ইসরায়েলের সঙ্গে ‘তাৎক্ষণিক’ বন্দি বিনিময়ের জন্য প্রস্তুত ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে আটক থাকা সকল ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি চায় তারা। গাজা উপত্যকার এই প্রতিরোধ গোষ্ঠীটি এমন কথাই জানিয়েছে।
মূলত বন্দি সংকট মেটাতে পর্দার আড়ালে উভয়পক্ষের সঙ্গে কাতার কাজ করে চলেছে এবং দেশটির এই প্রচেষ্টার মধ্যেই হামাসের পক্ষ থেকে এই বক্তব্য সামনে এলো।
রোববার (২৯ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে ‘তাৎক্ষণিক’ বন্দি বিনিময়ের জন্য হামাস প্রস্তুত বলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার জানিয়েছেন।
সিনওয়ার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা তাৎক্ষণিকভাবে একটি বন্দি বিনিময় চুক্তি করতে প্রস্তুত। যার মধ্যে ইসরায়েলি জেল থেকে সমস্ত ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তির বিনিময়ে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ বাহিনীর হাতে আটক থাকা সমস্ত বন্দির মুক্তি দেয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’
আল জাজিরা বলছে, কাতার তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে পর্দার অন্তরালে কূটনৈতিক নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে হামাস কর্মকর্তা ও ইসরায়েলের সাথে দেশটি কথাও বলে চলেছে। এই মধ্যস্থতার অংশ হিসেবে গত সপ্তাহে দুই আমেরিকান বন্দি- যাদের একজন মা ও মেয়ে এবং দুই বয়স্ক ইসরায়েলি নারীকে মুক্তি দেয়া হয়।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইসরায়েলের মধ্যে ১৯টি কারাগার রয়েছে এবং অন্য একটি কারাগার রয়েছে অধিকৃত পশ্চিম তীরের ভেতরে। এসব কারাগারে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে বন্দি করে রেখেছে ইসরায়েল।
এদিকে হামাসের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তির বিষয়টি যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভায় আলোচনা হয়েছে, তবে এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এছাড়া এ বিষয়ে আরও বিশদ কোনও বিবরণ দিতে অস্বীকার করেছেন তিনি।
নেতানিয়াহু বলেছেন, এ বিষয়ে কোনও বিবরণ প্রকাশ করা হলে তা বিপরীতমুখী ফলাফল সামনে আনতে পারে।
এছাড়া গাজায় স্থল আক্রমণের সময়ও বন্দিদের মুক্তির জন্য যোগাযোগ অব্যাহত থাকবে কিনা সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন করা হলে নেতানিয়াহু উত্তর দেন: ‘হ্যাঁ’।
এর আগে হামাসের মুখপাত্র আবু ওবাইদা বলেছিলেন, ‘শত্রু যদি আটকদের মুক্তির বিষয়টি একসঙ্গে সম্পন্ন করতে চায়, আমরা তার জন্য প্রস্তুত। তারা যদি (বন্দি মুক্তির বিষয়টি) ধাপে ধাপে করতে চায়, আমরা সেটির জন্যও প্রস্তুত।’
প্রসঙ্গত, মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্র ধর্মীয় স্থান আল-আকসা মসজিদের পবিত্রতা লঙ্ঘন এবং অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের অত্যাচারের জবাব দিতে গেলো ৭ অক্টোবর ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে একটি অভিযান চালায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। হামাসের এই অভিযানে কার্যত হতবাক হয়ে পড়ে ইসরায়েল।
হামাসের এই হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৪০০ ইসরায়েলি। নিহতদের মধ্যে ২৮৬ জন সেনাসদস্য রয়েছে বলে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে। হামাসের হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৪ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি। এছাড়া আরও ২২৯ জনকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে গেছে হামাস।
হামাসের হাতে আটক বিপুল এসব বন্দির মধ্যে ইসরায়েলি-আমেরিকান দ্বৈত নাগরিকও রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু নিজেও গাজায় আটক সব বন্দির নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন।