আর্কাইভ থেকে জাতীয়

ভোক্তার পকেট লুটে নিচ্ছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট: ক্যাব সভাপতি

ভোক্তার পকেট লুটে নিচ্ছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট: ক্যাব সভাপতি
মুক্তবাজার অর্থনীতি অনুসরণের ফলে দেশে গুটিকয়েক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান প্রায় প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা অর্জন করেছে। তারা এখন অস্বাভাবিক মুনাফা করছে। নিত্যপণ্যের সরবরাহ সংকট সৃষ্টি করে ওইসব ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট হাজার হাজার কোটি টাকা ভোক্তার পকেট থেকে লুটে নিচ্ছে। বলেছেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সভাপতি গোলাম রহমান। মঙ্গলবার (১১ জুলাই) ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও করণীয়’ শীর্ষক একটি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ক্যাব এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এসময় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গোলাম রহমান। তিনি বলেন, বাজারের পণ্যমূল্য পরিস্থিতি একদিনে বর্তমান পর্যায়ে আসেনি, তাৎক্ষণিকভাবে তা নিয়ন্ত্রণও সম্ভব নয়। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত, মুদ্রা ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা অত্যাবশ্যক, তবে তা পর্যাপ্ত নাও হতে পারে। গোলাম রহমান বলেন, অধিকাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীলতা কম। বাজারে প্রতিযোগিতা না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠান পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য নির্ধারণ করে অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জন করছে। কখনো ভোজ্যতেল, কখনো চিনি অথবা পেঁয়াজ, আদা, ডিম, কাঁচামরিচ ইত্যাদি পণ্যের সরবরাহ সংকট সৃষ্টি করে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট হাজার হাজার কোটি টাকা ভোক্তার পকেট থেকে লুটে নিচ্ছে। ক্যাব সভাপতি বলেন, অনেকসময় আমদানি নিয়ন্ত্রণে অশুল্ক বাধা, যেমন- চাল আমদানিতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন; পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, ইত্যাদি কৃষিপণ্য আমদানিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পারমিট অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে অতি মুনাফা অর্জনের সুযোগ করে দেয়। তাছাড়া পথে ও বাজারে চাঁদাবাজি, বৈরি আবহাওয়া ইত্যাদি অজুহাত তো আছেই। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তরিক নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ভোক্তাস্বার্থ দেখার জন্য বিলম্বে হলেও ২০০৯ সালে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন এবং ২০১২ সালে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা আইনসহ আরও কয়েকটি আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ইত্যাদি। তাছাড়া আছে, বিএসটিআই, কৃষি সম্প্রাসরণ অধিদপ্তর, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এবং আরও নানা সংস্থা। ভোক্তা অধিকার রক্ষায় এসব সংস্থার সক্ষমতা সীমিত এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে একেবারে অকার্যকর। বড় অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার নজির নেই বললেই চলে। তিনি বলেন, জনজীবনে ‘মুক্তবাজার অর্থনীতি’ অনুসরণের ফলাফল মূল্যায়ন করে এর উপযোগীতা পুনর্নির্ধারণ ও সংস্কারের সময় এসেছে। বাজারে প্রতিযোগিতা থাকলে কারসাজি করে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন সম্ভব নয়। অতএব, গুটিকয়েক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণ, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও কার্টেলের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সরকারকে খাদ্য বিভাগ, টিসিবির ন্যায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিত্যপণ্য সরবরাহ ও বিক্রির ব্যবস্থা গ্রহণ, মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। সরকারের ব্যবসা থেকে দূরে থাকার নীতিতে জনস্বার্থ রক্ষিত হচ্ছে না। দুদকের এ সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, ভারত সরকার নব্বই এর দশকে ভোক্তাস্বার্থ দেখার জন্য একটি পৃথক মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশেও ‘ভোক্তাবান্ধব, জনবান্ধব’ নীতি গ্রহণ সময়ের দাবি। ন্যায্য ও সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ, ভোক্তাস্বার্থ সংক্রান্ত বিষয়াদি তদারকি, সরকারের নীতি নির্ধারণে ভোক্তা-স্বার্থের প্রতিফল, ভোক্তাস্বার্থ রক্ষায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কার্যক্রমে সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ভোক্তা সম্পর্কিত একটি বিভাগ সৃষ্টি সময়োপযোগী হবে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ক্যাবের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম, ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাপরিচালক ও ক্যাব ঢাকা জেলা কমিটির সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম শামস এ খান।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন ভোক্তার | পকেট | লুটে | নিচ্ছে | ব্যবসায়ী | সিন্ডিকেট | ক্যাব | সভাপতি