আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

এক চিকিৎসক-নার্স নিয়ে’ই আমার বাংলাদেশ হাসপাতাল

এক চিকিৎসক-নার্স নিয়ে’ই আমার বাংলাদেশ হাসপাতাল

নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতালটিতে দুটি আইসিইউ থাকার কথা, কিন্তু সেখানে ৬টি আইসিইউ অর্থাৎ ৪টি আইসিইউ বেশি। এরমধ্যে ভেন্টিলেটর রয়েছে মাত্র ‍দুটিতে। ৯টি এনআইসিইউ থাকলেও ইনকিউবেটর মাত্র একটি। করোনাকালে আইসিইউর চাহিদা বেশি থাকার সুযোগে অধিক মুনাফার ফাঁদ হিসেবেই অনুমোদন ছাড়াই চলছিল অতিরিক্ত চারটি আইসিইউ।

শুধু তাই নয়, ৩০টি সাধারণ বেড থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ১৫টি। পরিচালনার বিধি মোতাবেক ৬ জন নার্স থাকার কথা থাকলেও নার্স রয়েছে মাত্র দুজন। আর তিনজন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও একজনের দায়িত্বে চলছিল আমার বাংলাদেশ হাসপাতালটির সার্বিক ব্যবস্থাপনা। যদিও সেই নার্স ও চিকিৎসক আইসিইউ ও এনআইসিইউ পরিচালনার মতো অভিজ্ঞ ছিলেন না। সাধারণ নার্স ও চিকিৎসক তারা।

র‌্যাব বলছে, সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে আমার বাংলাদেশ হাসপাতালতে ভর্তি করার পর বিলের ফাঁদে জিম্মি করা হতো। আদায় করা হতো মোটা অংকের টাকা। বনিবনা না হলে বের করে দেওয়া হতো।

রাজধানীর শ্যামলীস্থ আমার বাংলাদেশ হাসপাতালে বিল পরিশোধ সংক্রান্ত বিষয়ক দ্বন্দ্বে চিকিৎসাধীন যমজ শিশুকে জোর করে বের করে দেওয়ার পর যমজ এক শিশুর নির্মম মৃত্যু ও অপর শিশুকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে ভর্তির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের মালিক গোলাম সারওয়ারকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব।

আজ (৭ জানুয়ারি) শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন।

রাজধানীর শ্যামলীতে বেসরকারি ‘আমার বাংলাদেশ হাসপাতাল’ এ সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ না করায় চিকিৎসাধীন যমজ শিশুকে জোর করে বের করে দেওয়ার ফলে যমজ এক শিশুর মৃত্যু ও অপর শিশুর আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়।
 
নির্মম ও অমানবিক এ ঘটনায় দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় র‌্যাব তাৎক্ষনিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের পাশে দাড়ায়।

যমজ সন্তান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় ভুক্তভোগী মোহাম্মদপুর থানায় আমার বাংলাদেশ হাসপাতালের মালিক ও পরিচালককে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে। মামলার পর র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা এবং র‌্যাব-২ ও র‌্যাব-৩ এর যৌথ অভিযানে শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে আমার বাংলাদেশ হাসাপাতালের মালিক মোহাম্মদ গোলাম সারোয়ার (৫৭) কে গ্রেফতার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার গোলাম সারওয়ার জানায়, ‘আমার বাংলাদেশ হাসপাতালে’ রোগী ভর্তির লক্ষ্যে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে দালাল নিয়োগ করা আছে। দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বেসরকারি ওই হাসপাতালটিতে গত ২ জানুয়ারি যমজ শিশুকে ভর্তি করা হয়।

ভর্তির পর থেকে বিল পরিশোধের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয় অন্যথায় চিকিৎসা করা হবে না বলে জানায়। ভিকটিম ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করে। তবে অতিরিক্ত আরও টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

টাকা না দেওয়ায় চিকিৎসা বন্ধ রাখা হয় বলে ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন। একপর্যায়ে অর্থ না পাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ভুক্তভোগীর যমজ সন্তানকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়।

