গভীর সাগরে দেখা নেই মাছের। জাল ফেললেও মিলছে না সামুদ্রিক মাছ। ফলে শূন্য ট্রলার নিয়ে সাগর থেকে ফিরছেন কক্সবাজার উপকূলের জেলেরা। তীব্র দাবদাহে সাগরে মাছ না পেয়ে তাদের উপকূলে ফিরতে হচ্ছে। আর মৎস্য ব্যবসায়ীরা লোকসানে জর্জরিত হওয়ার পাশাপাশি রাজস্ব আদায়েও ধস নেমেছে। বেকার হয়ে পড়তে পারে প্রায় ৬৫ হাজার জেলে। বেকায়দায় পড়েছেন পাঁচ শতাধিক মৎস্য ব্যবসায়ী।
শুক্রবার (৩ মে) সকালে দেখা যায় একের পর এক প্রায় মাছশূন্য সাগর থেকে উপকূলে ফিরছে। ঘাটে ভিড়লেও মেলে না মাছ উঠানামা দৃশ্য। বাঁকখালী নদীতে নোঙর করা রয়েছে সারি সারি মাছ ধরার ট্রলার। প্রতিদিন কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ৩০ থেকে ৫০ কোটি টাকার সামুদ্রিক মাছ বেচাকেনা হতো। অথচ সেখানে এখন পল্টুন অনেকটা মাছশূন্য। বেকার হয়ে সময় পার করছেন মৎস্য শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা।
ট্রলার মালিকদের দাবি, তীব্র দাবদাহের পাশাপাশি সাগরে ট্রলিং জাহাজের দৌরাত্ম্যে সাগরে মাছশূন্য হয়ে পড়ছে। কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ বলছে, মাছের আকালের কারণে মৎস্য ব্যবসায়ীরা লোকসানে জর্জরিত হওয়ায় রাজস্ব আদায়েও ধস নেমেছে।
এদিকে, তীব্র গরমের কারণে যেমন সাগরে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না, তেমনি ট্রলিং জাহাজের কারণে সাগর মাছশূন্য হয়ে পড়ছে। যেভাবে ট্রলিং জাহাজের ব্যবহার বেড়েছে সেক্ষেত্রে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় মাছশূন্য হয়ে পড়বে সাগর, এমন আশঙ্কা করছেন ট্রলার মালিকরা। কক্সবাজারে নিবন্ধিত জেলে রয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার। আর নিবন্ধিত নৌযান রয়েছে ৬ হাজারের মতো।
দেখা যায়, কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর উপকূলে নোঙর করেছে এফবি পায়েলমনি নামে একটি ট্রলার। দুশ্চিন্তার যেনো শেষ নেই ফিরে আসা মাঝি মাল্লা রমজান, শাহজান ও সাহেদের। গত এক মাসে ২ বার ১০ লাখ টাকা খরচ করে তারাসহ ২২ জেলে নিয়ে গিয়েছিলো সাগরে। কিন্তু সাগরে ধরা পড়েনি ইলিশসহ কোনো মাছ। ফলে লোকসানের কারণে ট্রলার মালিক আর সাগরে মাছ শিকারে তাদের পাঠাচ্ছেন না। এখন কীভাবে তাদের সংসার চলবে তা নিয়ে রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।
তারা বলছেন, দুশ্চিন্তা যেন পিছুই ছাড়ছে না। সাগরে গিয়ে ১০ দিন জাল ফেলেও মাছ মেলেনি।
আরেক জেলে আনোয়ার হোসেন বলেন, পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে সাগরে মাছ শিকারে গিয়েছি ১৫ জন জেলে। কিন্তু ১১ দিন সাগরে জাল ফেলে অল্প কিছু মাছ পেয়েছি। মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে বিক্রি করে পেয়েছি মাত্র ৬০ হাজার টাকা। সেই হিসেবে ট্রলার মালিকের লোকসান প্রায় ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এখন ট্রলার মালিক আর সাগরে মাছ শিকারে পাঠাচ্ছে না। তাই বেকার হয়ে পড়েছি।
কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের সহকারী হিসাব নিয়ন্ত্রক আশীষ কুমার বৈদ্য জানান, গেল বছর এ সময় প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখন সেখানে খুবই কম টাকার মাছ বিক্রি হচ্ছে। বলতে গেলে প্রায় ৪০ শতাংশ মাছ বিক্রি হচ্ছে।
এএম/