সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানকে বিচারিক (নিম্ন) আদালতের দেয়া ১৩ বছরের সাজা বহাল রেখে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করেছেন তার আইনজীবী। একই সঙ্গে তার জামিন আবেদনও করা হয়েছে আপিলে।
মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করা হয় বলে নিশ্চিত করেন ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি জানান, যে কোনোদিন আপিল বিভাগে চেম্বার জজ আদালতে শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছ।
এর আগে দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) উচ্চ আদালতের নির্দেশে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এর বিচারক আবুল কাশেমের আদালতে তিনি আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এদিকে আত্নসমর্পণের পর কারাগারে গিয়ে জামিন পেয়েছেন আমানুল্লাহ আমানের স্ত্রী সাবেরা আমান।
সম্পদের তথ্য গোপন ও অর্জনের অভিযোগে করা দুদকের মামলায় তিন বছরের দণ্ডিত বিএনপির নেতা আমানউল্লাহ আমানের স্ত্রী সাবেরা আমান জামিন পেয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে। জামিনের ফলে সাবেরা আমানের কারামুক্তিতে আর কোনো বাঁধা নেই।
আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার জজ আদালত মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) এ আদেশ দেন।
তিন বছরের দণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে জামিন চেয়ে সাবেরা আমানের আবেদনের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেয়া হয়। একই সঙ্গে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে লিভ টু আপিলটি শুনানির জন্য আগামী ১৫ জানুয়ারি দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
আদালতে এ দিন সাবেরা আমানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী নাজমুল হুদা। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
এর আগে সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানকে ১৩ বছর এবং তার স্ত্রী সাবেরা আমানকে বিচারিক আদালতের দেয়া রায়ে ৩ বছরের কারাদণ্ড বহাল রেখে গত ৩০ মে রায় দেন হাইকোর্ট। এ রায়ের অনুলিপি বিচারিক আদালতের গ্রহণের ১৫ দিনের মধ্যে আমানউল্লাহ আমান ও সাবেরা আমানকে সংশ্লিষ্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়। গত ৭ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।
নির্দেশনা অনুসারে ৩ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন সাবেরা আমান। ঢাকার বিশেষ জজ-১ আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ৪ সেপ্টেম্বর লিভ টু আপিল করে সাবেরা আমান জামিন চান। বিষয়টি মঙ্গলবার চেম্বার জজ আদালতে শুনানির জন্য ওঠে।
আইনজীবী নাজমুল হুদা বলেন, ২০০৬ সাল থেকে সাবেরা আমান ক্যানসারে ভুগছেন। তিন বছর সাজার মধ্যে আট মাস সাজা ভোগ করেছেন-মূলত এ যুক্তিতে জামিন চাওয়া হয়। জামিন হওয়ায় সাবেরা আমানের কারামুক্তিতে বাধা নেই।
নাজমুল হুদা আরও বলেন, হাইকোর্টের রায়ে বিচারিক আদালতের গ্রহণের ১৫ দিনের মধ্যে আমানউল্লাহ ও সাবেরা আমানকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। হাইকোর্টের রায় ২৭ আগস্ট বিচারিক আদালত গ্রহণ করেন। সে হিসাবে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় আছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমানউল্লাহ আমান আত্মসমর্পণ করবেন।
সম্পদের তথ্য গোপন ও আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আমান দম্পতির বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ৬ মার্চ রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা করে দুদক। একই বছরের ২১ জুন সংসদ ভবনে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতের রায়ে আমানকে ১৩ বছরের (পৃথক ধারায় ১০ ও ৩ বছর) ও সাবেরাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা হাইকোর্টে আপিল করেন।
২০১০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট আপিল মঞ্জুর করে তাদের খালাস দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে দুদক আপিল বিভাগে আবেদন করে। এর শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ২৫ মে আপিল বিভাগ খালাসের রায় বাতিল করে হাইকোর্ট আপিল পুনঃশুনানি করতে নির্দেশ দেন। পুনঃশুনানি শেষে আমান দম্পতির আপিল খারিজ করে বিচারিক আদালতের দেয়া দণ্ড বহাল রেখে গত ৩০ মে ওই রায় দেন হাইকোর্ট।