"আজ শারমিনের (ছদ্মনাম) স্নাতক শেষ বর্ষের প্রেজেন্টেশন। নিজেকে যথাযথ ভাবে তৈরী করেছে সে। স্লাইডগুলো-ও বেশ চমৎকার হয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারো যেনো শেষে গিয়ে ঝামেলা না বাঁধে তাই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েকবার অনুশীলনও করেছে। বেশ আত্নবিশ্বাসের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে গেল শারমিন।
দুপুরের পর শুরু হলো আজকের প্রেজেন্টেশন। একে একে তার পালা এলো। কিন্ত বিধিবাম। একি হলো ?
মঞ্চে দাঁড়িয়ে কথা বলতে গিয়ে শারমিনের কন্ঠ কাঁপতে লাগলো। নিজেকে সামলে নেয়ার জন্য একটু সময় নিলো। মনে মনে নিজেকে বোঝালো, এটাই তার শেষ প্রেজেন্টেশন। আজকে তাকে ভালো করতেই হবে। না হলে প্রতিবারের মতো সবাই তাকে নিয়ে হাসবে। আবার চেস্টা করতে শুরু করলো শারমিন। কিন্ত আবারো কেমন যেন এলোমেলো লাগছে তার। মনে হচ্ছিলো যেন তার ল্যাপটপের কি বোর্ডের বাটনগুলো ঝাপসা হয়ে আসছিলো। ছিঃ ছিঃ কি লজ্জা! সবাই তাকে দেখছে! কেউ একজন এসে নেক্সট চেপে পরের স্লাইড দিয়ে দিলো। শুরু হলো তার প্রেজেন্টেশন। কিন্তু সে কি বলবে? নিজের নাম আগে বলবে ? নাকি টপিক আগে বলবে? এমন দ্বিধা দ্বন্দে পড়ে কি অনুশীলন করেছিলো কিছুই তার আর মনে নেই শারমিনের।
শারমিনের মতো এরকম অভিজ্ঞতা অনেকেরই কমবেশি অনেকেরই হয়ে থাকে। আমরা প্রায়ই দেখি কোনো অনুশীলন ছাড়াই কেউ অনেক চমৎকার সব কাজ করে ফেলে। আবার সারা দিনরাত পরিশ্রম করেও কেউ কেউ ভালো ফল না পেয়ে হতাশ হয়ে যায়। তখন আমরা বলি, “আমার কপালটাই খারাপ !” কিন্তু আসলেই কি এটা কপালের দোষ ? নাকি অন্য কিছু ? কিন্ত আমরা অনেকেই জানিনা যে একটু আত্মবিশ্বাসী হলে এসব সমস্যা কোন সমস্যাই না। সেই আত্নবিশ্বাস নিয়ে একুট আলোচনা করতে চাই।
আত্মবিশ্বাস কি?
কথায় বলে "জোর যার মুল্লুক তার!" আত্মবিশ্বাস বলতে কি আপনিও এরকম কিছুই ভাবছেন? তাহলে আপনাকেই বলছি, আত্মবিশ্বাস হল, একজন ব্যক্তির নিজের উপর বিশ্বাস এবং তার সফল হওয়ার ক্ষমতা।
আত্মঅহংকার এবং আত্মবিশ্বাস
দুপুরের রোদে বাইরে দাঁড়ালে দেখবেন, আপনার চেয়ে আপনার ছায়া ৩ গুন বড়! আমি যা নই, তা ভেবে মনেমনে খুশি থাকা কিংবা অন্যকে তুচ্ছ ভেবে নিজেকে বড় ভাবার নাম আত্মবিশ্বাস নয়। আপনার অর্জন নিয়ে আবেগাপ্লুত হতে পারেন। সম্মানিত বোধ করতে পারেন। কিন্তু এটাও স্মরণ রাখা দরকার অহংকার পতন ডেকে আনে!
