আর্কাইভ থেকে অর্থনীতি

পদ্মা সেতু বদলে দিলো দক্ষিণের কৃষি অর্থনীতির চিত্র

পদ্মা সেতু বদলে দিলো দক্ষিণের কৃষি অর্থনীতির চিত্র
একবছর পূর্ণ হলো স্বপ্নের পদ্মা সেতুর। শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, উন্নয়নের প্রবেশদ্বারও বলা চলে এ সেতুকে। শিল্প, সংস্কৃতি, কৃষি, পর্যটন, শিল্পসহ নানা ব্যবসার প্রসার ঘটেছে এ সেতুর মাধ্যমে। এ সেতুর ফলে বদলে গেছে দক্ষিণের কৃষি ভিত্তিক অর্থনিতির চিত্র। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রথমবারের মতো শরীয়তপুরের জাজিরার সবজি রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপে। যোগাযোগ সহজ হওয়ায় রাজধানী থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরের পদ্মা পাড়ের জাজিরায় বেড়েছে সবজির চাহিদা। শুধু তাই নয়, কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে গত চার মাসে ইউরোপের বাজারে ২১৬ মেট্রিকটন সবজি রপ্তানি করে আয় হয়েছে ২৩ লাখ ইউরো। তাই মান সম্মত সবজি উৎপাদনে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে ১৫ হাজার কৃষককে। ন্যায্য মূল্যে সবজি বিক্রির ফলে লাভবান হচ্ছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। কৃষকরা জানান, আগে ফেরি পার হতে সময় লাগায় উৎপাদিত কৃষি পণ্য সময় মত বাজারজাত করা যেত না। পদ্মা সেতু হওয়ার পর এখন এ অঞ্চলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হয়। শরীয়তপুর কৃষি বিভাগ জানায়, মাটির ধরণ অনুযায়ী অনাবাদী জমিতে রপ্তানিমুখী সবজি উৎপাদনে কাজ চলছে। আর রপ্তানিকে আরও সহজ করতে প্যাকেজিং ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র নির্মাণের কথা জানিয়েছে প্রশাসন। শরীয়তপুর জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল জাসান সোহেল জানান, রপ্তানিকে আরও সহজ করতে এখানে প্যাকেজিং, মনিটরিং ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র স্থাপনে চেষ্টা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন। পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। অর্থ বিভাগের সঙ্গে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের ঋণ চুক্তি অনুযায়ী, ১ শতাংশ সুদসহ ৩৫ বছরে ঋণের টাকা ফেরত দেবে সেতু কর্তৃপক্ষ। অবশ্য ২০০৭ সালে প্রকল্প নেয়ার সময় পদ্মা সেতুর ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। এদিকে গত ৫ এপ্রিল পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের জন্য নেয়া ঋণের প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির ৩১৬ কোটি ৯০ লাখ ৯৭ হাজার ৫০ টাকা পরিশোধ করে সেতু কর্তৃপক্ষ। এরপর ১৯ জুন ঋণের তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির ৩১৬ কোটি ২ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩ টাকা পরিশোধ করা হয়। দুই দফায় ৬৩২ কোটি ৯৩ লাখ ৬৬ হাজার ১৪৩ টাকা পরিশোধ করা হলো। সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, এক বছরে যে আয় হয়েছে, তা আরও বাড়বে। কারণ, সেতুতে রেল চলাচল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও বিভিন্ন সেবা সংস্থার লাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে প্রকল্পের টাকায়। পুরো ব্যয় এখন সেতু কর্তৃপক্ষের ঘাড়ে। দুটি বিকল্প নিয়ে রেল ও বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা চলছে। রেল ও বিদ্যুতের জন্য প্রকল্পে যে ব্যয় হয়েছে, সেই টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়কে পরিশোধ করে দেবে। এ ছাড়া সেতু বিভাগকে বার্ষিক হারে টোল দেবে। এর বাইরে গ্যাস কর্তৃপক্ষ ও অন্যান্য সেবা সংস্থাও টোল দেবে। এ ক্ষেত্রে সেতু কর্তৃপক্ষের ঋণের বোঝা কমবে এবং টোল আয়ও বেড়ে যাবে। সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন জানান, পদ্মা সেতুর টোল ও যানবাহনের চলাচলের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়কে চুক্তি অনুসারে ঋণও পরিশোধ করছেন তারা।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন পদ্মা | সেতু | বদলে | দিলো | দক্ষিণের | কৃষি | অর্থনীতির | চিত্র