আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

অদম্য বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবির গল্প

অদম্য বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবির গল্প

নানা দিক দিয়ে আসা ষড়যন্ত্রের ছিলো না শেষ। নানা চড়াই উৎরাই। বিপদ যেন একটার পর একটা লেগেই ছিলো। আদৌ কি হবে পদ্মা সেতু? বাঙালির স্বপ্ন কি পূরণ হবে? এমন সঙ্কাকে বিদায় দিয়ে অবশেষে গড়ে উঠেলো বহুল প্রতিক্ষিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু। 

বিশ্বব্যাংকসহ দাতারা সরে যাওয়ার পরও নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ আরেকবার জানান দিল, এদেশের মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি, পারবেও না। সব প্রতিকুলতা মোকাবেলা করে পদ্মা সেতু এখন বাস্তব। খরস্রোতা নদীর বুকে দৃশ্যমান সেতুটি উঠেছে ‍মাথা না নুয়ানো এক অদম্য বাংলাদেশের প্রতিচ্ছায়া। 

প্রমত্তা পদ্মার বুকে তৈরি হবে সেতু রাজধানীর সাথে সড়কপথে যুক্ত হবে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল। অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাইকা- চূড়ান্ত। সব যখন চূড়ান্ত ঠিক তখন ২০১২ সালে হঠাৎ দুর্নীতির অভিযোগ তোলে বিশ্বব্যাংক, যদিও তখনও শুরুই হয়নি কাজ।

তারপর নানা অভিযোগ, নানা ষড়যন্ত্র, নানা বাধা। অর্থায়ন থেকে সরে গেলো বিশ্বব্যাংক। সরে যায় অন্যরাও। পদত্যাগ করতে হয় সে সময়ের যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে। কেবল মামলা নয়, জেল খাটতে হয়েছে সেতু সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে। চাপ ছিল, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ডক্টর মশিউরকে পদত্যাগ করানোরও।

যদিও কানাডার আদালতে প্রমাণিত হয়, দুর্নীতির অভিযোগ ছিল মিথ্যা। এতো কিছুর পরও ফেরেনি বিশ্বব্যাংক, তাই নিজস্ব অর্থায়নে তা করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হন প্রধানমন্ত্রী। এ নিয়ে বিশিষ্টজনদের কত শত নেতিবাচক মন্তব্য।  নিজস্ব টাকায় এতো বড় সেতু নির্মাণ সম্ভব কি না সে প্রশ্ন তুলে তাদের শঙ্কা ছিল, এর সমাপ্তি নিয়েও। ভয় ছিল অর্থনীতিতে সঙ্কট বাড়ারও। যেন জন্ম নেয়ার আগেই পদ্মা সেতুকে মেরে ফেলার চেষ্টা।

নভেম্বর ২০১৪। শুরু হয় পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ। বিশ্বের দ্বিতীয় খরস্রোতা নদী পদ্মায় এ সেতু তৈরি ছিল বিশাল এক কারিগরি চ্যালেঞ্জ। নদীশাসন, পাইলিংয়ের পর ২০১৭তে শুরু হয় মূল অবকাঠামো তৈরির কাজ। সে বছর সেপ্টেম্বরেই বসে প্রথম স্প্যান আর ২০২০ এর ডিসেম্বরে ৪১তম স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পুরো ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু।

গেলো ১৪ জুন রাতে একসাথে আলো জ্বলে ওঠে সেতুর ৪২৫ টি ল্যাম্পপোস্টে, যেনো সম্ভাবনার নতুন আলোয় প্রজ্বলিত এক টুকরো বাংলাদেশ। দেশি বিদেশি নানা রাজনীতির শিকার হয়েছে এই প্রকল্প। এমনকি এতে না ওঠার কথাও বলেছিলেন সরকার বিরোধীরা। ছিল পদ্মা সেতু নিয়ে নানা গুজবও।

সব শঙ্কা পায়ে ঠেলে তিন হাজার একশ কোটি টাকার এই আইকনিক প্রকল্প এখন বাস্তবতা। এর হাত ধরে বদলাবে বৃহত্তর বরিশাল ও খুলনার কোটি মানুষের জীবনের গল্প। এখন অপেক্ষা, বহুমুখী এই সেতুর ওপর দিয়ে রেল চলাচল শুরুর।

টিআর

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন অদম্য | বাংলাদেশের | প্রতিচ্ছবির | গল্প