দুপুরের খাবার খেয়েই মোটরবাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান মিঠু শেখ। কিন্তু ঘণ্টাখানেক বাদে হন্তদন্ত হয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলেন। ছেলেকে যেনো চিনতেই পারছিলেন না মা মজিদা বিবি। মিঠু বারবার বলছিলো, ‘আমি ওকে শেষ করেছি।’’’
কী হয়েছে, কী কাণ্ড ঘটিয়ে এসেছেন পুত্র, তা তখনও বুঝতে পারেননি মজিদা। তবে ছেলের কান্না দেখে তিনিও কাঁদতে থাকেন। একটু পরে তার কাছে স্পষ্ট হল ব্যাপারটা, যখন ছেলে নিজেই পুলিশকে ফোন করলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ এসে গ্রেপ্তার করে মিঠুকে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদের হাজারিপাড়ায়।
শনিবার (১১ মে) ভারতীয় সংবাদ সংস্থা আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়। জানা গেছে এক সহপাঠিনীকে খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছে মিঠু শেখ।
শনিবার দুপুরে দৌলতাবাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে খুন হয় সাবিনা খাতুন (১৭)। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তাকে ফোন করে স্কুলের সামনে ডেকেছিলেন মিঠু। অল্প কিছুক্ষণের কথাবার্তা, তার পরেই কথা কাটাকাটি এবং খুন। পকেট থেকে ছুরি বার করে ‘দীর্ঘ দিনের প্রেমিকা’ সাবিনাকে একের পর এক ছুরির কোপ দিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান মিঠু। ছুরির আঘাতে গলার নলি কেটে যায় ওই নাবালিকার। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ তার দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, মৃত্যু হয়েছে নাবালিকার। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই গ্রেপ্তার হন অভিযুক্ত।
মিঠুর পরিবার জানায়, খুনের পর বাড়ি থেকে নিজেই পুলিশকে ফোন করেছিলেন তিনি। বাড়ি থেকেই মিঠুকে নিয়ে যায় পুলিশ। সাবিনার সঙ্গে দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক ছিল তার। কিন্তু কিছু দিন ধরে দু’জনের মধ্যে অশান্তি চলছিল। মিঠু সন্দেহ করেছিলেন, প্রেমিকার জীবনে অন্য কোনও পুরুষ এসেছেন। অন্য দিকে, সাবিনা চেয়েছিল মিঠুর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে। এ নিয়ে দু’জনের কথা কাটাকাটি হয়। তারপরেই খুনের ঘটনা।
মিঠুর মা জানান, ওই নাবালিকার সঙ্গে একাধিক ‘ছেলে’র সম্পর্ক ছিল। তার ছেলে বার বার নাকি নিষেধ করেন। কিন্তু মেয়েটি শোনেনি। ও তো মরলই। আমার পরিবারটাকেও শেষ করে গেল।
সাবিনার পরিবার থেকে জানা গেছে, তিনি এ বছরই মাধ্যমিক পাশ করে ভর্তি হয়েছিল লালবাগ কলেজে।
মৃতার বড় ভাই সেলিম রেজার অভিযোগ, তার বোনকে খুনের পরিকল্পনা করেই ডেকে নিয়ে গিয়েছিল মিঠু। তিনি বলেন, ‘‘যে ভাবে পরিকল্পনা করে ডেকে নিয়ে গিয়ে আমার বোনকে মিঠু খুন করেছে, তাতে ওর কঠিনতম শাস্তি হোক। রাজনৈতিক কিংবা আর্থিক প্রভাবে ও কোনও ভাবেই যেন ছাড় না পায়।’’
মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মজিদ ইকবাল খান বলেন, ‘‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছিল পুলিশ। কিছুক্ষণের মধ্যে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে প্রণয়ঘটিত সম্পর্ক থেকে খুন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এখনই কিছু বলা যাবে না।’
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২ মে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের গোরাবাজার এলাকায় খুন হন কলেজছাত্রী সুতপা চৌধুরী। খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন ‘প্রেমিক’ সুশান্ত চৌধুরী। গেলো বছরই আদালত তাকে ফাঁসির সাজা দেয়া হয়। শনিবার ১১ মে-র এই খুনের ঘটনার সঙ্গে বছর দুই বছর আগের ওই খুনের মামলার তুলনা টানছেন অনেকে।
এসি//