বিয়েতে পাত্রপক্ষের দাবি মেটাতে গিয়ে কন্যাপক্ষের নিঃস্ব হওয়ার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। গাড়ি, গয়নার পাশাপাশি ফ্ল্যাটও যৌতুক হিসেবে দাবি করা হয়। এই বিয়েতেও যৌতুক দাবি করেছিলেন পাত্রপক্ষ। কিন্তু সেই যৌতুকের কথা শুনলে, যে কেউ অবাক না হয়ে থাকতে পারবেন না। বিয়ের রোশনাইকে বাদ দিয়ে রক্তদান শিবিরের আয়োজনের জন্য শ্বশুরবাড়ির কাছে দাবি করেছিলেন বর। অভিনব ঘটনাটি ঘটেছে বিহারের আওরঙ্গাবাদে।
ঘটনাটি কী?
সোমবার চারহাত এক হয় বিহারের আওরঙ্গাবাদের হাসপুরা গ্রামের বাসিন্দা অনীশ ও সিমরন কেশরির। উভয়ে সমাজকর্মী। সমাজসেবার কাজ করতে গিয়ে উভয়ের মধ্যে হয়েছিল পরিচয়। পরে সেই সম্পর্ক প্রেমে পরিণতি লাভ করে। দুই পরিবার তাদের সেই সম্পর্ক মেনে নেওয়ায়, ২২ জানুয়ারি বিয়ে হয় তাদের।
ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে আজও রমরমিয়ে চলছে পণপ্রথা। তার মধ্যে বিহার হচ্ছে অন্যতম। মেয়েকে পাত্রস্থ করতে গিয়ে অনেক কন্যাদায়গ্রস্থ বাবা হয়েছেন নিঃস্ব। সেই মতো সিমরনের পরিবারকেও যৌতুক নিয়ে এক অজানা আতঙ্ক গ্রাস করেছিল। কিন্তু যৌতুক হিসেবে অনীশ যা দাবি করেছিলেন, তা শুনে হতবাক হয়ে যায় কনেপক্ষ।
কী যৌতুক চেয়েছিল?
বাড়ি, গাড়ি, সোনা-গয়না নয়, অনীশ চেয়েছিলেন বিয়েতে একটা রক্তদান শিবিরের আয়োজন করতে। বরপক্ষ এবং কনেপক্ষের আত্মীয়স্বজনরা যাতে রক্তদান করেন, তার আবেদন করেছিলেন তিনি। জীবন রক্ষার জন্য রক্তদানের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে ছাপানো হয়েছিল দুই বাড়ির বিয়ের কার্ড।
অনীশ জানিয়েছেন যে অতিথিদের মধ্যে বেশিরভাগই বিয়ের কার্ডের স্লোগান বুঝতে পারেননি। বিয়েবাড়িতে আসার পরে বুঝতে পেরেছিলেন পুরো ব্যাপারটা। তবে, সবাই হাসিমুখে রক্তদান করেছিলেন বলে জানিয়েছেন ওই সমাজকর্মী। অনীশ আরও জানিয়েছেন যে বিয়ের অনুষ্ঠান শুরুর আগে রক্তদান প্রক্রিয়া শেষ হয়েছিল।
তিনি ও সিমরন পুরো ব্যবস্থাটি তদারকি করেছিলেন। অতিথিদের পাশাপাশি দুই পরিবারের সদস্যরাও করেছিলেন রক্তদান। এরপরে সেই রক্ত পাঠানো হয়েছিল ব্লাড ব্যাংকে। এই রক্তদান শিবিরই তাদের বিয়ের উপহার বলে জানিয়েছেন দম্পতি।
কী বলছেন ব্লাড ব্যাংকের ডিরেক্টর
পাটনার নিরাময় ব্লাড ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় হয়েছিল রক্তদান শিবির। সংস্থার প্রধান রাকেশ রঞ্জন জানিয়েছেন যে বহু রক্তদান শিবিরের সাক্ষী থেকেছেন। কিন্তু বিয়ে উলক্ষ্যে রক্তদান শিবির, এক নতুন অভিজ্ঞতা বলে জানিয়েছেন তিনি। এই উদ্যোগ, সমাজের কাছে নতুন বার্তা বহন করবে বলেও আশাপ্রকাশ করেছেন ব্লাড ব্যাংকের প্রধান।