হামাসের কাছে থাকা জিম্মিদের মুক্তি ও যুদ্ধবিরতির বিষয়ে এখনো কোনো চুক্তি হয়নি। জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধবিরতির চুক্তি হচ্ছে বলে ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনকে নাকচ করে দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও হোয়াইট হাউস।
সোমবার (২০ নভেম্বর) আলজাজিরা, রয়টার্স, বিবিসি, স্কাই নিউজসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা গেছে, ৪০ দিনের অব্যাহত হামলার ধারাবাহিকতায় গাজায় ২ শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি বাহিনীর নির্বিচার বোমা হামলায় ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ছয় সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীসহ ৮২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদিকে আল-শিফা হাসপাতাল থেকে অপরিণত ৩১ শিশুকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শনিবার (১৮ নভেম্বর) রাতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, ‘এখন পর্যন্ত’ কোনো চুক্তি হয়নি এবং জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে ‘অসংখ্য ভুল প্রতিবেদন’ প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টি খোলাসা করে বলতে চাই। এখন পর্যন্ত কোনো চুক্তি হয়নি। কিন্তু আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি : যখন আপনাদের জানানোর মতো কিছু থাকবে-আমরা সেটা জানাব।’ বুধবার রয়টার্স জানিয়েছিল, হামাস ৫০ জিম্মিকে মুক্ত করার বিনিময়ে ৩ দিনের যুদ্ধবিরতির শর্তে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। এ ধরনের কোনো চুক্তি নেতানিয়াহু নাকচ করেছেন কিনা জানতে চাইলে নেতানিয়াহু বলেন, ‘এ ধরনের কোনো চুক্তি আলোচনার টেবিলেই আসেনি’।
নেতানিয়াহুর ব্রিফিংয়ের কয়েক ঘণ্টা পর ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও হামাস ৫ দিনের যুদ্ধবিরতির শর্তে অসংখ্য নারী ও শিশুদের মুক্তি দেওয়ার চুক্তিতে একমত ‘হওয়ার কাছাকাছি’ পৌঁছেছে। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেষ মুহূর্তে কোনো বাধা না এলে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে। এই আলোচনার বিষয়ে জানেন এমন কয়েকজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানায় ওয়াশিংটন পোস্ট। এতে বলা হয়, পাঁচ দিনের জন্য সব পক্ষ থেকে লড়াই বন্ধ রাখা হবে। আর প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ৫০ জন বা এর চেয়ে বেশি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে।
তবে হোয়াইট হাউস এই প্রতিবেদনের সত্যতা অস্বীকার করেছে। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন জানান, এ ধরনের চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে কোনো চুক্তি এখনো হয়নি।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের দুই আশ্রয় শিবিরে বিমান হামলায় ৮২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। এএফপিকে ওই কর্মকর্তা বলেন, শনিবার সন্ধ্যার দিকে গাজার আল ফাখুরা স্কুল শরণার্থী শিবিরে গোলাবর্ষণে অন্তত ৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। কাছাকাছি সময়েই গাজার উত্তরাঞ্চলীয় জাবালিয়ার শরণার্থী ক্যাম্পে ইসরাইলের গোলাবর্ষণে নিহত হয়েছেন এক পরিবারের ৩২ জন সদস্য। তাদের মধ্যে ১৯ জনই শিশু ও অপ্রাপ্তবয়স্ক। এছাড়া নির্বিচার বোমা হামলায় ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ছয় সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন বলে ফিলিস্তিনের গণমাধ্যমবিষয়ক পর্যবেক্ষক সংস্থা এমএডিএ, ফিলিস্তিনি প্রেস সিন্ডিকেট জানিয়েছে। হামলায় নিহত সাংবাদিকরা হলেন, সাংবাদিক মুস্তফা আল-সাওয়াফ, আলোকচিত্রী মুসাব আশৌর, আল-আকসা টেলিভিশনের প্রকৌশলী আমর আবু হায়া, আল-আকসা টেলিভিশনের প্রশাসক আব্দ আলহালিম আওয়াদ। এর আগে রোববার সকালের দিকে আলজাজিরার প্রতিবেদনে গাজার বুরেইজি শরণার্থী শিবিরে বোমা হামলায় দুই সাংবাদিকের মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছিল। নিহত দুই সাংবাদিকই কুদস নিউজে কর্মরত ছিলেন। তারা হলেন সাংবাদিক সারি মনসুর ও হাসুনেহ সেলিম।
অপরদিকে গাজায় প্রাণহানির সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার সরকারি মিডিয়া অফিস। গাজার হাসপাতালগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার কারণে গাজায় নিহতের সংখ্যা শুক্রবারের পর হালনাগাদ করা হয়নি।
এদিকে ইসরাইলি বাহিনীর দখলে থাকা আল-শিফা হাসপাতাল থেকে ৩১টি শিশুকে দক্ষিণাঞ্চলের ইউরোপিয়ান এবং নাসের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রোববার আ্যাম্বুলেন্সে করে তাদের পাঠানোর ব্যবস্থা করা হলেও এর আগে দুটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল কুদরা জানিয়েছেন, আল-শিফা থেকে বের করে আনা শিশুদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হলেও তাদের রাফা দিয়ে মিসরে পাঠিয়ে দেয়া হবে।