বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) শিরোপা নির্ধারনি ম্যাচ আজ শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি)। কার হাতে উঠবে টুর্নামেন্টের অষ্টম আসরের ট্রফি! ফরচুন বরিশাল বনাম কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মধ্যে শিরোপা নির্ধারনী ম্যাচের মধ্য দিয়ে পর্দা নামবে এবারের বিপিএলের। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় মিরপুর-শেরে-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে মুখোমুখো হবে দুই দল।
রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতির গ্রুপপর্বের দেখায় দুই দলই জয় পেয়েছিলো একবার করে। কিন্তু প্রথম কোয়ালিফায়ারে সাকিবের বরিশালের কাছে ১০ রানে হার মানে ইমরুল কায়েসের কুমিল্লা। ফাইনালে আবারো দেখা হচ্ছে দুই দলের। এবার প্রশ্ন, কার হাতে উঠবে শিরোপা?
দুই দলে তারকার ছড়াছড়ি। কুমিল্লা দলে সুনিল নারিন, ফাফ ডু প্লেসি, মঈন আলীরা থাকলে বরিশালের আছেন গেইল, ব্রাভো, মুজিব। কুমিল্লার তরুণ তুর্কি মাহমুদুল হাসান জয়ের জবাব হতে পারেন বরিশালের মুনিম শাহরিয়ার। তবে বরিশালের রয়েছেন স্পেশাল একজন। সাকিবের জবাব খুঁজে না পেলে কুমিল্লার হতে পারে বড় বিপদ। এই জায়গায় এগিয়েই আছে বরিশাল।
তবে সুজন এসব হিসাব মাথায় রাখছেন না। পরিসংখ্যান, টুর্নামেন্টের হিসাব-নিকাশ আর চালচিত্র দিয়ে এমন ম্যাচ বিচার করা যায় না। সুজনের মতে, ওই নির্দিষ্ট দিনে যে ভালো খেলবে, সেই জিতবে ফাইনাল। সুজনের মতে, ফাইনাল সবসময়ই কঠিন হয়। স্নায়ুচাপ জয় করে যে বেশি ভালো খেলবে, জয়ের সুযোগ তারই বেশি।
দুই দলের যে কারো সামর্থ্য আছে শিরোপা জেতার। বরিশাল কোচ মানছেন, কুমিল্লা খুব শক্তিশালী দল। তবে মনস্তাত্ত্বিকভাবে কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকবে তারা। তিনবারের মোকাবিলায় দুবার জিতেছে ফরচুন। প্রথম কোয়ালিফায়ারে কুমিল্লাকে হারিয়েই ফাইনালে ওঠে তারা। এই জয় মানসিকভাবে এগিয়ে রাখবে সাকিব বাহিনীকে। তবে খেলাটা যেহেতু মাঠের, জয় পেতে মাঠের খেলাতেই হারাতে হবে প্রতিপক্ষকে।
এবারের বিপিএলে শীর্ষস্থান নিয়ে লড়াইটা হয়েছে কুমিল্লা আর বরিশালের মধ্যেই। কুমিল্লাকে হারিয়েই পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে ওঠে সাকিবেরা। দুই দলেরই এর আগেও শিরোপা জেতার ইতিহাস আছে। অধিনায়ক হিসেবে বিপিএলের শিরোপা জিতেছেন সাকিব-ইমরুল দুজনেই। তাই এই মঞ্চ তাদের নতুন নয়। কীভাবে ফাইনালে স্নায়ু শীতল রাখতে হয়, তা দুই ক্যাপ্টেনই জানে।
ফাইনালের আগে কুমিল্লার জন্যও সুখবর হয়ে এসেছে সুনিল নারিনের ফর্মে ফেরা। বল হাতে জ্বলে উঠতে না পারলেও ব্যাট হাতে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ঝড় তুলেছিলেন নারিন। বিপিএলের ইতিহাসে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি করে চট্টগ্রামের বিরুদ্ধে কুমিল্লাকে এনে দিয়েছেন সহজ জয়। মিরপুরের মরা পিচে ব্যাট হাতে ম্যাচে প্রাণের সঞ্চার করেছেন এবার কুমিল্লা তাকিয়ে থাকবে বল হাতে নারিনের স্বরূপে ফেরার। বড় ম্যাচে সব আলো কেড়ে নেওয়াই তো চ্যাম্পিয়নদের কাজ।
কুমিল্লার নারিনের সঙ্গে কলকাতার নাইটদের হয়ে একই ড্রেসিংরুম শেয়ার করেছেন সাকিব। এবার বিপিএলে নামবেন প্রতিপক্ষ হিসেবে। নারিনকে থামানোর উপায় সবচেয়ে ভালো জানার কথা তো সাকিবেরই। এই বিপিএলে তর্কাতীতভাবে সেরা খেলোয়াড় বরিশালের সাকিব। প্রতি ম্যাচে দলের জয়ে কিছু-না কিছু অবদান রেখেছেন।
পরিসংখ্যান বলছে, সাকিবই সবচেয়ে বেশি ইমপ্যাক্ট রেখেছেন বরিশালের জয়ে। টানা পাঁচ ম্যাচে ম্যাচসেরা হয়ে করেছেন বিশ্বরেকর্ড। ফাইনালে আর একবার যদি সেই পারফরম্যান্সের পুনরাবৃত্তি করেন, তবে শিরোপার বরিশাল যাত্রা বুঝি কেউই ঠেকাতে পারবে না। সাকিবের দলের আরেক ট্রাম্পকার্ড ব্রাভো।
সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকের তালিকায় দুইয়ে থাকা ব্রাভোর স্লোয়ার ডেথ ওভারে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার অস্ত্র হতে পারে অধিনায়ক সাকিবের। তেমনি ইনিংসের শুরুতে গেইল-ঝড়ের দেখা না মিললেও সাকিবের দলের হয়ে তাণ্ডবনৃত্য করার জন্য আছে আরেক ঝড়। মুনিম শাহরিয়ার যদি টেকেন কয়েক ওভার, তাহলে মাঠে যে তাণ্ডব নামবে, তা মোটামুটি নিশ্চিত বলা চলে।
বিপিএলের বড় বদনাম, এখানে জমজমাট খেলা হয় না। ম্যাড়ম্যাড়ে লো স্কোরিং ম্যাচে মনে রাখার মতো ঘটে না কিছুই। এবারের বিপিএলে বড় তারকার অভাবও অনেকের অভিযোগ। সব অভিযোগ-বদনামের জবাব দিতে পারে তারকাবহুল এই দুই দল। মনে রাখার মতো একটা ম্যাচ উপহার দেওয়ার সামর্থ্য আছে ফাইনালের দুই দলেরই।
হাসিব মোহাম্মদ