আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

বিশ্বের সবচেয়ে দামী সুগন্ধির দাম সাড়ে ৯ কোটি, এরপর…

বিশ্বের সবচেয়ে দামী সুগন্ধির দাম সাড়ে ৯ কোটি, এরপর…

মানুষ সুগন্ধি ব্যবহার করে শরীরের দুর্গন্ধ এড়াতে। তবে আবার অনেকে শুধু দুর্গন্ধ এড়াতে নয়, নামীদামি সংস্থার সুগন্ধি ব্যবহার করেন শখে।

দামী সুগন্ধিগুলির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল, বোতল এবং প্যাকেজিং। বিশ্বের অন্যতম মূল্যবান সুগন্ধিগুলির বোতল ক্রিস্টাল, মূল্যবান পাথর এমনকি, হিরে দিয়েও সুসজ্জিত থাকে। বিশ্বের বেশ কয়েকটি উচ্চমানের সুগন্ধির এক একটি বোতল কোটি টাকাতেও বিক্রি হয়। দেখে নেয়া যাক বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান ১১টি সুগন্ধি।

শুমুখ : শুমুখ বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দামী সুগন্ধি। এই সুগন্ধির বোতলটির দাম প্রায় সাড়ে নয় কোটি টাকা। ২০১৯ সালে ‘নাবিল পারফিউম’ নামক সংস্থা এই সুগন্ধি তৈরি করে। কিন্তু কেন এতো দাম এই সুগন্ধির? চন্দন, কস্তুরি এবং গোলাপের নির্যাস দিয়ে তৈরি এই সুগন্ধির বোতল সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি হিরে, আড়াই কেজির সোনা এবং ৫ কেজি ৯শ’ গ্রাম রুপো দিয়ে তৈরি।

তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে এবং প্রায় ৪৯০ বারের চেষ্টার পর প্রস্তুতকারকেরা এই সুগন্ধি তৈরি করেছিল। শুমুখের বোতলটির দুটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডও রয়েছে। শুমুখই এক মাত্র সুগন্ধির বোতল যা এতো সংখ্যক হিরে দিয়ে তৈরি। পাশাপাশি এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা রিমোট নিয়ন্ত্রিত সুগন্ধির বোতল।

ডিকেএনওয়াই গোল্ডেন ডেলিসিয়াস : বিশ্বের দ্বিতীয় মূল্যবান সুগন্ধি ডিকেএনওয়াই গোল্ডেন ডেলিসিয়াস। ডিকেএনওয়াই গোল্ডেন ডেলিসিয়াসের বোতলটির দাম প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা। বিখ্যাত গহনা ডিজাইনার মার্টিন কাটজ এবং বিখ্যাত ডিজাইনার ডিকেএনওয়াই যৌথ ভাবে এই সুগন্ধি তৈরি করেন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল সর্বকালের সবচেয়ে সুন্দর এবং ব্যয়বহুল সুগন্ধি তৈরি করা।

বিজনেস ইনসাইডারের প্রতিবেদন অনুসারে, ডিকেএনওয়াই গোল্ডেন ডেলিসিয়াসের আপেল আকৃতির বোতলটি বিশ্বের ২,৯০৯টি বাছাই করা মূল্যবান পাথর দিয়ে সজ্জিত। যার মধ্যে ১৮৩টি হলুদ নীলকান্তমণি, দুহাজার সাতশো সাদা হিরে, অস্ট্রেলিয়ার ১৫টি গোলাপি হিরে ছাড়াও একাধিক দামি পাথর রয়েছে। এই সুগন্ধির একটি বোতল তৈরি করতে প্রায় দুমাস সময় লাগে।

অপেরা প্রাইমা : ২০১৪ সালে ইটালির বিলাসবহুল সংস্থা বলগারি ১৩০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদ্‌যাপনের সময় পৃথিবীর অন্যতম ব্যয়বহুল সুগন্ধি ‘অপেরা প্রাইমা’ বাজারে আনে। ‘অপেরা প্রাইমা’-র এক একটি বোতলের প্রায় আড়াই কোটি টাকা। ২৫০ ক্যারাট সিট্রিন, ৪.৪৫ ক্যারাট অ্যামিথিস্ট এবং ২৫ ক্যারাট হিরে দিয়ে এই সুগন্ধির বোতল তৈরি করা হয়েছে ৷

ক্লাইভ ক্রিস্টিয়ান নম্বর ওয়ান : ক্লাইভ ক্রিশ্চিয়ান সুগন্ধি সংস্থা ১৮৭২ সালে তৈরি একটি ব্রিটিশ সুগন্ধি সংস্থা। এটিই একমাত্র সংস্থা যাকে ব্রিটেনের রাণী ভিক্টোরিয়ার মুকুটের আদল ব্যবহার করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। ক্লাইভ ক্রিস্টিয়ান নম্বর ওয়ান এই সংস্থার তৈরি একটি সুগন্ধি এবং বিশ্বের চতুর্থ মূল্যবান সুগন্ধি। ক্লাইভ ক্রিস্টিয়ান নম্বর ওয়ান-এর একটি বোতলের দাম প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা। পাঁচ ক্যারাট সাদা হিরে এবং ১৮ ক্যারাট সোনা দিয়ে এই সুগন্ধির বোতল তৈরি করা হয়েছে।

২০০৫ সালে ক্লাইভ ক্রিস্টিয়ান নম্বর ওয়ান-এর মাত্র ১০টি বোতল তৈরি করা হয়। যার মধ্যে সাতটি বোতল বিক্রি হলেও বাকি তিনটি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রদর্শনীতে প্রদর্শনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।

