সন্তান জন্মের পরে প্রায় ছয়মাস বয়স পর্যন্ত শিশুরা মাতৃদুগ্ধের উপরেই নির্ভরশীল থাকে। চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা এই ছয়মাস সদ্যোজাতদের মায়ের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শই দিয়ে থাকেন। কিন্তু এ সময়ে মায়েদের খাওয়াদাওয়ার দিকেও নজর দেয়া জরুরি। তবে সন্তান জন্মের প্রায় তিন-চার মাস আগে থেকেই খাবার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকলে ভাল।
কী কী খাবেন?
পুষ্টিবিদ কোয়েল পালচৌধুরী বলেন, “ল্যাক্টেটিং মায়েদের ডায়েট করার সময়ে খেয়াল রাখতে হবে যে, প্রথম থেকে ছয়মাস ও ছয়মাস থেকে বারো মাস এই ভাগে মায়েদের ডায়েট ঠিক করতে হবে। গর্ভাবস্থায় মায়েদের যে পরিমাণ ক্যালরি দরকার, সন্তানের জন্মের পরে তার আরও বেশি ক্যালরি দরকার। কারণ পোস্টপার্টাম টিসু রিপেয়ারিং বা ক্ষত সারানোর জন্য বেশি ক্যালরি ও প্রোটিন দরকার। সেল গ্রোথের জন্য হাই-প্রোটিন ডায়েট দরকার। মায়েরা যা খাচ্ছেন, তা দুধের মাধ্যমে তো বাচ্চার কাছেও যাচ্ছে। তাই মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস খাবারে যথাযথ পরিমাণে থাকছে কিনা সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এই মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের মধ্যে জরুরি আয়রন, ক্যালশিয়াম ও আয়োডিন।”
তবে মায়ের ডায়েট ঠিক করার আগে তার শরীরে অন্য কোনও রোগবালাই আছে কিনা সেটা দেখে নেয়ার পরামর্শ দিলেন পুষ্টিবিদ সুবর্ণা রায়চৌধুরী। “মায়েরা যদি সুস্থ থাকেন, তা হলে ২০০০-২২০০ ক্যালরি পরিমাণ রোজ খেতে পারেন। তবে ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ মায়ের ওজনের উপরেও নির্ভর করে। তাই পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে ডায়েট চার্ট তৈরি করে মেনে চলা উচিত। আর সন্তান জন্মের আগের তিন মাস থেকেই মায়ের খাবারের দিকে নজর দিতে হবে। শরীরটা আগে থেকেই তৈরি রাখতে হবে।”
দুধ, দই, ডিম, ছানা, চিজ়, জিয়ল মাছ রাখতে পারেন রোজকার খাবারে। আয়োডিন ফর্টিফায়েড লবণ রাখা যায় মায়ের খাদ্যতালিকায়।
আর আয়রন সমৃদ্ধ খাবারও রাখতে হবে। কারণ সি-সেকশন বা নর্মাল ডেলিভারির সময়ে মায়েদের অনেকটা রক্তপাত হয়। তাই নিজের শরীরটা ঠিক করতে আয়রনও দরকার।
এ সময়ে খাদ্যতালিকায় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারও রাখতে হবে। এতে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকবে না। তবে কোয়েলের পরামর্শ, “বাঁধাকপি, ফুলকপি কম খেলেই ভাল। এতে গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়। বাচ্চাদের মধ্যেও সেই সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর থেকে পেটে ব্যথা হতে পারে। তাই বাঁধাকপি, ফুলকপির বদলে শিম, বেগুন, লাউ, ঝিঙে, কুমড়ো, পটল, কড়াইশুঁটি জাতীয় আনাজপাতি খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন। ফলের মধ্যে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল অর্থাৎ মুসাম্বি, কমলালেবু রাখতে পারেন। আপেল, বেদানা বা মরসুমি ফল খেতে পারেন। আর খুব গ্যাস, অ্যাসিডিটির সমস্যা হলে অল্প অল্প করে ঈষদুষ্ণ জল খেতে পারেন। এতে কিছুটা সুরাহা পাবেন।”
এ সময়ে মায়েদের ওজন বেড়ে যায় বলে অনেকেই অবসাদে ভোগেন। কিন্তু কোয়েলের পারমর্শ, সন্তান জন্মানোর পরে ব্রেস্টফিডিং পিরিয়ডে কমপক্ষে প্রথম তিন মাস নিজের ওজন নিয়ে ভাবলে চলবে না। বরং কী ভাবে নিজে ও বাচ্চা সুস্থ থাকে, সে দিকে নজর দিতে হবে। তিনমাসের পরে আস্তে-আস্তে শারীরচর্চা শুরু করতে হবে।
আর একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। সন্তান জন্মের পরের দুইমাস তেলমশলা ছাড়া একটু হালকা খাবার খাওয়াই ভাল। কষা মাংস, বিরিয়ানি বা দোকানের তেলমশলা যুক্ত খাবার এ সময়ে একটু এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। খুব ইচ্ছে করলে একদিন কম পরিমাণে খেতে পারেন। তবে রোজ বা বেশি খাওয়া চলবে না। এ সময়ে বদহজম হয়ে বমি হলে পেটে বারেবারে চাপ পড়তে পারে। রোজকার খাবারে রসুন রাখার পরামর্শও দিচ্ছেন পুষ্টিবিদরা। এতে শরীরের ক্ষত তাড়াতাড়ি শুকোয়।
সন্তান জন্মের পরে মায়েদের মধ্যে অবসাদ দেখা যায়। পুষ্টিবিদদের মতে, ঠিক মতো ব্যালান্সড ডায়েট রোজ মেনে চললে শরীরের সঙ্গে মনও ভাল থাকে। তাই সন্তানের ভাল থাকার জন্য নতুন মায়ের ভাল থাকা জরুরি। ছয়মাস বাদে সন্তান আস্তে-আস্তে বাইরের খাবার খেতে শুরু করলে ক্যালরির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। রোজ শারীরচর্চাও শুরু করতে হবে। এই সময়টাই ওজন কমানোর জন্য সবচেয়ে ভাল।