বিবির পালা। বর্ষ বিদায়ের বক্তব্য দেবেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। নৃত্য গীতের পুরো আয়োজনে থাকবে বাঙালি সংস্কৃতির নানান পরিবেশনা। পুরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে আহ্বানের বন্দনা। এরপর একাডেমির নৃত্যদলের পরিবেশনায় ধামাইল নৃত্য ‘বাইজ্জো নারে শ্যামের বাঁশি’ পরিবেশিত হবে।  

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন উৎসবে | রঙিন | চৈত্র | সংক্রান্তি