আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

বাঘের গর্জনে ইতিহাস পাল্টানো জয়

বাঘের গর্জনে ইতিহাস পাল্টানো জয়

৩৮ রানের ব্যবধানে জয়। সংখ্যার বিচারে হয়তো খুব বড় নয়। কিন্তু জয়টা যে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষেই। তাইতো এ সাফল্যকে ইতিহাসের নতুন অধ্যায় বলা কোনোভাবেই ভুল হবে না। কারণ দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে কখনো তাদের হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে এবার ইতিহাস বদলেছে। বদলেছে টাইগারদের পারফম্যান্স। দলীয় কোচ, অধিনায়ক ও ক্রিকেটারদের ছিলো দৃঢ় প্রত্যয়। তাতেই প্রোটিয়া বধ হলো বাঘের থাবায়। 

প্রোটিয়াদের উপর চটাও হয়ে সিরিজের প্রথম ম্যাচে জয়। শুভ সূচনা বাংলাদেশের। তাসকিন আহমেদের বিধ্বংসী বোলিংয়ের সাথে শরিফুল ও মিরাজদের কার্যকর পারফরম্যান্সে ৭ বল বাকি থাকতেই ২৭৬ রানে থেমে যায় স্বাগতিকদের ইনিংস।

বাংলাদেশের দেয়া ৩১৫ রানে টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে যেমন সূচনা দরকার ছিলো তা পায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা। বলা ভালো পেতে দেননি তাসকিন ও শরিফুল। ইয়ানেমান মালানকে দারুণ ডেলিভারিতে ফেরান শরিফুল। তারপর একই ওভারে জোড়া আঘাতে কাইল ভেরাইন্না ও এইডেন মার্করামকে ফিরিয়ে দিলে মাত্র ৩৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে প্রোটিয়ারা। এরপর টেম্বা বাভুমাকে নিয়ে পাল্টা আক্রমণে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ম্যাচে ফেরান র‍্যাসি ভ্যান ডার ডাসেন। কিন্তু দুর্দান্ত এক শর্ট বলে বাভুমাকে সাজঘরে ফেরান শরিফুল, আর ভেঙে যায় ৮৫ রানের জুটি।

এরপরও লড়েছেন ভ্যান ডার ডাসেন। তাসকিন নিজের শেষ ওভারে ডাসেনকে ফিরিয়ে দিলে নিঃসঙ্গ লড়াই শুরু হয় ডেভিড মিলারের। ৮টি চার ও ৩টি বিশাল ছয়ে ৫৭ বলে ৭৯ রানের বিধ্বংসী ইনিংসে জয়ের আশা জাগালেও মিরাজের ৪ উইকেটের মধ্যেই কাটা পড়েন মিলার। আর ৩৮ রানের অনায়াস জয় পায় বাংলাদেশ।৬ রান। তবে ৮ বলের ব্যবধানে আউট হন দুই ওপেনারই। ৯৫ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। চতুর্থ উইকেটে ১১৫ রানের জুটি গড়েন সাকিব-ইয়াসির।

শুক্রবার (১৮ মার্চ) সেঞ্চুরিয়নের সুপার স্পোর্ট পার্কে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। দলকে দুর্দান্ত সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। উদ্বোধনী জুটিতে ৯৫ রান তোলেন তারা। এতে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশের হয়ে সেরা জুটির রেকর্ড গড়েন তামিম-লিটন।

ব্যক্তিগত ৪১ রানে আন্দিলে ফিকোয়াওর এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন তামিম। পার্টনার হারানোর পরপরই ফিরে যান লিটন। তবে ক্যারিয়ারে পঞ্চম ফিফটি তুলে নেন তিনি। পরে আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি মুশফিকুর রহিম। দুই অংকের ঘর স্পর্শ করার আগেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তিনি।

কিন্তু একপ্রান্ত আগলে থেকে যান সাকিব আল হাসান। ইয়াসির আলি চৌধুরিকে নিয়ে দলের হাল ধরেন তিনি। তাতে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। শুরুতে রানের গতি শ্লথ থাকলেও তাদের কল্যাণে তা বাড়ে। চতুর্থ উইকেটে ১১৫ রানের জুটি গড়েন তারা। এতে তামিম-লিটনের রেকর্ড ভেঙে যায়।

