রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসায় তেলাপোকা মারার জন্য যে বিষ দেয়া হয়েছিল তা গুদাম-কারখানায় ব্যবহার হয়। কিন্তু পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিসের কর্মীরা ওই পরিবারকে এ বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি। একই সঙ্গে বাসাটিতে দেয়া বিষ সঠিক অনুপাতে ছিল না। ফলে মৃত্যুর মতো ভয়াবহ ঘটনাটি ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) দুপুর দেড়টায় রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন ডিবিপ্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
ডিবি জানায়, ডিসিএস অর্গানাইজেশন লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটির স্প্রে করা বিষগুলো ছিল গুদাম, কারখানা বা বড় কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জন্য। কিন্তু তারা সেটি বাসা বাড়িতে স্প্রে করেছে। আবার এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবারকে কোনো ধরনের তথ্য দেয়নি। বাসাটিতে ব্যবহৃত তেলাপোকা নাশক রাসায়নিক বিষ সঠিক অনুপাতে ছিল না। ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
এলুমিনিয়াম ফসফেট সমৃদ্ধ এই বিষ বড় গার্মেন্টস ও বীজ গুদাম বা বাণিজ্যিক স্থানে ব্যবহার করা হয় বলে জানায় ডিবি।
হারুন অর রশীদ বলেন, গেলো শুক্রবার (২ জুন) বসুন্ধরার আই ব্লকের একটি নতুন বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিসের কর্মীরা তেলাপোকা মারার বিষ স্প্রে করেন। এর দুদিন পর ভুক্তভোগী পরিবারটি ওই বাসায় ওঠে। বাসায় প্রবেশ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। পরে তাদের হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে গেলো রোববার (৪ জুন) সকালে শাহিল মোবারত জায়ান (৯) মারা যায়। একইদিন রাত ১০টায় মারা যায় শায়েন মোবারত জাহিন (১৫)।
এই ঘটনায় নিহতের বাবা ৫ জুন ডিসিএস অর্গানাইজেশনের তিনজনে বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা টিটু মোল্লাকে গ্রেপ্তার করে ভাটারা থানা পুলিশ।
ডিবিপ্রধান বলেন, ঘটনার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান ও এমডি ফরহাদুল আমিন আত্মগোপন করেন। তারা গাড়িতে করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে থাকেন। পরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, এলুমিনিয়াম ফসফেট সমৃদ্ধ বিষ ঘর বা বাসাবাড়িতে ব্যবহার করা যায় না। আর বাড়িতে এগুলো ব্যবহার করলেও ৭২-৯৬ ঘণ্টা সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হয়। বসুন্ধরার এই বাসাটিতে ব্যবহৃত তেলাপোকা নাশক রাসায়নিক বিষ সঠিক অনুপাতে ছিল না। ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
এদিকে নিহত দুই শিশুর বাবা মোবারক হোসেন তুষার বলেন, কোনো কাজ আমরা না পারলে বিশেষজ্ঞদের ডাকি। কিন্তু তারা টাকার লোভে আমার দুইটা সন্তানকে মেরে ফেললো। আমি যতটা শুনেছি কোম্পানির স্প্রে করা বিষ বাসাবাড়িতে দেয়ার ছিল না। এগুলো গুদামে স্প্রে করার জিনিস, অথচ তারা আমার বাসায় এগুলা স্প্রে করেছে।
তিনি বলেন, যে প্রতিষ্ঠানের কারণে আমার দুই সন্তানকে হারাতে হলো, তারা যেন কোনোভাবেই পার না পায়। আমরা ন্যায়বিচার পাই।