রাজধানীর বাজারগুলোতে সরবরাহ বাড়ায় বেশ কিছু সবজি কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা এবং কাঁচা মরিচ কেজিতে ৪০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। ফার্মের ডিম গত সপ্তাহে ডজনে পাঁচ থেকে ১০ বেড়ে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। এখনো এই দামেই ডিম বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর খুচরা ও পাইকারিতে পেঁয়াজ ও আদার দাম আরো বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে আরো পাঁচ-দশ টাকা বেড়ে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায়। চীনা আদার আমদানি বন্ধ থাকায় কেজিতে আরো ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারত, মিয়ানমার ও ভিয়েতনাম থেকে আসা কেরালা জাতের আদা বিক্রি হচ্ছে কেজি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা।
গেলো বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শ্যামবাজার, রামপুরা, সেগুনবাগিচা ও বাড্ডা কাঁচাবাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরায় ভালোমানের পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা, যা গেলো সপ্তাহে ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। রসুনের দামে পরিবর্তন নেই। আমদানি ও দেশি রসুন কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায়। চীনা আদার আমদানি বন্ধ থাকায় দাম কেজিতে আরো ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে।
এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি। বাজারে কেরালা জাতের পর্যাপ্ত আদা আছে। তার পরও দাম বাড়তি, কেজি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি। গেলো সপ্তাহে খুচরায় কেজি বিক্রি হয় ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা।
পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় বেশির ভাগ সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি না হলে পেঁয়াজের দাম কমার সুযোগ নেই। বরং আরো বাড়বে।
আমদানিকারকরা বলছেন, আমদানি শুরু হলেই পেঁয়াজের বাজার কমে আসবে। দেশে সবচেয়ে বেশি আদা আসত চীন থেকে। এখন চীনে আদার দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। এ কারণে আদা আনছেন না আমদানিকারকরা। অবশ্য ভারত, মিয়ানমার ও ভিয়েতনাম থেকে এখন প্রচুর আদা আমদানি হচ্ছে বলে আমদানিকারকরা জানান।
খুচরা পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা বলেন, ভালোমানের পেঁয়াজ এখন প্রতি মণ কিনতে হচ্ছে প্রায় তিন হাজার থেকে তিন হাজার ১০০ টাকায়। কেজি পড়ে যাচ্ছে প্রায় ৭৫ থেকে সাড়ে ৭৭ টাকা। এর সঙ্গে রয়েছে গাড়িভাড়াসহ বিভিন্ন খরচ। তাই ভালোমানের পেঁয়াজ ৮৫ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব না। তবে সাধারণ মানের পেঁয়াজ কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি করছি। চায়না আদার আমদানি বন্ধ থাকায় সরবরাহ নেই। কেরালা জাতের আদা ৩০০ টাকায় বিক্রি করছি।
ক্রেতা মুনিরা বলেন, বাজারে আসতে এখন ভয় হয়। কারণ এমন কোনো পণ্য নেই যে দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে না। প্রতিটি পণ্যই কয়েক দফায় দাম বেড়ে ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে গেছে। ব্যয় সামাল দিতে খরচ কাটছাঁট করেও সংসার চালানো যাচ্ছে না।
দেশীয় কৃষকের উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে গত ১৬ মার্চ থেকে হিলিসহ দেশের সব বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। এ কারণে বর্তমানে চাহিদার পুরোটা মেটানো হচ্ছে দেশি পেঁয়াজ দিয়ে। পাইকারি বাজারে পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও কুষ্টিয়া থেকে পেঁয়াজ আসছে। দেশের প্রধান পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এসব জেলাগুলো কৃষকরাই এখন ৬০ টাকার নিচে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন না।
পাবনায় গত বুধবার কৃষকরা পাইকারদের কাছে পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন ৬৫ থেকে ৬৭ টাকা কেজি দরে। ফরিদপুর ও রাজবাড়ীতে কৃষক পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬২ টাকায়।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও শ্যামবাজারে গতকাল পাইকারি পর্যায়ে ভালোমানের পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ৮০ থেকে ৮৫ টাকা।
বাজারে সবজির সরবরাহ বাড়ায় সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কিছুটা কমেছে। দাম কমে কাঁচা মরিচ কেজি ১২০, বেগুন ৫০ থেকে ৭০, পটোল ৬০, টমেটো ৫০, শসা ৪০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়শ ৫০, করলা ৬০ থেকে ৭০, বরবটি ৭০ থেকে ৮০, পেঁপে ৬০ থেকে ৭০, চালকুমড়া প্রতিটি ৫০ থেকে ৬০, মুলা কেজি ৪০, কাঁকরোল ৭০ থেকে ৮০, ঝিঙা ও চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতা নাঈম ইসলাম বলেন, গেলো সপ্তাহের তুলনায় সবজির দাম কেজিতে কিছুটা কমলেও এখনো তুলনামূলকভাবে বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। বাজারে সবজির দাম আরো কমা দরকার।
রাজধানীর বাজারগুলোতে মুরগির দাম কিছুটা কমে এখন ব্রয়লার মুরগি কেজি ২০০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের ব্রয়লার হাউসের ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন বলেন, বেশ কয়েক দিন ধরেই মুরগির দাম কমতির দিকে। এখন খুচরায় ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়। সোনালি মুরগি প্রকারভেদে কেজি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে মুরগির চহিদা কমার কারণে পাইকারিতে মুরগির দর কম। ফলে খুচরা পর্যায়েও কম দামে বিক্রি হচ্ছে।