আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

আজও সেই কান্না মুছে যায়নি

আজও সেই কান্না মুছে যায়নি

মুখে হাত দিয়ে আছেন সাকিব। চোখ পানিতে টলমল। চোখে হাহাকার। তাকে জড়িয়ে কাঁদছেন মুশফিকও। বাংলাদেশের ক্রিকেটের কথা এলেই এতোদিন অনেকের চোখে ভেসে আসতো এই ছবিটা। পেশাদারিত্ব ছাপিয়ে এমন ক্রিকেট যে হৃদয় দিয়েও খেলা হয়, তা জানান দেয় এই ছবি। 

নিশ্বাস-দূরত্ব থেকে শিরোপার স্বাদ না পেয়ে ফিরে আসা-ক্রিকেটে এর চেয়ে হৃদয়বিদারক আর কী হতে পারে! ঘরের মাঠে ২০১২ এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে মাত্র  ২ রানের হার বাংলাদেশের।  ২০১২ সালের ২২ মার্চের মিরপুরের সেই হৃদয় ফাঁটা কষ্টের কথা কোনোভাবেই ভোলার নয়। 

বাংলাদেশের ক্রিকেটের অসামান্য আক্ষেপের ছবিও এটি। ২০১২ সালে এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের সাথে হেরে যায় বাংলাদেশ। দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই ম্যাচে হেরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সাকিবরা। ওই হারে হৃদয় ভেঙে দিয়েছিলো বাংলাদেশের মানুষের। সাকিব-মুশফিকদের বুকভাঙা কান্না সংক্রমিত হয়েছিলো কোটি সমর্থকদের মধ্যে। কী আশ্চর্য, এশিয়া কাপের স্মৃতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ১০ বছর আগের সেই ম্যাচটার কথাই বেশি উঠে  আসে। 

বাংলাদেশ এর আগে দুইবার এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠে। একবার ২০১২ সালে ওয়ানডে ফরম্যাটে আরেকবার ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে।

২০১২ সালের ওয়ানডে ফরম্যাটের এশিয়া কাপে ভারত ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রান তাড়া করে জেতে বাংলাদেশ তাই পাকিস্তানের বিপক্ষে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম।

মিরপুরের শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান ১৯ রানেই দুটি উইকেট হারায়। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৩৬ রান।

জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশের তামিম ইকবাল ও নাজিমুদ্দিন ৬৮ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন ছিলো ১৯ রান। মাহমুদুল্লাহ ও আব্দুর রাজ্জাক ৪৯তম ওভারে তোলেন ১০। শেষ ওভারে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৯ রান। পাকিস্তানের হয়ে বল করেন আইজাজ চিমা।

প্রথম চার বলে পাঁচ রান নেন ব্যাটসম্যানরা। শেষ দুই বলে প্রয়োজন ছিলো চার রান। পঞ্চম বলে আব্দুর রাজ্জাক আউট হয়ে যান, শেষ বলে একটি লেগ-বাই রান আসে। বাংলাদেশ ২ রানে হেরে যায়। 

চিকচিক করতে থাকা চোখ আর ওই হাসি মিলিয়ে এমন একটা বেদনার্ত ছবি, যা হৃদয়কে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয়। একটু আগেও প্রাণোচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা মিরপুর স্টেডিয়ামে তখন শ্মশানের নীরবতা। সারি সারি শোকস্তব্ধ মুখ। মিরপুরে তো মাত্র হাজার পঁচিশেক দর্শক। পুরো দেশই তো সেদিন  ছিলো গোটা মিরপুর স্টেডিয়াম। বিজয়োৎসবে মেতে ওঠার অপেক্ষায় প্রতিটি প্রহর গোনা। উল্টো মুশফিকের কান্না ছোঁয়াচে হয়ে ভিজিয়ে দিল কোটি কোটি চোখ। স্বপ্নের মৃত্যু এমন কষ্ট হয়েই বাজে বুকে!

হাসিব মোহাম্মদ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন আজও | কান্না | মুছে | যায়নি