রেকর্ড সংখ্যক অভিবাসীর আগমনের জেরে দিন দিন আবাসন সংকট তীব্র হতে থাকায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করছে কানাডা। এমনকি বর্তমানে যেসব শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করে দেশটিতে অবস্থান করছেন, তাদেরকেও কাজের অনুমোদনপত্র (ওয়ার্ক পারমিট) দেয়া হচ্ছে না।
মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কানাডার অভিবাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২৪ সালে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৬০ হাজার শিক্ষার্থীকে প্রবেশ অনুমোদন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। গেলো বছর ২০২৩ সালে যত সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থীকে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছিল, শতকরা হিসেবে এই সংখ্যা তার চেয়ে ৩৫ শতাংশ কম।
তবে এ বিধিনিষেধ স্থায়ী নয়। অভিবাসনমন্ত্রী মার্ক মিলার জানিয়েছেন, আগামী ২ বছর পর্যন্ত এই ব্যবস্থা জারি থাকবে। তিনি আরও জানান, নতুন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিভিন্ন প্রাদেশিক সরকারের সঙ্গে কাজ করবে অটোয়ায় আসীন কেন্দ্রীয় সরকার।
প্রসঙ্গত, বিশ্বের উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সামর্থ্যবান শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষাগ্রহণ ও বসবাসের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় দেশগুলোর মধ্যে কানাডা অন্যতম। ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ শিক্ষার্থী কানাডায় যান।
কানাডার অর্থনীতির জন্যও এটি বেশ লাভজনক। প্রতিবছর বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগমন সংক্রান্ত বিভিন্ন খাত থেকে গড়ে ১ হাজার ৬৪০ কোটি ডলার যোগ হয় দেশটির অর্থনীতি।
ফলে কানাডা সবসময় বিদেশি শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানায়। সেই সঙ্গে যেসব শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষে কানাডায় স্থায়ী হতে চান, তাদের প্রতিও উদারতা প্রদর্শন করে দেশটি।
তবে সরকারের এ নীতির কারণে গেলো কয়েক বছর ধরে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগমনের যে জোয়ার শুরু হয়েছে, তার জেরে ইতোমধ্যে দেশটিতে আবাসন সংকট শুরু হয়েছে। দিন দিন তীব্র হচ্ছে এ সংকট।
সেই সঙ্গে সরকারের এ সিদ্ধান্তের সুযোগ নিচ্ছে কানাডার কিছু সাইনবোর্ড সর্বস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সরকার নির্ধারিত মান (স্ট্যান্ডার্ড) না থাকা সত্ত্বেও তারা বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি করছে।
সোমবার (২৩ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে মার্ক মিলার বলেন, ‘সম্প্রতি কানাডায় বেশ কিছু সাইনবোর্ড সর্বস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারের কোনো যোগাযোগ নেই এবং শিক্ষা, ক্যাম্পাস, শিক্ষার্থীদের সুবিধা সংক্রান্ত সরকারের যেসব নীতি বা মান রয়েছে, সেসবের কোনোটিই প্রতিষ্ঠানগুলো মানছে না শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও তারা অতিরিক্ত ফি রাখছে। এই প্রতারণা চক্র বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।’
‘এছাড়া অতিরিক্ত অভিবাসীদের কারণে আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য পরিষেবা খাতেও চাপ বাড়ছে। দুই বছরের মধ্যে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আসবে বলে আমরা মনে করছি।’
কানাডার বিদেশি শিক্ষার্থীদের অ্যাডভোকেসি সংস্থা কাসার পরিচালক ম্যাথুজ সালমাসি সরকারের এ সিদ্ধান্তকে সমালোচনা করে বলেছেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রবেশাধিকার সীমিত না করে সরকারের উচিত ছিল শিক্ষা প্রশাসনকে শক্তিশালী এবং আবাসন সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।’
তবে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশটির প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।