আর্কাইভ থেকে আইন-বিচার

পিবিআই প্রধানের মামলায় বাবুলসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

পিবিআই প্রধানের মামলায় বাবুলসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমারের করা মামলায় সাবেক এসপি বাবুল আক্তার, সাংবাদিক ইলিয়াসসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ। এ মামলার চার্জশিটভুক্ত অন্য দুই আসামি হলেন বাবুল আক্তারের ভাই মো. হাবিবুর রহমান লাবু ও বাবা মো. আবদুল ওয়াদুদ মিয়া। মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ধানমন্ডি মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মো. রবিউল ইসলাম বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মিতু হত্যা মামলায় মিথ্যা ও অসত্য তথ্য সরবরাহ এবং তা প্রচারের অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় বাবুল আক্তার ও ইলিয়াস হোসেনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়। তবে বিশেষ ক্ষমতা আইনে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া সাংবাদিক ইলিয়াস পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে। সম্প্রতি তদন্ত শেষে আদালতে এ মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) মামলার প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। এদিন আদালতে এ চার্জশিট উপস্থাপন করা হবে। এর আগে গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে অভিযোগ আনা হয়। মামলার এজাহারে পিবিআই প্রধান অভিযোগ করেন, দেশের চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যা মামলা আমার নেতৃত্বাধীন তদন্ত সংস্থা পিবিআইর তদন্তাধীন থাকাকালে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আকতার প্রধান আসামি হিসেবে তদন্তে প্রকাশ পায়। তদন্তকালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জেলহাজতে থাকা বাবুল আকতার ও বিদেশে অবস্থানরত সাংবাদিক ইলিয়াসসহ বাকি আসামিরা মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত ও পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য ষড়যন্ত্রের আশ্রয় গ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বাবুল আকতার ও অন্য আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনায় কথিত সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তার ফেসবুক আইডির মাধ্যমে ‘স্ত্রী খুন স্বামী জেলে, খুনি পেয়েছে তদন্তের দায়িত্ব’ শিরোনামে একটি ডকুমেন্টারি ভিডিও ক্লিপ আপলোড করেন, যা সম্পর্কে ৪ সেপ্টেম্বরে আমি অবগত হই। তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, ভিডিওতে বিভিন্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্যের মাধ্যমে তদন্তাধীন মিতু হত্যা মামলার তদন্তকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধসহ তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, ইলিয়াস হোসাইন ভিডিওতে প্রচারিত বক্তব্যে দেশের ভাবমূর্তি এবং দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উসকানি দেয়া হয়। এ ছাড়া ভিডিওতে পুলিশ এবং পুলিশের বিশেষায়িত তদন্ত সংস্থা পিবিআই ও বিশেষ করে আমার মান-সম্মান ও সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হয়েছে. যা দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করে। পিবিআই প্রধান এজাহারে উল্লেখ করেন, ভিডিওতে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি এবং বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করার অপপ্রয়াস করা হয়। রাষ্ট্রের হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও অস্থিরতা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিরও অপপ্রয়াস করা হয়েছে। এ ছাড়া এজাহারে ওই ভিডিও ডকুমেন্টারির বিভিন্ন তথ্য ও বক্তব্যকে মিথ্যা দাবি করে নানা প্রমাণ ও তথ্য উপস্থাপন করেন বনজ কুমার। এদিকে গত মাসের ১৩ মার্চ বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুলসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। একইসঙ্গে আগামী ৯ এপ্রিল সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন আদালত। প্রসঙ্গত ২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনার পরদিন জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা দাবি করে বাবুল আক্তার নিজেই বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে পিবিআই ২০২১ সালের ১২ মে এ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। একই দিন বাবুলের শ্বশুর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় বাবুলসহ আটজনকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর বাবুল আক্তারসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সাত আসামির মধ্যে দুজন পলাতক, একজন জামিনে; আর চারজন কারাগারে। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০১৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থাকাকালে বাবুলের সঙ্গে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নারী কর্মকর্তার সম্পর্ক হয়। এই সম্পর্কের জেরে বাবুলের পরিকল্পনায় মাহমুদাকে খুন করা হয়। এ জন্য তিনি সোর্সের মাধ্যমে তিন লাখ টাকায় খুনি ভাড়া করেন।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন পিবিআই | প্রধানের | মামলায় | বাবুলসহ | চারজনের | বিরুদ্ধে | অভিযোগপত্র