দীর্ঘ ৭৮ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বুধবার (২৫ অক্টোবর) রাতেই তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছেন ঢাকায় আসা মার্কিন চিকিৎসক দল। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভার সিরোসিস জটিলতার কারণে ফুসফুসে পানি জমা ও রক্তক্ষরণ বন্ধে ‘টিপস’ পদ্ধতি করা সম্ভব কি না—সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন জনস হপকিন্সের দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছে গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে ওঠেন চিকিৎসক দল। এরপর রাত পৌনে ১১টায় মার্কিন দুই চিকিৎসক খালেদা জিয়াকে দেখতে বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। মার্কিন আরেকজন চিকিৎসক বুধবার রাত ২টায় ঢাকায় আসেন। আজও তিন চিকিৎসক বিএনপি চেয়ারপারসনকে দেখতে হাসপাতালে যাবেন। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে ফের পর্যালোচনা করবেন। এরপরই চিকিৎসকরা এই ‘টিপসের’ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের এক সদস্য জানান, ‘টিপস’ চিকিৎসার একটি পদ্ধতি। বুকে পানি ও রক্তক্ষরণ বন্ধে এটা প্রয়োগ করা হয়। খালেদা জিয়ার এই চিকিৎসা ইমিডিয়েট দরকার। কিন্তু এই টিপস বাংলাদেশে হয় না।
বুধবার সন্ধ্যায় আসা দুই চিকিৎসক হলেন- জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. হামিদ আহমেদ আব্দুর রাব ও ডা. জেমস পিটার অ্যাডাম হ্যামিলটন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রফেসর হামিদ রাব জন হপকিন্সের কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট প্রোগ্রামের পরিচালক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। আর সহযোগী অধ্যাপক জেমস পিটার হ্যামিলটন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলোজি বিভাগের পরিচালক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রেস উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার জানান, ডা. ক্রিসটোস স্যাভাস জর্জিয়াডেস বুধবার দিবাগত রাত ২টায় ঢাকায় পৌঁছান। তিনি ইন্টারভেনশনাল অনকোলজি বিভাগের পরিচালক। তিনি রেডিওলোজি অ্যান্ড রেডিওলোজিকাল বিশেষজ্ঞ।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. জাহিদ হোসেন এই তিন চিকিৎসক সম্পর্কে বলেন, ‘এই তিনজনই হাইলি এক্সপার্ট বিভিন্ন বিভাগে অর্থাৎ নেফ্রোলজি, হেপাটোলজি এবং ইন্টারনাল রেডিওলজি, লিভার-কিডনি ট্রান্সপারেন্ট বিভাগের। তারা ট্রান্সজুগলার ইন্ট্রাহেপাটিক পোরটোসিসটেমিক সান্ট (টিপস) করে বা এ রকম (লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত) রোগী ম্যানেজ করেন। তারা যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস ইউনির্ভাসিটির স্কুল অব মেডিসিনের। তিনজনই খুব দক্ষ ও বিখ্যাত চিকিৎসক।’
বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন মার্কিন চিকিৎসকরা। এরপর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করবেন।
এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়াকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন।
উল্লেখ্য, গত ৯ আগস্ট থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া।