রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসি স্থগিতের আবেদন খারিজের পর পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে দেখা করেছেন। এছাড়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরেক আসামি মিয়া মহিউদ্দিনের নিকটাত্মীয়রাও তার সঙ্গে দেখা করেছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
সাক্ষাৎ শেষে কারাগার থেকে বেরিয়ে জাহাঙ্গীর আলমের ভাই সাংবাদিকদের জানান, জাহাঙ্গীর স্বাভাবিক ছিলেন। তিনি বলেছেন- এ মৃত্যু নিয়ে আমার ভয় নেই। আমার এ মৃত্যু রোমান্টিক।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলার ফাঁসির দুই আসামির পরিবারের সদস্যদের চিঠি দিয়ে ডাকার পর তারা দেখা করতে যান বলে জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই মিজানুর রহমান। এ সময় জাহাঙ্গীরের বাবা আজিমুদ্দিনও ছিলেন। তাকে হইলচেয়ারে কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করতে দেখা যায়।
মঙ্গলবার দুপুর ১টায় কারা ফটকের সামনে মিজানুর রহমান বলেন, গত রোববার কারা কর্তৃপক্ষ আমাদের চিঠি দিয়েছিল। রিট পেন্ডিং থাকায় আমরা তখন দেখা করিনি। রিট নিষ্পত্তি হওয়ার পর আমরা দেখা করতে এসেছি। আমাদের পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয় মিলিয়ে প্রায় ৩৫ জন দেখা করতে এসেছি।
দুপুর ১টা ৬ মিনিটে আইডি কার্ড দেখিয়ে জাহাঙ্গীর আলমের পরিবারের সদস্যরা প্রধান ফটক দিয়ে কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করেন। আর ৩টা ৪৫ মিনিটে কারাগারের পেছনের ফটক দিয়ে তারা বের হয়ে যান। প্রধান ফটকের সামনে সাংবাদিকদের ভিড় দেখে কারা কর্তৃপক্ষ তাদের পেছনের ফটক দিয়ে বের করে দেয়।
এর আগে সকালে মিয়া মহিউদ্দিনের পরিবারের কয়েকজন সদস্য একটি মাইক্রোবাসযোগে এসে দেখা করে চলে যান বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।
কারাগারের পেছন ফটক দিয়ে বের হবার সময় জাহাঙ্গীরের আরেক ভাই সোহরাব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, জাহাঙ্গীর স্বাভাবিক ছিলেন। তিনি বলেছেন- এ মৃত্যু নিয়ে আমার ভয় নেই। আমার এ মৃত্যু রোমান্টিক। এ মৃত্যু আমার জন্য পরকালে ভালো কিছু নিয়ে আসতে পারে। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। কোন ভুল করে থাকলে ক্ষমা করে দিয়েন।
এদিকে এর আগে মঙ্গলবার সকালে ড. তাহের হত্যা মামলায় চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি জাহাঙ্গীরের ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।
কারাগার সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, কারাগারের ভেতরে কর্মকর্তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময় যে কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকার কথা তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল জলিল কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) শামীম আহমেদ বলেন, আসামিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। আপাতত কিছু জানাতে পারছি না।
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. আবু সাঈদ মো. ফারুক বলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না। বিষয়টি নিয়ে তিনি কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গেই কথা বলার পরামর্শ দেন।
প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ হন অধ্যাপক তাহের আহমেদ। ২ ফেব্রুয়ারি তার লাশ বাসার পেছনের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয়। এ হত্যা মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুতবিচার আদালতের বিচারক চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেন।
পরে দণ্ডপ্রাপ্তরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। আপিল বিভাগ মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের রায় বহাল রাখলেও আসামি নাজমুল আলম ও তার স্ত্রীর ভাই আব্দুস সালামের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দেন।
তবে আপিলে সাজা কমে যাবজ্জীবন পাওয়া দুই আসামির দণ্ড বৃদ্ধি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি শেষে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায়ই বহাল রাখেন। ইতোমধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির প্রাণভিক্ষার আবেদনও নাকচ করেছেন রাষ্ট্রপতি।