গ্রেফতার সারওয়ার র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সে দীর্ঘ ২০-২২ বছর যাবত রাজারবাগ, বাসাবো, মুগদা, মোহাম্মদপুর ও শ্যামলী এলাকায় ৬টি হাসপাতালে পরিচালনা করে আসছে। সেগুলো হলো ঢাকা ট্রমা, বাংলাদেশ ট্রমা হাসপাতাল, মমতাজ মেমোরিয়াল ডায়াগনস্টিক, আরাব ডায়াগনস্টিক, মোহাম্মদিয়া মেডিকেল সার্ভিসেস ও আমার বাংলাদেশ হাসপাতাল। এরমধ্যে আমার বাংলাদেশ হাসপাতাল বাদে সবই বন্ধ করেছেন নানা অনিয়ম ও প্রতারণার অভিযোগ উঠার পর।

প্রায় এক বছর যাবত শ্যামলীতে ‘আমার বাংলাদেশ হাসপাতাল’ খুলে পুনরায় ব্যবসা শুরু করেন। বিগত সময়ের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি আমার বাংলাদেশ হাসপাতালের সঙ্গে তিনি দালাল সিন্ডিকেট জড়ান। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল হতে রোগীদের ফুসলিয়ে নিজের হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসতেন।

গ্রেফতার আমার বাংলাদেশ হাসপাতালের মালিক গোলাম সারওয়ার জানান, হাসপাতাল পরিচালনার বিধি মোতাবেক সার্বক্ষণিক ৩ জন চিকিৎসক ডিউটিরত থাকার কথা থাকলেও সার্বক্ষণিক একজন ডিউটিতে থাকত। হাসপাতালটিতে ২টি আইসিইউসহ ৩০টি বেডের প্রাধিকার রয়েছে। তার হাসপাতালে ৬টি আইসিইউ অর্থাৎ ৪টি আইসিইউ বেশি। তন্মধ্যে ভেন্টিলেটর রয়েছে ২টির। ৯টি এনআইসিইউ থাকলেও ইনকিউবেটর ছিল ১টি ও ১৫টি সাধারণ বেড রয়েছে। মূলত আইসিইউ কেন্দ্রিক ব্যবসার ফাঁদ তৈরি করে সে অবৈধ ব্যবসা করে যাচ্ছে।

অনুমোদন পাওয়ার শর্ত না মেনেও কি করে হাসপাতালটি স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন পেয়েছে সে ব্যাপারে কোনো তথ্য র‌্যাব পেয়েছে কিনা জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, বিগত সময়ে যখনই অনিয়ম-প্রতারণা ও রোগী জিম্মির বিষয়টি সামনে এসেছে তখনই তিনি হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি বন্ধ করেছেন। এরপর নতুন নামে ফের আরেকটি প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন। তিনি যখন অনুমোদন পান তখন হয়তো সে ধরণের শর্তপূরণের বিষয় তিনি ইন্সপেক্টশনে দেখিয়েছেন। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা অভিযানের সময় ছিলেন, তারাও নিশ্চয় বিষয়টি পর্যালোচনা করবেন। আমরা জিজ্ঞাসাবাদে বিষয়টি জানার চেষ্টা করব।

অবহেলাজনিত মৃত্যুর ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। যেহেতেু জোরপূর্বক নির্যাতন করে বের করে দেওয়ায় যমজ এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এতে হত্যার অভিযোগ আনা হবে কিনা জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, বিজ্ঞ তদন্ত কর্মকর্তা বিষয়টি দেখবেন। যেহেতু এখানে ময়নাতদন্তের বিষয় আছে। ভুক্তভোগী মাও অভিযোগ করেছেন মামলায় যে, তাকেসহ যমজ শিশুদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। তদন্তে ও ময়না তদন্তে তা উঠে আসলে অবশ্যই হত্যার বিষয়টিও অভিযোগপত্রে আসবে।

 

এসআই/

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন এক | চিকিৎসকনার্স | নিয়েই | আমার | বাংলাদেশ | হাসপাতাল