‘আব্রাম, হচ্ছে না। তুমি বুঝতে পারছো না। হাই ক্যাচ ধরার সময় শরীরকে বলের কাছে আনার চেষ্টা করো, বুঝলে?’‘দ্যাখো, এটাকে বলে ফ্রন্টফুট ডিফেন্স। ব্যাট আর পায়ের পজিশন এ শট খেলার সময় এ রকম থাকবে। আমি যা করছি, দেখে রাখো! তুমিও ট্রাই করো, পারবে।’‘আরে, বল লাগল নাকি মাথায়? দেখি, দেখি। বলো দেখি আব্রাম, ক’টা আঙুল তোমার সামনে? একটা? নাকি দু’টো?’
রোববার (২৮ এপ্রিল) ইডেনে সন্ধে সাড়ে সাতটার সময় বছর আটান্ন-র এ ভদ্রলোকের একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান, সবই পুত্র-কেন্দ্রিক। সরি, পুত্রের ক্রিকেট কেন্দ্রিক। আর হ্যাঁ, বছর আটান্ন-র ভদ্রলোক খুব চেনা। তাকে চেনে বিশ্ব। চেনে তাকে ভারতবর্ষ। কেউ ডাকে ‘জওয়ান’। কেউ ডাকে ‘পাঠান।’ আসলে তিনি খান, শাহরুখ খান! ছেলের সঙ্গে আমোদ-অভিলাষে তার ইডেন-আগমন।
আই পিএল শুরু হওয়ার পর সতেরোটা বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত যা কখনও দেখেনি কেউ, তাও দেখে রাখল ইডেন। দেখে রাখলো, কেকেআর প্র্যাকটিসে প্রথমবার আসা টিম মালিক শাহরুখ খানকে। প্রতিদিন নাইট প্র্যাকটিস দেখতে আসা কিছু ভাগ্যবান-ভাগ্যবতীদের কথাও সমান ভাবছিলাম। আচ্ছা, এই তীব্র দাবদাহে বাড়ি থেকে বেরনোর সময় তারা কি ন্যূনতম আন্দাজ পেয়েছিলেন যে, নাইট ট্রেনিংয়ে আজ শাহরুখ নামের আনন্দ-সূর্য উঠবে? ‘দিন আনি-দিন খাই’ পৃথিবীর প্রতিভূ যারা, ইডেন মহল্লার পারিপার্শ্বিকে ছড়িয়ে থাকা, মশার আদরে রাত কাটানো ‘সস্তা’ মনুষ্য দল, তারাও কি ভাবতে পেরেছিলেন এতো কাছ থেকে ‘বাদশা’ দর্শন হয়ে যাবে? মিটে যাবে সাধ, পূর্ণ হবে অ্যাদ্দিনের বাসনা? অজ্ঞাত একজনকে তো অস্ফুটে বলতেও শুনলাম, সেই কবে থেকে সিনেমার পর্দায় দেখছি। করণ-অর্জুন আমার দেখা শাহরুখের প্রথম সিনেমা। এতো দিনে লোকটাকে চোখের সামনে দেখলাম!
উল্লেখ্য, ইডেন গ্যালারির প্রাচীরের এ পার থেকে যতটুকু শোনা গিয়েছে, তার ভিত্তিতে লেখা। লেখার অবশ্য রয়েছে আরও অনেক কিছু। এই যেমন, কখনও বোলার, কখনও ব্যাটারের ভূমিকায় শাহরুখের অবতরণ। কখনও রিঙ্কু সিংয়ের বোলিংয়ে বাদশাহী শট খেলা! কেকেআরের কেউ কেউ বলছিলেন যে, প্ল্যান-প্রোগ্রাম করে কিছুই হয়নি। হুট করে শাহরুখ ঠিক করেন, ইডেন আসবেন। আব্রাম নাকি চাইছিল একটু ক্রিকেট খেলতে। তাই ছেলের সঙ্গে আমোদ-অভিলাষে তার ইডেন-আগমন।
এএম/