জাতীয়

পাঁচ কোটি টাকার চুক্তি, ২০ মিনিটের কিলিং মিশনে ছিলেন ৫ জন

পাঁচ কোটি টাকার চুক্তি, ২০ মিনিটের কিলিং মিশনে ছিলেন ৫ জন
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমকে (আনার) খুন করার জন্য হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী  ঘাতকদের সঙ্গে পাঁচ কোটি টাকার চুক্তি করেছিলেন। আনোয়ারুল আজিম গত ১২ মে কলকাতা যাওয়ার পরের দিনই ঘাতকরা হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। মাত্র ২০ মিনিটেই শেষ হয় কিলিং মিশন।   এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বাংলাদেশে গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানা গেছে বলে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ওই জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫৬ বছর বয়সী আনোয়ারুল আজিম কলকাতায় গিয়ে পূর্বপরিচিত গোপাল বিশ্বাস নামের একজনের বাসায় উঠেছিলেন। পরদিন চিকিৎসক দেখানোর কথা বলে ওই বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বুধবার বলেছেন, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যা করা হয়েছে।  চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন, বাংলাদেশিরাই হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সুনিশ্চিত তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় ভারতের কেউ জড়িত না। অনেক তথ্য আছে, তদন্তের স্বার্থে অনেক কিছুই বলা যাচ্ছে না। আটকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। নেপথ্যের কারণ পরে জানাবো।’ খুনের মোটিভ জানার কাজ চলছে বলেও তিনি জানান। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ওয়ারী বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহিদুর রহমান রিপনের নেতৃত্বে একটি দল মোহাম্মদপুর থেকে প্রথমে আমানুল্লাহ নামে একজনকে আটক করার পরই চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার জট খুলতে শুরু করে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তাঁর মুখ থেকে বেরিয়ে আসে ভয়ংকর সব তথ্য। পরে আটক করা হয় ফয়সল ওরফে জুয়েলকে। ডেকে নেওয়া হয় শিলাস্তি নামে এক যুবতীকে। এসব জানানো হয় ভারতীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে। দুই দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো নিশ্চিত হয় খুন হয়েছেন এমপি আনার। ওই পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে বাংলাদেশে সৈয়দ আমানুল্লাহ, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজি নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে মো. আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহিন নামের এক ব্যক্তির নাম এসেছে। কলকাতার নিউ টাউনে যে ফ্ল্যাটে সংসদ সদস্যকে হত্যা করা হয়, সেটি এই আক্তারুজ্জামানের ভাড়া করা। তিনি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. সহিদুজ্জামানের ছোট ভাই। ঢাকা ও কলকাতার পুলিশ জানায়, আনোয়ারুল আজিম ১৩ মে দুপুরে গোপাল বিশ্বাসের বাসা থেকে বেরিয়ে কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিভা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে যান। সেখানেই হত্যা করা হয় তাঁকে। তাঁর নিখোঁজের ঘটনায় ১৮ মে কলকাতার বরাহনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন গোপাল বিশ্বাস। নিখোঁজের তদন্ত করতে গিয়ে কলকাতার পুলিশ তথ্য পায়, ওই ফ্ল্যাটে সৈয়দ আমানুল্লাহ ও শিলাস্তি রহমান নামের দুই ব্যক্তিও ছিলেন। এই তথ্যের সূত্র ধরে এই দুজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ। পরে ফয়সাল আলী ওরফে সাজি নামে আরও এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়,  গ্রেপ্তার হওয়াদের জিজ্ঞাসাবাদ ও অন্যান্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তথ্য পেয়েছে। এর মধ্যে সৈয়দ আমানুল্লাহ নামে এক ব্যক্তি খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।  একসময় চরমপন্থী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ওই ব্যক্তির গ্রামের বাড়ি খুলনার ফুলতলার দামোদর ইউনিয়নে। একটি হত্যা মামলায় আমানুল্লাহ সাত বছর (১৯৯১-৯৭) ও পরে আরেকটি হত্যা মামলায়  ২০০০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত জেল খাটেন। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে আমানুল্লাহ নামে পরিচয়দানকারী ওই ব্যক্তি পুলিশকে জানিয়েছেন, সংসদ সদস্য আনোয়ারুলকে খুনের জন্য আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহীনের সঙ্গে তাঁর পাঁচ কোটি টাকার চুক্তি হয়। এদিকে, গ্রেপ্তারকৃদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে আক্তারুজ্জামান ও আনোয়ারুল আজিম পুরানো বন্ধু। আক্তারুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে। ঢাকার গুলশানে তাঁর বাসা রয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এবং নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে তাঁর বাসা রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা পুলিশকে জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কলকাতার ওই ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়ার সময় আক্তারুজ্জামান যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট ব্যবহার করেছিলেন। আক্তারুজ্জামানকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ খুঁজছে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সোমবার ঢাকা থেকে একটি ফ্লাইটে দিল্লি হয়ে কাঠমান্ডু চলে গেছেন আক্তারুজ্জামান। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়,স্বর্ণ চোরাচালানের আন্তর্দেশীয় চক্রের দ্বন্দ্বের জেরে পরিকল্পিতভাবে আনোয়ারুলকে ভারতে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমআর//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন পাঁচ | কোটি | টাকার | চুক্তি | ২০ | মিনিটের | কিলিং | মিশনে | ছিলেন | ৫ | জন