আর্কাইভ থেকে ঢালিউড

কতটি বসন্ত পেরোলেন সাবিনা ইয়াসমিন...

কতটি বসন্ত পেরোলেন সাবিনা ইয়াসমিন...
উপমহাদেশের জীবন্ত কিংবদন্তি তিনি। অসংখ্য কালজয়ী গান রয়েছে তার কণ্ঠে। অডিও এবং চলচ্চিত্র- দুই ভুবনের গানেই তার গ্রহণযোগ্যতা আকাশছোঁয়া। বাংলা সঙ্গীতাঙ্গনে যিনি গানের পাখি নামে পরিচিত, আজ সেই গুণী শিল্পীর জন্মদিন। তিনি হলেন বাংলা চলচ্চিত্রের প্লেব্যাকে বিস্ময়কর গায়িকা সাবিনা ইয়াসমিন। ১৯৫৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন এ শিল্পী। বাংলা গানের ইতিহাসে চির অম্লান নাম সাবিনা ইয়াসমিন। ক্যারিয়ারে কণ্ঠ দেয়ছেন ১২ হাজার গানে।  দেশাত্মবোধক থেকে শুরু করে উচ্চাঙ্গ, ধ্রুপদী, লোকসংগীত ও আধুনিক বাংলাসহ বিভিন্ন ধারার নানা আঙ্গিকের সুরে গান গেয়ে নিজেকে দেশের অন্যতম সেরা সংগীতশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অর্জন করেছেন নামিদামি দেশি-বিদেশি বহু সম্মাননা।
প্রধানমন্ত্রী, সাবিনা ইয়াসমিন
প্রধানমন্ত্রী, সাবিনা ইয়াসমিন
আজ সোমবার সেই গুণি কণ্ঠশিল্পীর জন্মদিন। ৬৯ পেরিয়ে ৭০ বসন্তে পা দিয়েছেন তিনি। ১৯৫৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাবিনা ইয়াসমিনের জন্ম হয়েছিল ঢাকায়। যদিও তাদের পৈতৃক নিবাস সাতক্ষীরায়। তার পিতা লুতফর রহমান ব্রিটিশ রাজের অধীনে সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন এবং মায়ের নাম বেগম মৌলুদা খাতুন। কণ্ঠশিল্পী ফরিদা ইয়াসমিন, ফওজিয়া খান ও নীলুফার ইয়াসমিন তার আপন বোন। বড় বোন ফরিদা ইয়াসমিনের সঙ্গে ছোট থেকেই দুর্গাপ্রসাদ রায়ের কাছে গান শিখতেন সাবিনা ইয়াসমিন। পরবর্তীতে ওস্তাদ পি সি গোমেজের কাছে একটানা ১৩ বছর তালিম নেন। মাত্র ৭ বছর বয়সে স্টেজ প্রোগ্রামে অংশ নেন সাবিনা ইয়াসমিন। ছোটদের সংগঠন খেলাঘরের সদস্য হিসেবে রেডিও-টেলিভিশনে গান করতেন নিয়মিত। ১৯৬৭ সালে ‘আগুন নিয়ে খেলা এবং ‘মধুর জোছনা দীপালি’ গান দুটির মাধ্যমে তিনি প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তারও আগে ‘নতুন সুর’ নামে ছবিতে প্রথম গান করেন শিশুশিল্পী হিসেবে।
সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা
সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা
পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে গানের ভুবনে বিচরণ করছেন সাবিনা ইয়াসমিন। বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র রুনা লায়লা ছাড়া তার সমকক্ষ হয়ে আর কেউই এত লম্বা সময় ধরে আধিপত্য বজায় রাখতে পারেননি। মরমী শিল্পী আব্দুল আলীম থেকে শুরু করে একালের উঠতি গায়কদের সঙ্গেও তিনি একের পর এক গান গেয়েছেন। সুযোগ পেয়েছেন উপমহাদেশের বরেণ্য সুরকার আর ডি বর্মণের সুরে গান গাওয়ার। উপমহাদেশের বিখ্যাত দুই কণ্ঠশিল্পী কিশোর কুমার ও মান্না দে’র সঙ্গেও গান গেয়েছেন সাবিনা ইয়াসমিন। খ্যাতিমান এই গায়িকা তার মায়াবী কণ্ঠ দিয়ে বাংলা সংগীতকে যেমন সমৃদ্ধ করেছেন, পুরস্কারও পেয়েছেন দুহাত ভরে। সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেয় একুশে পদক। ১৯৯৬ সালে পান স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার। সেরা কণ্ঠশিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছেন রেকর্ড ১৪ বার। বাচসাস পুরস্কার পেয়েছেন ছয়টি। জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন দুইবার। ১৯৮৪ সালে বিশ্ব উন্নয়ন সংসদ থেকে সংগীতের ওপর লাভ করেন ডক্টরেট ডিগ্রি।
সাবিনা ইয়াসমিন
সাবিনা ইয়াসমিন
এছাড়া ১৯৯০ সালে শেরে বাংলা স্মৃতি পদক, ১৯৯১ সালে বিএফজেএ পুরস্কার ও উত্তম কুমার পুরস্কার, ১৯৯২ সালে অ্যাস্ট্রোলজি পুরস্কার এবং একই বছর নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে পান ‘বেস্ট সিঙ্গার’ পুরস্কার। ২০১৭ সালে দশম স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড-দ্য ডেইলি স্টার জীবনের জয়গান উৎসব থেকে পান আজীবন সম্মাননা। সাবিনা ইয়াসমিন শেষ প্লেব্যাক করেছেন প্রয়াত চিত্রনায়িকা ও নির্মাতা কবরী পরিচালিত ‘এই তুমি সেই তুমি’ ছবির ‘দুটি চোখে ছিল কিছু নীরব কথা’ শিরোনামের একটি গানে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে গানটিতে কণ্ঠ দেন তিনি। এছাড়া কবরীর ‘এই তুমি সেই তুমি’ ছবির চারটি গানে সুরও দেন সাবিনা ইয়াসমিন। জীবন্ত এই কিংবদন্তি বাংলার বুকে বেঁচে থাকবেন শত শত বছর।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন কতটি | বসন্ত | পেরোলেন | সাবিনা | ইয়াসমিন