মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি ক্রমেই উত্তপ্ত ও জটিল আকার ধারণ করছে। গাজা ইস্যুতে আরব দেশগুলোর মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতি-অবিনতি কিংবা বন্ধু থেকে শত্রুতে পরিণত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।
এক সময় পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থনে সৃষ্টি হওয়া আরব বসন্তের ঢেউয়ে ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে মিশর, তিউনিশিয়া, ইয়েমেনসহ বেশ কয়েকটি দেশের। তবে ‘আরব বসন্ত’ মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশকে টলাতে পারেনি তারাই আজ শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে হাজির হচ্ছে। বদলে দিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক মানচিত্র। নিজ স্বার্থরক্ষায় বিশ্বস্ত বন্ধু রাষ্ট্রের অকৃত্রিম সহায়তাও ভুলে যাচ্ছে অনেক দেশ। হাত মেলাতে দ্বিধা করছে না এক সময়ের শত্রু রাষ্ট্রের সঙ্গেও।
‘বন্ধু থেকে শত্রু ’ আর ‘শত্রু থেকে বন্ধু’ দাবার ছকের এই খেলায় এবার নতুন চাল দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়া। প্রায় একযুগ ব্যাকফুটে থাকার পর বাশার আল আসাদ সরকারের এমন প্রত্যাবর্তন নিঃসন্দেহে মধ্যপ্রাচ্যের সব সমীকরণ বদলে দেবে।
২০১১ সালে আরব বসন্ত শুরু হলে পুরো পশ্চিম বিশ্ব যখন সিরিয়ার বাশার আল আসাদ সরকারের পতন ঘটাতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছিলো তখনও রাশিয়ার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো অকৃত্রিম ও বিশ্বস্ত বন্ধু রাষ্ট্র ইরান। তবে সময়ের পরিবর্তনে এই বিশ্বস্ত বন্ধুর বুকেই যেনো ছুরি চালাতে চাইছে সিরিয়া। কয়েক দশকের পুরনো আর বিশ্বস্ত বন্ধু ইরানকে ধরাশায়ী করতে উঠে পড়ে লেগেছে বাশার আল আসাদ সরকার।
দামেস্ক-তেহরানের কৌশলগত সম্পর্ক বেশ কয়েক দশকের পুরনো। ১৯৮০ সালে ইরাক-ইরান যুদ্ধ শুরু হলে তেহরানের পাশে দাঁড়িয়েছিলো দামেস্ক। টানা আট বছর ইরানকে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়েছিলো সিরিয়া। এর প্রতিদানে ২০১১ সাল থেকে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে ‘প্রক্সিযোদ্ধা’ সরবরাহের পাশাপাশি কাড়ি কাড়ি ডলার দিয়ে বাশার আল আসাদ সরকারকে টিকিয়ে রাখছে ইরান।
তবে সম্প্রতি দেশ দুটির কয়েক দশকের এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে বেশ ফাটল ধরেছে। চলতি বছরের মে মাসে বাহরাইনে অনুষ্ঠিত আরব লিগ সামিটে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। ওই সামিটে ১৩ বছর বহিষ্কার থাকার পর সিরিয়াকে আবারও আরব লিগে ফিরিয়ে আনা হয়। এর প্রতিদানে আবু মুসা, লেসার তুনব ও গ্রেটার তুনব-এই তিনটি দ্বীপের ওপর আরব আমিরাতের সার্বভৌমত্বের ঘোষণায় সমর্থন জানায় সিরিয়া।
ইরান কখনও ভাবতে পারেনি আরব আমিরাতের দাবিকে সমর্থন জানাবে সিরিয়া। আরব আমিরাত দীর্ঘিদিন ধরে এই তিনটি দ্বীপের মালিকানা দাবি করে আসলেও ১৯৭১ সাল থেকে দ্বীপগুলোর মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ইরানের হাতে। তাই বন্ধুর পক্ষে কথা না বলে শত্রু শিবিরের দিকে ঝুঁকে পড়া সিরিয়ার এই প্রবণতা ভাল চোখে দেখছে না ইরান। এনিয়ে দেশটিতে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে অসন্তোষ।
বিশ্লেষকদের অনেকের ধারণা, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধে ইরানের সমর্থন ও রাশিয়ার সামরিক হস্তক্ষেপ না থাকলে ক্ষমতায়ই টিকে থাকতে পারতেন না প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। অথচ সেই বাশার আল আসাদের সরকারই এখন সাপ হয়ে ছোবল দিচ্ছে ইরানকে।
তবে এতকিছুর পরও তেহরানের সঙ্গে দামেস্কোর সম্পর্কে ভাটা পড়বে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের অনেকে। তারা বলছেন, সম্পর্কে ভাটা পড়ার কোনো কারণ নেই। আরব লিগে সিরিয়ার প্রভাব খুব একটা নেই, তাই আমিরাতের হাত ধরলেও তা দামেস্ক-তেহরান সম্পর্কে ক্ষতির কারণ হবে না। আর সেটা ভাল করেই জানেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ।
এমআর//