বিভিন্ন রোগের টিকা দেশের মানুষের গড় আয়ু বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশের মানুষ টিকা গ্রহণে আগ্রহী। মানুষ আনন্দের সাথে টিকা গ্রহণ করে, ফলে এটি দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্যব্যবস্থায় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমান গড় আয়ু ৭৩ হওয়ায় টিকা কর্মসূচির সফলতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
রোববার (৭ মে) দুপুর ১২টায় রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে বিশ্ব টিকাদান সপ্তাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে টিকা কার্যক্রম ১৯৭৯ সালে শুরু হয়। আমাদের দেশের মানুষ টিকার প্রতি আগ্রহী। আনন্দের সাথে তারা টিকা নেয়। আমাদের মায়েরা তাদের শিশুদের টিকা দিতে আগ্রহী। এটা আমাদের সফলতার অন্যতম কারণ। আমাদের সরকারও গুরুত্ব সহকারে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করে থাকে। এক্ষেত্রে সব ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট ও পরিকল্পনা করে সে অনুযায়ী কাজ করে। এর ফল আমরা দেখতে পাচ্ছি। এক দশক আগেও গড় আয়ু ৬০ বছরের বেশি ছিল। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩ বছরে। এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে আমাদের টিকা কর্মসূচিগুলো।
মন্ত্রী জানান, সরকার নিয়মিত ১০টি মারাত্মক রোগের টিকা দিচ্ছে। এটি সফল করতে এক লাখ ২০ হাজার নতুন সেন্টার করা হয়েছে। বর্তমানে ৯৫ শতাংশ শিশু টিকার আওতায় এসেছে। যা ২০০১ সালে ৫২ শতাংশ। শিশুদের পাশাপাশি সরকার ১৫-৪৯ বছরের নারীদেরও বিভিন্ন রোগের টিকা দেয়। নারীদের ৮০ শতাংশ টিকার আওতায় আনা হয়েছে।
করোনাকালীন টিকা কর্মসূচির সফলতা তুলে ধরে তিনি বলেন, করোনাকালে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব স্থবির হয়ে গিয়েছিল। লকডাউনের কারণে সব বিভাগে স্থবিরতা দেখা দিয়েছিল। সে সময়ও আমরা ৩৬ কোটি টিকা দেয়া দিয়েছি। এ কারণে আমাদের দেশে মৃত্যুহার অনেক কম। একইসঙ্গে অন্যান্য টিকা কার্যক্রমও চালিয়েছি। সে সময়ও টিকা না পাওয়া শিশুদের পরবর্তীতে টিকা পাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। আমরা সবাইকে টিকা দিয়েছি৷ আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে টিকা নিশ্চিত করেছে।
এ সময় টিকা কার্যক্রমে সরকারের সফলতা তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে জানানো হয় দেশব্যাপী সম্পূর্ণ বিনামূল্যে টিকাদানের মাধ্যমে সাফল্যগুলো হলো:
১. ২০০৮ সালে বাংলাদেশ মা ও নবজাতকের ধনুষ্টংকা দূরীকরণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে।
২. টিকাদান কর্মসূচিতে অসাধারণ সাফল্যের জন্য ২০০৯ এবং ২০১২ সালে আমরা অর্জন করেছি গান্ডি অ্যালায়েন্স অ্যাওয়ার্ড।
৩. বাংলাদেশ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ১১টি দেশ পোলিওমুক্ত অবস্থা বজায় রাখার পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যেই বিগত ২৭ মার্চ ২০১৪ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক পোলিও নির্মূল সার্টিফিকেট অর্জন করেছে।
৪. ২০১৮ সালে আমরা রুবেলা ও কনজেনিটাল রুবেলা সিনড্রোম নিয়ন্ত্রণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছি।
৫. ২০১৯ সালে হেপাটাইটিস বি নিয়ন্ত্রণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন।
এছাড়া টিকাদান কার্যক্রমে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯) জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ অধিবেশনে অংশগ্রহণকালে গ্যাভি দ্যা ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন 'ভ্যাকসিন হিরো' সম্মাননায় ভূষিত হন।