আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর)। ১৯৪৭ সালের এই দিনে এইদিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের কোল আলো করে জন্ম নেন শেখ হাসিনা।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করা সবার আদরের হাসু জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ সন্তান। ছাত্র জীবন থেকেই তিনি সম্পৃক্ত রাজনীতির সাথে। পিতার সংগ্রামের প্রতিটি অধ্যায়ে নিরব সাক্ষী শেখ হাসিনা।
এক বর্ণাঢ্য সংগ্রামী জীবন শেখ হাসিনার। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক দল বিপথগামী সেনা সদস্যদের নৃশংসতায় প্রাণ হারান তার বাবা-মা, ভাই ভাবীসহ পরিবারের প্রায় সব সদস্য। বিদেশ থাকায় সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেচে যান শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা।
বিভৎস সেই হত্যাকাণ্ডে স্বজন হারা শেখ হাসিনা নতুন জীবনযুদ্ধ শুরু করেন। নানা উত্থান-পতন আর পটপরিবর্তনে দীর্ঘ ৬ বছর নির্বাসন শেষে ১৯৮১ সালে দেশে ফেরেন তিনি। হাল ধরেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রবক্তা স্বপ্নদর্শী এই নেতা ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণের পর থেকে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে দলকে সুসংগঠিত করেন। ১৯৯৬ সালে প্রথম, ২০০৮ সালে দ্বিতীয় এবং ২০১৪ সালে তৃতীয় এবং ২০১৮ সালে চতুর্থ বারের মতো নির্বাচনে তার দল জয়লাভ করে।
দাদা শেখ লুৎফর রহমান ও দাদি সাহেরা খাতুনের আদরের নাতনি শেখ হাসিনার শৈশব কেটেছে টুঙ্গিপাড়ায়।তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হলে পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। তখন পুরনো ঢাকার রজনী বোস লেনে ভাড়া বাসায় ওঠেন তারা।
বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য হলে সপরিবারে ৩ নম্বর মিন্টু রোডের বাসায় বসবাস শুরু করেন। শেখ হাসিনাকে ঢাকার টিকাটুলির নারী শিক্ষা মন্দিরে ভর্তি করা হয়। এখন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি শেরেবাংলা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে খ্যাত।
সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ১৯৬৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন শেখ হাসিনা। ওই বছরেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সে ভর্তি হন। ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
বঙ্গবন্ধুর আগ্রহে ১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার বিয়ে হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানের করাচিতে নিয়ে যাওয়ার পর গোটা পরিবারকে ঢাকায় এক বাড়িতে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। অবরুদ্ধ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই শেখ হাসিনা গৃহবন্দী অবস্থায় তার প্রথম সন্তান ‘জয়’-এর মা হন। ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর কন্যা সন্তান পুতুলের জন্ম হয়।
শিল্প সংস্কৃতি ও সাহিত্য অন্তপ্রাণ শেখ হাসিনা লেখালেখিও করেন। তার লেখা এবং সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩০টিরও বেশি। প্রকাশিত অন্যতম বইগুলো হচ্ছে-শেখ মুজিব আমার পিতা, সাদা কালো, ওরা টোকাই কেন, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম, দারিদ্র্য দূরীকরণ, আমাদের ছোট রাসেল সোনা, আমার স্বপ্ন আমার সংগ্রাম, সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়ন, বিপন্ন গণতন্ত্র, সহেনা মানবতার অবমাননা, আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি, সবুজ মাঠ পেরিয়ে ইত্যাদি।