আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

চাঞ্চল্যকর এক হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের গল্প

চাঞ্চল্যকর এক হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের গল্প

১৯৯৮ সালের ১৮ই ডিসেম্বর ভোর। ট্রাম্পস ক্লাবের সিঁড়ির সামনে থেকে রক্তের ছাপ। চারপাশ রক্তে ভেসে যাচ্ছে। শত মানষের ভিড়। সেদিন উপুর হয়ে পড়েছিলো নিথর দেহটি। মৃতদেহটি ছিলো বাংলাদেশের এক নামী চিত্রনায়কের। দীর্ঘদেহী, সুদর্শন ওই নায়কের নাম সোহেল চৌধুরী।

আশির দশকের মাঝামাঝি ঢাকাই চলচ্চিত্রে পা রেখেছিলেন তিনি। বিয়েও করেছিলেন আরেক জনপ্রিয় তারকা দিতিকে। তবে খুব বেশিদিন টিকেনি তাদের দাম্পত্য জীবন। নব্বইয়ের দশকে ইতি ঘটে তাদের সাংসারিক জীবনের।

১৮ই ডিসেম্বর ভোরে সোহেল হত্যাকাণ্ডের সংবাদ কাভার করার জন্য ঘটনাস্থলে হাজির হয়েছিলেন অপরাধ সাংবাদিক কামরুল হাসান। তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন ঘটনাস্থলে তিনি কি দেখেছিলেন।

সাংবাদিক কামরুল হাসান জানান, উপুড় হয়ে পড়ে থাকা শরীরটা তুলে পুলিশ তাকে নিয়ে গিয়েছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালে আনার অনেক আগেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান চিকিৎসক।

তিনি জানান, সোহেল চৌধুরীর বুকে একটা মাত্র গুলির চিহ্ন ছিল। ওইদিন ট্রাম্পস ক্লাবের নীচে তার সাথে থাকা আরো দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।

ঘটনার প্রায় ২৪ বছর কেটে গেছে। এরপর গেলো মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) রাতে ওই হত্যাকাণ্ডের চার্জশিটভুক্ত আসামি আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।
গেলো বুধবার (৬ এপ্রিল) ব্রিফিং করে র‌্যাব।

ওই সময় র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের জানান, বনানীর যে ক্লাবের নিচে সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল, সেই ট্রাম্পস ক্লাবের যৌথ অংশীদার ছিলেন আশীষ রায় চৌধুরী।

গ্রেপ্তারকৃত আশিষ রায় চৌধুরী একাধিক বেসরকারি এয়ারলাইনসের ঊর্ধ্বতন পদে কর্মরত ছিলেন। সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় তিনি একবার আদালত থেকে জামিন নিয়েছিলেন।

র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও বনানীর ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম ও আশীষ রায় চৌধুরীর পরিকল্পনায় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করেন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন।

তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরীর দায়ের করা মামলায় ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ৯ জনের বিরুদ্ধে ডিবি পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। ২০০১ সালে ৩০ নভেম্বর মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। পরে মামলা বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।

মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই মামলার ১নং আসামি আদনান সিদ্দিকী দুই বছর পর হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুলসহ আদেশ দেন। 

পরে হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট পুনরায় আরেকটি রায় দেন। এ রায়ে আগের জারি করা রুলটি খারিজ করে দেয়া হয়। প্রত্যাহার করা হয় হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ। সর্বশেষ চলতি বছরের গেলো ২৮ মার্চ আদালত অনুপস্থিতির কারণে ছয় পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তারের পরোয়ানা জারি করেন। এর এক মাস পর পরোয়ানার কপি সংগ্রহ করে র্যা ব।

সেখানকার সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সাদিয়া আফরিন শিল্পী গণমাধ্যমকে জানান, চার্জশিটে বলা হয়েছিল, ১৯৯৮ সালের ২৪শে জুলাই ট্রাম্পস ক্লাবে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর বিভিন্ন ইস্যুতে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। এজন্য আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও বান্টি ইসলাম সোহেল চৌধুরীকে 'শিক্ষা দিতে' চান।

চার্জশিটে বলা হয়, ১৯৯৮ সালের ২৪ জুলাই ছাড়াও কয়েকবারই সোহেল চৌধুরীর সাথে ট্রাম্পস ক্লাবের অতিথি এবং কর্মীদের "গোলমাল" হয়েছিল। ক্লাবটিতে ‘অসামাজিক কার্যকলাপ, নাচ গান, মদ্যপান’ করা হতো। এই হত্যাকাণ্ডে মোট ৯ জন জড়িত ছিলেন।

পাবলিক প্রসিকিউটর আরও জানান, চার্জশিটের পর ২০০১ সালের ৩০শে অক্টোবর চার্জ গঠনের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল এই মামলার। মামলায় অভিযোগ গঠন হবার পর বিচারের জন্য মামলাটি পাঠানো হয় ২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে।

তবে মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একজন আসামি ২০০৩ সালে হাইকোর্টে একটি রিট করেন। তার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০০৪ সালে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুলসহ আদেশ দেয়।

২০১৫ সালের ৫ আগস্ট আদালত রুলটি খারিজ করে হাইকোর্টের দেয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করার আদেশ দেয়, যার ফলে মামলার বিচার কাজ চালাতে আইনি বাধা দূর হয়। তবে সেই আদেশ আর নিম্ন আদালতে পৌঁছায়নি। এ বছরের শুরুতে নতুন করে গায়েব নথি উদ্ধারে একটি রিট করা হয়, আর তারপরই নতুন করে শুরু হয় মামলার কার্যক্রম।

এ হত্যাকাণ্ডের মামলায় কারাগারে আছেন- তারিক সাঈদ মামুন ও হারুন অর রশীদ। 

পলাতক রয়েছেন- আসামি আজিজ মোহাম্মদ ভাই, সানজিদুল হাসান ইমন ও সেলিম খান।

তাসনিয়া রহমান

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন চাঞ্চল্যকর | এক | হত্যাকাণ্ডের | নেপথ্যের | গল্প