জাতীয়

মিল্টনের বিরুদ্ধে তদন্ত ও আইনী ব্যবস্থা চায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন

মিল্টনের বিরুদ্ধে তদন্ত ও আইনী ব্যবস্থা চায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন
সম্প্রতি একটি দৈনিক পত্রিকার প্রকাশিত খবরে মানবসেবার আড়ালে মিল্টন সমাদ্দারের নির্মম ও বর্বরোচিত চিত্র ফুটে ওঠায় এ বিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। ডিএমপি ও সমাজসেবা অধিদপ্তরকে দ্রুততম সময়ে তদন্ত শেষ করে আসছে ৩০ মের মধ্যে কমিশন বরাবর প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়েছে। রোববার (২৮ এপ্রিল) বিষয়টি আমলে নিয়ে কমিশনের এ নির্দেশনার কথা জানিয়ে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। কমিশনের  জনসংযোগ কর্মকর্তা ইউশা রহমানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘গত ২৫ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ‘মানবিক মুখোশের আড়ালে ভয়ঙ্কর মিল্টন সমাদ্দার’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে এসেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মিল্টন সমাদ্দার নামক এক ব্যক্তি ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ নামের বৃদ্ধাশ্রম গড়ে রাস্তা থেকে অসুস্থ কিংবা ভবঘুরেদের কুড়িয়ে সেখানে আশ্রয় দেন। সেসব নারী, পুরুষ ও শিশুকে নিয়ে ভিডিও তৈরি করে প্রায়ই তাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করতে দেখা যায়। মানুষের অসহায়ত্ব তুলে ধরে তাদের জন্য বিত্তবানদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। তার আবেদনে সাড়া দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ১৬টির বেশি নম্বর এবং তিনটি ব্যাংক হিসাবে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকা জমা হয়। এর বাইরে অনেকেই তার প্রতিষ্ঠানে সরাসরি অনুদান দিয়ে আসেন। মানবিক কাজের জন্য এখন পর্যন্ত তিনটি রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও পেয়েছেন মিল্টন সমাদ্দার। কিন্তু মানবিকতার আড়ালে ভয়াবহ প্রতারণার জাল বিস্তার করেছেন তিনি। প্রকৃতপক্ষে তিনি যে কয়জনকে লালন-পালন করছেন, প্রচার করছেন তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। লাশ দাফন করার যে হিসাব দিচ্ছেন, তাতেও আছে বিরাট গরমিল। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর তথ্য হচ্ছে, মিল্টনের বিরুদ্ধে রয়েছে অসহায় মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার নামে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রির অভিযোগ। মিল্টন সমাদ্দারের ব্যক্তি জীবনেও নৈতিকতা বা মানবিকতার বালাই নেই। কিশোর বয়স থেকেই ছিলেন অর্থলোভী। প্রতিবেশী, চিকিৎসক কিংবা সাংবাদিকরা বিভিন্ন সময় তার কাছে শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। এমনকি নিজের জন্মদাতা পিতাকেও বেধড়ক মারধরের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে মানবসেবার অন্তরালে যে নির্মম ও বর্বরোচিত চিত্র ফুটে উঠেছে তা অত্যন্ত ভয়াবহ। মানবসেবা পরম ধর্ম। কিন্তু মানবসেবার নামে মুখোশের আড়ালে রাস্তা থেকে অসুস্থ, অসহায় ও নিরীহ মানুষকে তুলে এনে চিকিৎসার নামে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রির যে অভিযোগ মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে উঠেছে তা অত্যন্ত ভীতিকর, ন্যক্কারজনক ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। গুরুতর অসুস্থদের হাসপাতালে না নিয়ে নিজ প্রতিষ্ঠানে আটকে রাখা, ভুয়া ডাক্তার দিয়ে মৃত্যু সার্টিফিকেট তৈরি করা কিংবা মরদেহের শরীরে কাটাছেঁড়ার যে তথ্য প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তার যথাযথ তদন্ত হওয়া উচিত বলে কমিশন মনে করে। এ অবস্থায় অভিযোগের বিষয়টি নিবিড়ভাবে তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিয়ে দ্রুত কমিশনে প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য ডিএমপি কমিশনারকে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সম্পর্কে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনে প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বলা হয়েছে। আগামী ৩০ মে প্রতিবেদনের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।’

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন মিল্টনের | বিরুদ্ধে | তদন্ত | ও | আইনী | ব্যবস্থা | চায় | জাতীয় | মানবাধিকার | কমিশন