ধীরে ধীরে সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যাচ্ছিলেন সাকিব। কিন্তু হঠাৎ পথ হারান দেশসেরা ক্রিকেটার। ৬৪ বলে ৭ চার ও ৩ ছক্কায় ৭৭ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলে ফেরেন তিনি। তাকে শিকার বানান লুঙ্গি এনগিদি।

সঙ্গী হারিয়ে বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি ইয়াসির। কাগিসো রাবাদার কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে ফেরেন এই মিডলঅর্ডার ব্যাটার। ফেরার আগে ক্যারিয়ারে প্রথম আন্তর্জাতিক ফিফটি তুলে নেন তিনি। কাঁটায় ৫০ করে ফেরেন ইয়াসির।

পরে আফিফ হোসেনকে নিয়ে ঝড় তোলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবে তাদের টর্নেডো বেশিক্ষণ চলেনি। ১৭ ও ২৫ রান করে মার্কো জানসেনের শিকার হন তারা। শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেটে ৩১৪ রানের বিশাল স্কোর গড়ে বাংলাদেশ।

শেষদিকে ১৩ বলে ২ ছক্কায় ১৯ রান করে অপরাজিত থাকেন মেহেদী হাসান মিরাজ। অপর প্রান্তে ৭ রানে টিতে থাকেন তাসকিন আহমেদ। স্বাগতিকদের হয়ে জানসেন ও কেশব মহারাজ নেন ২টি করে উইকেট।

দলের সকলের দারুন পারফরম্যান্সের কারণেই প্রোটিয়াদের বিপক্ষে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এমনটাই মনে করছেন টাইগার দলপতি তামিম ইকবাল। যেখানে প্রথমে ব্যাটার আর পরে বোলারদের অবদান দিতে ভুল করেন নি অধিনায়ক। সাকিব ম্যাচ সেরা হলেও বাকী ১০ জনের সমান অবদানেই সিরিজে দল এগিয়ে গেছে বলে জানান তামিম।

দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে এমন জয়ে বেশ ফুরফুরে মেজাজে টাইগার অধিনায়ক। যেখানে জয়ের ভিতটা গড়ে দিয়েছেন ব্যাটাররা বলে জানান তামিম। বলেন, ভাল একটা ওপেনিং পার্টনারশিপ হওয়া, সাকিবের ব্রিলিয়ান্ট ইনিংস, ইয়াসিরের অবিশ্বাস্য ইনিংস, রিয়াদ ভাইয়ের পঁচিশ রানের ইনিংসটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এমনকি মিরাজের দুইটা ছক্কাও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

সেঞ্চুরিয়ানের মাঠ ছোট, তাই এখানে ৩১৪ রানও নিরাপদ ছিলো না অধিনায়কের কাছে। অবশ্য বোলারদের দাপটটা আশা দেখিয়েছে অধিনায়ককে। মিরাজকে একটু বেশিই এগিয়ে রাখতে চান তামিম। মিরাজের প্রশংসা করে অধিনায়ক তামিম বলেন, যখনই আমরা আর্লি উইকেট পাই তখনই বুঝতেছিলাম যে আমরা খেলায় আছি। কিন্তু এই মাঠটা এমনই যে এখানে ৩০০ রান খুব সহজেই চেস করা সম্ভব। কিন্তু আমাদের পেসাররা যেভাবে বোলিং করেছে আর বিশেষ করে মিরাজ পাল্টা আঘাত করেছে তা অসাধারণ ছিল।

তবে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে এমন জয়ে একাদশের সকলকেই কৃতিত্ব দিতে চান তামিম। দলের সবাই নিজেদের শতভাগের বেশি দিয়েছে বলেই এমন জয় সম্ভব হয়েছে। ক্যাপ্টেন তামিম বলেন, এখানে সবারই অবদান ছিল। যেকোনো একজনের পারফরম্যান্সে জিতেছি এটা বলা যাচ্ছে না। ভাল ফিল্ডিং, ব্যাটিং, বোলিং হয়েছে। ওভারঅল সবার কনট্রিবিউশনেই এ ম্যাচে জয় পেয়েছি।

দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম জয়ের পর আগামী সোমবার (২১ মার্চ) জোহানেসবার্গে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে স্বাগতিকদের মুখোমুখি হবে টাইগাররা। প্রথম ম্যাচের পারফরম্যান্স ধরে রেখে দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে সিরিজ জয় নিশ্চিত করার আশা লাল-সবুজদের।  

হাসিব মোহাম্মদ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন বাঘের | গর্জনে | ইতিহাস | পাল্টানো | জয়