আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

প্রেমঘটিত কারণে ২৫ ভাগ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে

প্রেমঘটিত কারণে ২৫ ভাগ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে

২০২১ সালে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৫ শতাংশ প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে। অনুসন্ধানে আত্মহননের পেছনে ‘সম্পর্ক নিয়ে জটিলতা’ ও ‘আর্থিক সমস্যাসহ’ বেশ কয়েকটি কারণ ওঠে এসেছে। এরমধ্যে ‘পারিবারিক সমস্যা’ এবং ‘হতাশাও’ রয়েছে।

শনিবার (২৯ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছে সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন। দেশের প্রায় ৫০টি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার আত্মহত্যার সংবাদ বিশ্লেষণ করে সংখ্যাটি পেয়েছে আঁচল ফাউন্ডেশন। 

আঁচলের গবেষণা বলছে, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০২১ সালে ১০১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। তাদের মধ্যে ৬৫ জন ছাত্র, অর্থাৎ আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬৪ দশমিক ৩৬ শতাংশই ছাত্র। ছাত্রীদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ছাত্র গত বছর আত্মহত্যা করেছেন।

আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধান করে এ প্রতিষ্ঠান জানায়, সম্পর্কগত কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে ২৪.৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী এবং পারিবারিক সমস্যার কারণে এ পথে ধাবিত হয়েছে ১৯.৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী। অন্যদিকে মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে ১৫.৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থী বেছে নিয়েছে আত্মহননের পথ। এছাড়াও পড়াশোনা সংক্রান্ত কারণে আত্মহত্যা করেছেন ১০.৮৯ শতাংশ শিক্ষার্থী এবং আর্থিক সমস্যায় কবলিত হয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ৪.৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী।

সমন্বয়কৃত তথ্য থেকে আরও দেখা যায়, মাদকাসক্ত হয়ে নির্বিকারে নিজের জীবন হননের পথ বেছে নিয়েছে ১.৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। এছাড়া আরও নানাবিধ কারণে আত্মহত্যা করেছেন মোট ২১.৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থী।

অন্যদিকে এ গবেষণা বলছে, সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে যা ৬১.৩৯ শতাংশ বা ৬২ জন। এছাড়াও মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটি দাঁড়ায় ১২ তে যা মোট আত্মহননকারীর ১১.৮৮ শতাংশ। ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সংখ্যাটি ৪, যা মোট আত্মহত্যাকারীর ৩.৯৬ শতাংশ। অন্যদিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার ২২.৭৭ শতাংশ, যা সংখ্যায় ২৩ জন।

আঁচলের গবেষণা বলছে, সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যার সংখ্যা দাঁড়ায় ৯ জন। এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সংখ্যাটি ৬ জন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ জন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ জন। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, যাদের সংখ্যা ৩ জন। দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে এমন আত্মহননের হার নিঃসন্দেহে ভীতিকর। 

আত্মহননকারীদের বয়সভিত্তিক তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২২-২৫ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি। সমন্বয়কৃত তথ্যগুলোর মধ্যে ৬০টি আত্মহত্যার ঘটনা এই বয়সসীমার শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা গিয়েছে, যা মোট ঘটনার ৫৯.৪১ শতাংশ। অন্যদিকে, ১৮-২১ বছর বয়সী তরুণদের আত্মহত্যার ঘটনা মোট সমন্বয়কৃত ঘটনার ২৬.৭৩ শতাংশ বা ২৭ জন। এছাড়া ২৬-২৯ বছর এবং ২৯ বছরের ঊর্ধ্বে এই হার যথাক্রমে ৯.৯০ শতাংশ এবং ৩.৯৬ শতাংশ যা সংখ্যায় যথাক্রমে ১০টি ও ৪টি। 

তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অনার্স পড়ুয়া ৩য় এবং ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার তুলনামূলক বেশি যা ৩৬.৬৩ শতাংশ। ধারণা করা যায়, এ শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার কেন্দ্রিক সামাজিক চাপ বেশি থাকে এবং ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার কারণে তাদের মাঝে হতাশার ছাপ বেশি দেখা যায়।

এবিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে গত কয়েক বছরের আত্মহত্যার পরিসংখ্যান বিশেষত কোভিড পরিস্থিতিতে এই বিষয়ের পরিসংখ্যান এবং তার ফলাফল যথেষ্ট ভীতিকর। কোভিড-১৯ ভাইরাস নিয়ে আমরা যতখানি আতঙ্কিত, আত্মহত্যায় মৃত্যুবরণ করা অসংখ্য মানুষকে নিয়ে কিন্তু আমরা ততোটা চিন্তিত নই।

তিনি বলেন, নানা সমীক্ষায় দেখা গেছে, শিক্ষা সংক্রান্ত যেমন পড়াশোনার চাপ, বিভিন্ন পরীক্ষায় ব্যর্থতা, পরিবারের সাথে অভিমান, প্রেমঘটিত সম্পর্কের বিচ্ছিন্নতা, একাকীত্ব ইত্যাদি নানাবিধ কারণ আত্মহত্যার জন্য দায়ী। দুঃখজনক হলেও সত্য, এই মৃত্যুর মিছিলে প্রতিবছরই নতুন নতুন অসংখ্য তরুণ-তরুণী সামিল হবেন যেহেতু মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে আমরা উদাসীন।

দেশের জন্য হওয়া এই বড় ধরনের ক্ষতি রোধ করতে যদি সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিতভাবে কাজ করা যায় এবং প্রতিটি জেলায় আত্মহত্যা সেল গঠন করে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা যায়, তবে অনেকাংশেই আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব, বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক।
 
এস

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন প্রেমঘটিত | কারণে | ২৫ | ভাগ | শিক্ষার্থী | আত্মহত্যা | করে