পঞ্চগড়ের সদর ও বোদা উপজেলায় দুই ব্যাক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারী) সন্ধ্যায় সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের ডোলোপাড়া এলাকার একটি আম বাগানের ড্রেন থেকে মাটিচাপা অবস্থায় নিখোঁজের তিনদিন পরে ও বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের করতোয়া নদীর সাওঁতাল পাড়া ঘাট এলাকা থেকে হাতপা বাধা অবস্থায় নিখোঁজের ৭ দিন পরে মরদেহ দুটি উদ্ধার করা হয়।
নিহতরা হলো, পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নের লাখেরাজ ঘুমটি এলাকার মৃত ভগিরাম বর্মনের ছেলে টাবুল বর্মন (৪৮) এবং বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের কাউয়া খাল মাঝিয়ারী এলাকার ইয়াসিন আলীর ছেলে নুরুল ইসলাম (৪৫)।
এদিকে সদর উপজেলার হত্যাকাণ্ডের ঘটনাতে ললিতা রাণী (৪০), তার মেয়ে মনিকা রানী (২৩) ও জামাতা প্রভাত চন্দ্র রায় (২৮) নামে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। তবে ললিতা রাণীর স্বামী মন্টু চন্দ্র রায় পলাতক রয়েছেন। এদিকে বোদা উপজেলার হত্যাকান্ডের ঘটনাটিতে জড়িত থাকার প্রমাণ মেলায় আলম (২৫) নামে একজনকে মামলার কয়েকদিন পরে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, এই দুই ব্যাক্তিকে কয়েকদিন আগে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। তাদের দু'জনের শরীরে তেমন আঘাতের চিহ্ন নেই বলে জানা গেছে। তবে হত্যাকারীদের দেয়া তথ্য ও আরও তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে, মরদেহ দু'টি সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারী) সকালে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর হয়েছে।
সদর থানা পুলিশ ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নের লাখেরাজ ঘুমটি এলাকার টাবুল বর্মণকে নিখোঁজের তিনদিন পরে সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের ডোলোপাড়া এলাকার একটি আম বাগানে ড্রেনের মাটি খুঁড়ে ওই ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সূত্রে জানায়, গত বুধবার(৩১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হয়ে স্থানীয় আলসিয়া খানা বাজারে যান টাবুল। তারপর থেকে তার আর কোন খোঁজ খবর পাওয়া যাচ্ছিল নি। তার ছোট ভাই গোবিন্দ বর্মন গেলো বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) পঞ্চগড় সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। তারপর পুলিশ তার খোঁজে অভিযান শুরু করে। এক পর্যায়ে ললিতা রাণীকে জড়িত থাকার সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তার দেয়া তথ্য চাকলাহাট ইউনিয়নের ডোলোপাড়া এলাকার এক আম বাগানের একটি ড্রেনে খুঁড়ে পুলিশ টাবুলের মরদেহ উদ্ধার করে।
জানা যায়, টাবুল বর্মন ও একই এলাকার মন্টু রায়ের স্ত্রী ললিতা রানীর পরকিয়ার সম্পর্ক ছিল। পরে তাদের মাঝে সম্পর্কের অবনতি হলে পরিকল্পিকভাবে হত্যা করা হয় টাবুলকে। তবে কাদের দ্বারা ও কিভাবে হত্যা করা হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে পরকিয়ার বিষয়টি জানলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ললিতা রানীর মেয়ে মনিকা রানী এবং জামাই প্রভাত চন্দ্র রায়কে থানা হেফাজতে নেয়া হয়েছে। তবে ললিতার আটকের পর থেকে তার স্বামী মন্টু রায় পলাতক রয়েছেন।
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার রায় বলেন, নিখোঁজের জিডি করার পর আমরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতায় আমরা টাবুলের মরদেহ আম বাগানের একটি ড্রেনের ভেতর থেকে উদ্ধার করি। সেখানে তাকে হত্যা করে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল। এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া ও আসামীদের গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের করতোয়া নদীর সাওঁতালপাড়া ঘাট এলাকায় নিখোঁজের ৭ দিন পর নুরুল ইসলাম (৪২) নামে এক ইজিবাইক চালকের গামছা দিয়ে হাত পা বাধাঁ মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে নদীর ওই স্থানে মরদেহটি ভেসে থাকতে থেকে স্থানীয়রা পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে সুরতহাল করে। পুলিশ জানায়, গেলো ২৭ জানুয়ারি (শনিবার) সকালে বাড়ি থেকে ইজিবাইক নিয়ে বের হয়ে যায় নুরুল। রাতে বাড়ি না ফিরলে পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করে। পরদিন দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা এলাকায় তার ইজিবাইকটি পাওয়া যায়। তারপর পরিবারের লোকজন প্রায় নিশ্চিত হয় যে তিনি ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছেন। কিন্তু তারপরও তার কোন খোঁজ খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। রোববার (২৮ জানুয়ারি) নুরুলের স্ত্রী শেফালি বেগম বোদা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) অজ্ঞাত ৪ থেকে ৫ জনের নামে অটো ছিনতাই এবং অপহরণের মামলা করেন তিনি। মামলার পর আলম (২৫) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এদিকে নুরুলের নিখোঁজের ৭ দিন পরে শুক্রবার বিকেলে করতোয়া নদীর সাওঁতাল পাড়া ঘাটে একটি মরদেহ ভাসমান অবস্থায় দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা। পরে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ ও তার পরিবারের লোকজন গিয়ে তার মরদেহটি উদ্ধার করে পরিচয় শনাক্ত করে। তবে তার সাথে থাকা ১ লাখ ১৬ হাজার টাকা অক্ষত ছিলো বলে জানা গেছে।
বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক বলেন, ইজিবাইকটি আমরা দেবীগঞ্জের শালাডাঙ্গা এলাকা থেকে উদ্ধার করেছি। আমাদের ধারণা ইজিবাইক ছিনতাই চক্র ২৭ জানুয়ারিই নুরলকে হত্যা করেছে হাত পা বেধে নদীতে ফেলে রেখে গেছে। আমরা এই মামলা একজনকে গ্রেপ্তার করেছি। অন্য আসামীকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।