রাগ, দুঃখ, অভিমান, হতাশা। জীবনের বিভিন্ন সময়ে এই ধরনের অনুভূতিগুলো এতটা তীব্র হয়ে যায়, নিজের স্বাভাবিক বোধশক্তি কাজ করে না। তার ফল হয় আবেগপ্রবণ হয়ে এমন কোনও আচরণ করে ফেলা, পরে যা নিয়ে আফসোসের সীমা থাকে না।
এই যেমন ধরুন, রেগে গিয়ে সন্তানকে মারধর করে ফেললেন, হয়তো সে তেমন কিছু করেইনি। আবার রাগের মাথায় হাতে থাকা গ্লাস ছুড়লেন। সেটা তো ভাঙলই, ভেঙে গেল ঘরের অন্য জিনিসও।
শুধু রাগই বা কেন, বাদানুবাদ, তর্কবিতর্ক। জীবনে অনেক সময় আসে, মুহূর্ত আসে যখন পরিস্থিতি বিচার করে চুপ করে যাওয়াটাই শ্রেয়। কারণ এক বার বাজে কথা মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেলে, কাউকে আঘাত দিয়ে কথা বলে ফেললে পরে কিন্তু তা ফেরানো যায় না।
মনস্তত্ত্ববিদরা বলছেন, জীবনে কখনও কখনও পরিস্থিতি বুঝে চুপ করে যাওয়াটাই উচিত।
জেনে নেয়া যাক, কোন সময়গুলোতে চুপ থাকতে হবে-
রাগ
কারও সঙ্গে মনোমালিন্য, কাজ নিয়ে চাপ-সহ নানা কারণে প্রচণ্ড রাগ হয়। কারও কারও ক্ষেত্রে রাগের বহিঃপ্রকাশ হয় ভয়ঙ্কর। প্রবল চিৎকার-চেঁচামেচি। কেউ রাগের মাথায় চারটে বাজে কথা বলেন। কেউ আবার জিনিস ভাঙাভাঙিও করে ফেলেন। রাগের সময় নিজেকে সংযত করতে চুপ করে যান। কিছুটা সময় কারও সঙ্গে কথা না বলে একা থাকুন। ভাবুন, কী হয়েছে। সেটা পুরোটাই কি অন্যের দোষ? কোনও কথা বলার আগে নিজেকে শান্ত করে সিদ্ধান্ত নিন।
উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়
প্রতি দিনের জীবনে হঠাৎ করেই এমন কিছু পরিস্থিতি তৈরি হয় যেখানে আচমকা কারও সঙ্গে বাদানুবাদ হয়ে যায়। দু’তরফের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ে অনেক সময় পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়। এমন পরিস্থিতিতে কথা না বাড়িয়ে চুপ করে যাওয়া বুদ্ধিমত্তার পরিচয়।
কোনও কিছু না জানলে
সকলেই যে সমস্ত কিছু জানবেন এমনটা নয়। অনেক সময় অনেকে বলেন এই বিষয়টা জানেন না, তা হলে জানেন কী! না জেনে কথা বলবেন না। এই জাতীয় কথা শুনে যে কেউ রেগে যাবেন আরও পাঁচটা কথা বলবেন, সেটাই হয়। তবে এই সমস্ত ক্ষেত্রে কটাক্ষকে পাত্তা না দিয়ে স্পষ্ট ভাবেই বলতে পারেন বিষয়টা যখন বিশদে জানা নেই, তাই কথা বাড়াতে চান না। চুপ করে যাওয়াটা শ্রেয় সে ক্ষেত্রে।
সমালোচনা
জীবনে প্রত্যেক মানুষকেই হয়তো কখনও না কখনও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। তার ফল, চট করে মাথা গরম হয়ে যাওয়া। রাগের মাথায় অন্যদের আরও কয়েকটা কথা বলা। কিন্তু ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হবে, এতে আদৌ কি সমালোচনা থামবে? তার চেয়ে বরং সেই মুহূর্তে অন্যের কথায় পাত্তা না দিয়ে এড়িয়ে যাওয়া, চুপ করে যাওয়া ভাল।
নিশ্চুপে সান্ত্বনা
জীবনে কাছের মানুষকে হারানোর দুঃখ প্রবল হয়। সেই আঘাত এক এক মানুষের ওপর এক এক রকম ভাবে পড়ে। সেই মানুষটিকে কী ভাবে সান্ত্বনা দেয়া যায় বোঝা যায় না অনেক সময়। তবে কখনও কখনও, কথা না বলেও সেই মানুষটির পাশে থাকা যায়। তাকে যত্ন করা যায়। আগলে রাখা যায়। সেই মানুষটি নিজেই যাতে কষ্টের কথা বলতে পারে সেই সুযোগ দেওয়া যায়।
দামাদামি বা দাবি আদায়
অফিসে বেতন বৃদ্ধি হোক বা গাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনা। এ নিয়ে বেশি কথা বলার বদলে কখনও কখনও এক অথবা দু’বার চুপ হয়ে যাওয়া কিন্তু ফলপ্রসূ হতে পারে। গাড়ির দাম হয়তো আপনাকে যা বলছে আপনার মনে হচ্ছে কম হতে পারে। আপনি আপনার দামটা বলে চুপ করে যেতে পারেন। কেনার ব্যাপারে উৎসাহ কম দেখাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে অনেক সময় আপনার এই চুপ হয়ে যাওয়া কাজে আসতে পারে।
এ ছাড়াও বড় কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেও চুপ করে ভাবা দরকার। আবেগের বশে নেয়া সিদ্ধান্ত ভুল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।