আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানান কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দিবসটি পালিত হবে। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হলো ‘করবো ভূমি পুনরুদ্ধার, রুখবো মরুময়তা।’
১৯৭২ সালে জাতিসংঘের মানবিক পরিবেশ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) উদ্যোগে প্রতি বছর ৫ জুন ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
দেশজুড়ে কমছে বনভূমি ও সবুজ
একটি দেশের পরিবেশ-প্রকৃতি ঠিক রাখতে অন্তত ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা দরকার হলেও বাংলাদেশে মোট আয়তনের ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ এলাকায় বনভূমি রয়েছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট পরিচালিত প্ল্যাটফর্ম গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা কমেছে প্রায় ৬ লাখ ৭ হাজার ৬২০ একর। এই সময়ে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ আগের তুলনায় ১৩ শতাংশ কমেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে ২০১৭ সালে প্রায় ৭০ হাজার একর।
এছাড়াও গত ২৮ বছরে রাজধানী ঢাকার সবুজ এলাকা কমে মাত্র ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যদিও নগর পরিকল্পনার মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি আদর্শ শহরে ২৫ শতাংশ সবুজ এলাকা থাকার কথা বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)।
বছর বছর বাড়ছে দাবদাহ
গত মার্চ-এপ্রিলে তীব্র তাপপ্রবাহে কষ্ট পেয়েছে মানুষ। বাতাসে জলীয়বাষ্পের আধিক্য থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে শ্রমজীবীরা। এবার তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে ১ এপ্রিল থেকে। এটি শেষ হয় ২৬ এপ্রিল। অর্থাৎ টানা ২৬ দিন তাপপ্রবাহ ছিল। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ১৯৪৮ সাল থেকে বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এপ্রিলে যতদিন তাপপ্রবাহ ছিল তা গত ৭৬ বছরেও হয়নি। সর্বশেষ গত বছর ২০২৩ সালের ১৬ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। কিন্তু এবার গত ২০ এপ্রিল যশোরে ৪২.৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
বৃদ্ধি পাচ্ছে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময়ে ২৪টি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি হয়েছে। ভূ-পৃষ্ঠের সঙ্গে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা সমানভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। একইভাবে বঙ্গোপসাগরে তাপমাত্রা বাড়ছে। ফলে ঘূর্ণিঝড় তীব্র হচ্ছে।
সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় রিমাল উপকূলে স্পর্শ করা থেকে শুরু করে নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পরও প্রায় ৫০ ঘণ্টা বাংলাদেশে ছিল। এর প্রভাবে ভারী বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাস বয়ে গেছে। তবে এর দীর্ঘ সময় থাকা নিয়ে অবাক হওয়ার কথা জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। তারা বলছেন, বছর বছর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এর পাশাপাশি ভূমির তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে ঘূর্ণিঝড় তীব্র হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় রিমালে উপকূলীয় এলাকার ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩৫ হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়াও রিমালের প্রভাবে ১৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ঘূর্ণিঝড় রিমালে ২০ জেলায় ৬ হাজার ৮৮০ কোটি টাকার সমপরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর প্রভাবে সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থান থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত ১৩৪টি হরিণের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে বুধবার বাংলাদেশে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন নানান কর্মসূচির উদ্যেগ নিয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (৪ জুন) এক সংবাদ সন্মেলনে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী জানান, পরিবেশ দিবস উপলক্ষে শেরেবাংলা নগরের পরিবেশ মেলা চলবে ৫ জুন থেকে ১১ জুন পর্যন্ত এবং বৃক্ষমেলা চলবে ৫ থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত। প্রতিদিন মেলা চলবে সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
মন্ত্রী বলেন, অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ড কনজারভেশন ২০২৩ ও ২০২৪, বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার ২০২২ ও ২০২৩ এবং সামাজিক বনায়নে উপকারভোগীদের মধ্যে লভ্যাংশের চেক বিতরণ করা হবে। দেশের সব জেলা ও উপজেলায় এবং ঢাকা মহানগরীর ১০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন করা হবে।
টিআর/