কেনো আত্মবিশ্বাসী হবো
আত্মবিশ্বাসী মানুষ নিজের সুখ নিজে তৈরি করে নেয়। কৃতিত্বের জন্য গর্বিত বোধ করে। কারণ তারা জানে যে, কতটা কঠোর পরিশ্রমের ফল এটি। তারা দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে কথা বলে। যদি কোন কিছু নিয়ে অনিশ্চিত হয়, সাহায্য চাইতে ভয় পায় না। আরও দক্ষতার সাথে শিখে নিতে চেষ্টা করে। আত্মবিশ্বাসী লোকেরা একসাথে অনেকগুলো কাজ নিয়ে নিজেকে চাপে ফেলে না। তারা জানে কীভাবে আশ্বাসের সাথে "না" বলতে হয়। আত্মবিশ্বাস একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। শুধুমাত্র ব্যক্তিগত জীবনে নয়, কর্মজীবনেও।
কিভাবে আত্মবিশ্বাসী হতে পারি?
ছোট লক্ষ্য নিয়ে আগাই
আত্মবিশ্বাসী হতে চাইলে প্রথমেই লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। বড় কিছু অর্জনের জন্য কয়েকটি ছোট লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়া ভালো। এই লক্ষ্যগুলো ডায়েরিতে লিখে ফেলতে পারেন। তবে অবশ্যই একটি সময়সীমা রাখবেন। যেমন এই সপ্তাহে, এই মাসে কি কি অর্জন করতে চান।
ছোট অর্জনগুলোও উদযাপন করি
আপনি যা অর্জন করেছেন তা যত ছোট মনে হোক না কেনো, তা উদযাপন করুন। তাই বলে সোস্যাল মিডিয়া কাঁপিয়ে, সবাইকে দেখিয়ে নয়। নিজের মতো করে কাছের মানুষদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করুন। আপনার প্রতিটি অর্জন "আমি পারি" নিজের উপর এই আস্থা তৈরি করবে।
“না” বলতে শিখি
মাঝেমাঝে "না" বলা স্বাস্থ্যকর হতে পারে। বিশেষ করে যদি এটি এমন কিছু হয়, যা আপনি করতে চান না। তবে অন্যের বুদ্ধিতে প্রভাবিত হয়ে ভালো কাজে "না" বলে দিলে আফসোস করতে হবে।
ভুল স্বীকার করুন
আত্মবিশ্বাসী লোকেরা নিজের সমস্যা কিংবা মতামত জানাতে ভয় পায় না। কেউ তার ভুল ধরবে এই ভয়ে থাকে না। ভুল করলে স্বীকার করে। ভুল থেকে শেখে।
শোনার জন্য সময় নেই
অভিজ্ঞদের কথা শুনলে আপনি নতুন জিনিস শেখার সুযোগ পাবেন। এটি আপনাকে শুধু জ্ঞান অর্জন নয় বরং আরো দক্ষ করবে। সক্রিয়ভাবে শোনা এবং অন্যদের মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে, আপনি আরও ফলপ্রসূ মিথস্ক্রিয়া করতে পারবেন।
অটল থাকি
আত্মবিশ্বাসী লোকেরা লক্ষ্য অর্জনে ধৈর্য্য নিয়ে লেগে থাকে। হয়ত এই মুহূর্তে আপনি দক্ষ নন তবে সময় সুযোগ মতো নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে অবিচল থাকুন। যে যাই বলুক, অস্থির হয়ে অর্ধেক কাজ ফেলে রেখে আরেকটা নতুন কাজ শুরু করবেন না।
তবে মনে রাখতে হবে, শারমিনের পরবর্তী প্রস্তুতি যতই ভালো হোক না কেনো, তার যদি কুঁচকানো পোশাক আর এলোমেলো চুল থাকে তবে তা তাকে আত্মবিশ্বাসী রূপ দেবে না। তাই আত্মবিশ্বাসী হতে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি হওয়া জরুরী।