VI: পৃথিবীর অন্যতম উৎকৃষ্ট সুগন্ধি হল জিয়ান্নি ভিভ সুলমানের তৈরি সুগন্ধি VI। এক সময় এটি পপ তারকা মাইকেল জ্যাকসনের প্রিয় সুগন্ধি ছিল। ১৯৯৮ সালে এই সুগন্ধি প্রথম বাজারে এলে মাইকেল এই সুগন্ধির বেশ কয়েকটি বোতল একসঙ্গে কিনে নেন। যদিও এই সুগন্ধির মোট ১৭৩টি বোতল তৈরি করা হয়েছিল। হিরে, চুনি এবং সোনা দিয়ে তৈরি বোতলে রাখা এই সুগন্ধির দাম ৭৪ লাখ টাকা।

১ মিলিয়ন: প্যাকো রাবানে-র ১ মিলিয়ন সুগন্ধি বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের মূল্যবান সুগন্ধিগুলির মধ্যে একটি। এই সুগন্ধির বোতল ১৮ ক্যারাট সোনা এবং একটি ০.৩ ক্যারাট হিরে দিয়ে তৈরি। এ ছাড়াও, সুগন্ধির বোতলটি আবার একটি চামড়ার বাক্সে ভরে বিক্রি করা হয়। এই চামড়ার বাক্সটি একটি সোনার তালা দিয়ে সুরক্ষিত থাকে। এই সুগন্ধির অনেকরকমের গন্ধ রয়েছে। আপনি জেনে অবাক হবেন যে এই সীমিত সংস্করণের সুগন্ধির প্রতিটি বোতলে আলাদা আলাদা গন্ধ রয়েছে। এই সুগন্ধির দাম প্রায় ৪৮ লক্ষ টাকা।

বাক্কারত: অনবদ্য মানের বাক্কারত সুগন্ধি সংস্থার বিশেষ নাম রয়েছে। এই সুগন্ধির তিনটি সীমিত-সংস্করণ রয়েছে। এই সুগন্ধির বোতল পিরামিড আকৃতির এবং স্বচ্ছ স্ফটিক দিয়ে তৈরি। এই সুগন্ধির একটি ৩০ মিলিলিটার বোতলের দাম প্রায় ৫.৪ লাখ টাকা।

শ্যানেল গ্র্যান্ড এক্সট্রেট এন ৫ : শ্যানেলের সীমিত-সংস্করণ এন ৫ সুগন্ধি সংগ্রাহকদের কাছে বিশেষ জনপ্রিয়। এটিই শ্যানেল সংস্থার সবচেয়ে দামি সুগন্ধি। এন ৫-এর একটি ২২৫ মিলিলিটার বোতলের দাম প্রায় ২.৯ লাখ টাকা। ফুলের তোড়ার গন্ধযুক্ত এই সুগন্ধির বোতলটিও দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। জাঁকজমকপূর্ণ এই কাচের বোতল দেখলেই এই সুগন্ধি কিনতে ইচ্ছে করবে।

পোয়েভরে : ১৯০৪ সালে ফরাসি সুগন্ধি নির্মাতা আর্নেস্ট ডালট্রফ ‘ক্যারন পারফিউমার’ নামে সুগন্ধির সংস্থা তৈরি করেন। বর্তমানে এটি ফ্রান্সের অন্যতম বিখ্যাত এবং একচেটিয়া বিলাসবহুল সুগন্ধির সংস্থা। ক্যারন সুগন্ধি সংস্থার পোয়েভরে সুগন্ধি বিশ্বের সব থেকে দামি সুগন্ধিগুলির একটি।

পোয়েভরে-র বোতলটি স্বচ্ছ স্ফটিকের তৈরি এবং এই বোতলের ঢাকনা সোনার তৈরি। এ ছাড়াও বোতলের বাইরের অংশ ছোট ছোট একাধিক স্ফটিক দিয়ে সুসজ্জিত। ১৯৫৪ সালে এই সুগন্ধি মহিলাদের ব্যবহারের জন্য চালু করা হয়েছিল। পোয়েভরে-র ৯০ মিলিলিটার বোতলের দাম দুই লাখেরও বেশি টাকা।

জয় : বিশ্বের সেরা সুগন্ধির তালিকায় নাম আছে ফরাসি সুগন্ধি জয়-এর। বিখ্যাত ফরাসি ডিজাইনার জিন পাতু এই সুগন্ধি তৈরি করেন। ২০০০ সালে জয় ‘শতাব্দীর সেরা সুগন্ধি’-র তকমা পায়। বিভিন্ন ধরনের গোলাপ এবং দশ হাজার জুঁই ফুলের নির্যাস দিয়ে এই সুগন্ধিটি তৈরি করা হয়েছে। জয়-এর প্রতি আউন্স সুগন্ধি-র দাম প্রায় ৭০ হাজার টাকা।

বোল্ট অফ লাইটনিং : ফরাসি সুগন্ধি সংস্থা জার-এর ২০০১ সালে ‘বোল্ট অফ লাইটনিং’ নামক এই সুগন্ধিটি তৈরি করে। হাতে কাটা কাচের বোতলে এই সুগন্ধিটি বিক্রি করা হয়। রজনীগন্ধার নির্যাস দিয়ে তৈরি এই সুগন্ধির প্রতি আউন্সের দাম প্রায় ৬৪ হাজার টাকা।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন বিশ্বের | সবচেয়ে | দামী | সুগন্ধির | দাম | সাড়ে | ৯ | কোটি | এরপর