আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

মৃত্যুর পরও ৬৬ বছর লাখ লাখ টাকা আয় করে যে মরদেহ

মৃত্যুর পরও ৬৬ বছর লাখ লাখ টাকা আয় করে যে মরদেহ

প্রয়াত হওয়ার পর মানুষের দেহের কী হয়? কোনও কোনও ধর্মে মৃতদেহ চিতার আগুনের শিখায় পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আবার কোনও ধর্মে দেহ কবরস্থ করা হয়। আবার অন্য কোনও ধর্মে দেহ স্থান পায় সাজসজ্জাযুক্ত কফিনে। বিভিন্ন ধর্ম এবং দেশের রীতিনীতি মেনেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় মৃতদেহের।

কিন্তু ছোট থেকেই গৃহহীন বা পরিচয়হীন ভাবে জীবন কাটে যে সব মানুষের, তারা মারা যাওয়ার পর কী হয়? কখনও কখনও সরকারি সাহায্যে অন্ত্যেষ্টি হয়। আবার কখনও বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে ঠাঁই হয় হিমঘরে।

কিন্তু কখনও শুনেছেন, মৃত্যুর পরও ৬৬ বছর ধরে কোনও মরদেহ রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছে? এমনটাই কিন্তু ঘটেছিল। মানুষটির নাম ছিল এলমার ম্যাককার্ডি। এলমারের মরদেহ নিয়ে ৬৬ বছর ধরে লাখ লাখ টাকা আয় করেন অনেক মানুষই।

এলমার এমন এক জন ব্যক্তি, যিনি নিজের জীবদ্দশায় অপরাধমূলক কাজের জন্য কুখ্যাতি অর্জন করেন। কিন্তু ‘সুখ্যাতি’ অর্জন করেন মৃত্যুর পর। ১৯১১ সালে মারা যান এলমার। কিন্তু ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত তার মরদেহ অনেক মানুষের রোজগারের উৎস হয়ে ওঠে।

কিন্তু কে এই এলমার ম্যাককার্ডি?

এলমার ম্যাককার্ডি ১৮৮০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন অনাথ। জন্ম থেকে আমেরিকার মেইন শহরে নিজের কাকু-কাকিমার কাছে মানুষ হন। যৌবনে এলমার দস্তা খনির শ্রমিক, পাইপ মিস্ত্রি, এমনকি সৈনিক হিসেবেও কাজ করতেন। যৌবনে মাদকাসক্তও হয়ে পড়েন।

এর পর পকেটে টান পড়তে চুরির পথও বেছে নেন। বেশ কিছু ব্যাংক এবং ট্রেন ডাকাতির চেষ্টা করেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সফল হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অসফল হন। ১৯১১ সালে মত্ত এবং অসুস্থ এলমারকে কেউ বা কারা বুকে গুলি করে। সেই গুলিতেই মারা যান তিনি। জীবনের মতো মৃত্যুর পরও একা ছিলেন এলমার। কোনও আত্মীয় তার মরদেহ দাবি করতে আসেননি।

তবে তার মরদেহের দায়িত্ব নেন মর্গের প্রধান জোসেফ এল জনসন। এলমারের মরদেহ আর্সেনিকযুক্ত একটি সুগন্ধির প্রলেপে ঢেকে তা মমির মতো করে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এই মরদেহ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন জোসেফ। কৌতূহলী জনসাধারণের কাছে এলমারের সুগন্ধযুক্ত সংরক্ষিত মরদেহ প্রদর্শন করার সিদ্ধান্ত নেন জোসেফ। এলমারের মরদেহ দেখার সুযোগ দিয়ে জনসাধারণের কাছে প্রবেশমূল্য হিসেবে অর্থ নিতে শুরু করেন। পাঁচ সেন্ট দিয়ে এলমারের নিথর দেহ দেখার সুযোগ পেতেন দর্শকরা।

পরে এই কথা জানাজানি হয়ে গেলে এলমারের মরদেহ নিয়ে শুরু হওয়া ব্যবসা হাতানোর চেষ্টা করেন কিছু অসৎ ব্যক্তি। কিছু মানুষ সফলও হন। ১৯১৬ সালে এলমারের ভাই বলে পরিচয় দিয়ে কিছু মানুষ সেখানে পৌঁছন। মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে বলে এলমারের দেহ নিয়ে চম্পট দেন এই ছদ্মবেশীরা। কিন্তু মর্গ থেকে বেরনোর পরই এলমারের মরদেহ নিয়ে জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এই ঠগের দল। আবারও ব্যবসা শুরু হয় মৃত এলমারের দেহকে নিয়ে।

এর পরও বহু মানুষের হাত বদল হয় এলমারের দেহ। লস এঞ্জেলসের যাদুঘর, সার্কাস, কার্নিভালের প্রদর্শনী, ভূতের সিনেমায় ‘প্রপ’ হিসেবে ব্যবহৃত থাকে এলমারের দেহ।

অনেক হাত বদলে অবশেষে এলমারের ঠাঁই হয় ‘ল্যাফ ইন দ্য ডার্ক’ নামক বিনোদন পার্কে। সেখানে ‘দ্য থাউজেন্ড ইয়ার ওল্ড ম্যান’ নাম দিয়ে একটি গাছে ফাঁস লাগিয়ে ঝোলানো হয় তার দেহ। এমনকি কালো রঙ দিয়েও তার শরীর ঢেকে দেয়া হয়।

এলমারের মরদেহ নিয়ে ৬৬ বছর ধরে লাখ লাখ টাকা আয় করেন অনেক মানুষই।

১৯৭৭ একটি গোডাউন থেকে এলমারের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। জায়গাটি ছিল অন্ধকার এবং নিস্তব্ধ। মাকড়সার জালে ভরে গিয়েছিল এলমারের মৃতদেহটি। তার দেহ নিয়ে চলা ব্যবসার গৌরবময় অতীতের কোনও আভাস ছিল না এই মরদেহে।

‘দ্য সিক্স মিলিয়ন ডলার ম্যান’-এর সদস্যরা শুটিং করার জন্য এই গোডাউনে পৌঁছে মৃতদেহটি খুঁজে পান। এলমারের দেহ নামিয়ে আনার সময় হাতটি ভেঙ্গে যায়। এ ছাড়াও মৃতদেহের হাড়েও পচন শুরু হয়ে গিয়েছিল।

মৃতদেহের বুকে বুলেটের ক্ষত চিহ্ন এবং তার শরীরে লেগে থাকা ১৯২৪ সালের লস এঞ্জেলেসের একটি মিউজিয়ামের টিকিটের মাধ্যমে এলমারকে চিহ্নিত করা হয়।

মৃত্যুর ছয় দশক পর, এলমারের মরদেহ ওকলাহোমার গুথ্রির বুট হিলে সম্মানজনক ভাবে সমাধিস্থ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন মৃত্যুর | পরও | ৬৬ | বছর | লাখ | লাখ | টাকা | আয় | করে | মরদেহ