পবিত্র ঈদুল আজহার আর চার দিন বাকি। আজ বুধবার (১২ জুন) থেকে শুরু হয়েছে ‘স্পেশাল’ ট্রেন সার্ভিসে ঈদযাত্রা। তবে প্রথম দিনের যাত্রা স্বস্তিদায়ক হয়নি ঘরমুখো মানুষের জন্য। প্রথম দিনে নির্দিষ্ট সময়ে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছায়নি ট্রেন, স্বাভাবিকভাবে ছেড়েও গেছে বিলম্বে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। তীব্র গরমের মধ্যেই স্টেশনে অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘক্ষণ। এতে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, আবার অনেকেই ঈদের সময় এই বিলম্বকেই ‘নিয়ম’ ভেবে মেনে নিয়েছেন।
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন থেকে দিনের প্রথম ট্রেন রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস (৭৬৯) ভোর ৬টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি ঢাকা স্টেশন ছেড়েছে সকাল ৭টা ২০ মিনিটে। দিনের দ্বিতীয় ট্রেন পর্যটক এক্সপ্রেস (৮১৬) ভোর ৬টা ১৫ মিনিটে ঢাকা স্টেশন ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি ছেড়েছে ৬টা ৫০ মিনিটে। তৃতীয় ট্রেন সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস (৭০৯) সকাল সাড়ে ৬টায় ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি ঢাকা স্টেশন ছেড়েছে সকাল সাড়ে ৮টায়।
এ অবস্থায় ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনের শিডিউলে বিলম্বের প্রভাব পড়েছে অন্য ট্রেনগুলোতে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ট্রেনের রেকগুলোতে কোচ সংযোজন ভুল হওয়ায় বিলম্ব হয়েছে। গেলো ঈদুল ফিতরের মতো এবারও প্ল্যাটফর্ম এলাকায় যেন কোনো টিকিটবিহীন ব্যক্তি প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
ঈদযাত্রায় ট্রেনের যাত্রীদের যেন কোনো ভোগান্তিতে পড়তে না হয় এজন্য প্লাটফর্ম এলাকায় প্রবেশের মুখে র্যাব, পুলিশ এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) কন্ট্রোলরুম স্থাপন করেছে।
জানা গেছে, মোহনগঞ্জগামী মহুয়া কম্পিউটার (৪৩) সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি এখন পর্যন্ত কোনো প্লাটফর্ম পায়নি; চট্টগ্রামগামী কর্ণফুলী কম্পিউটার (৪) ৮টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি এখন পর্যন্ত কোনো প্লাটফর্ম পায়নি; রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেস (৭৭১) সকাল ৯টা ১০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ৪০ মিনিট বিলম্বে ট্রেনটি ৯টা ৫০ মিনিটে ঢাকা স্টেশন ছেড়ে যায়। ঈদ স্পেশাল ট্রেন 'দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল' সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ট্রেনটি ১ ঘণ্টা বিলম্বে ১০টা ২৫ মিনিটে ঢাকা স্টেশন ছাড়ে। জামালপুরগামী জামালপুর এক্সপ্রেস (৭৯৯) সকাল ১০টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ট্রেনটি কোনো প্লাটফর্ম পায়নি। পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস (৭০৫) সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার শিডিউল ছিল। তবে ২৫ মিনিট বিলম্বে ১০টা ৪০ মিনিটে ট্রেনটি ঢাকা স্টেশন ছেড়ে যায়।
বাংলাদেশ রেলওয়ের দায়িত্বশীল সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, ঈদযাত্রার প্রথম দিন হিসাবে সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু শুরুর দিকের দুটি ট্রেনের রেকে কোচ সংযোজন ভুল হওয়ায় সেগুলো সংশোধন করতে আরও ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। ফলে এই ট্রেনগুলোর বিলম্বের জের অন্য ট্রেনগুলোতেও টানতে হচ্ছে। ফলে ২০/৩০ মিনিট দেরি হচ্ছে।
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, ঢাকায় আসার পর ট্রেনগুলো আবার ছেড়ে যায়। এখন ওইদিক থেকে যদি কোনো ট্রেন দেরিতে আসে তাহলে ট্রেনগুলো এখান থেকেও দেরিতে ছেড়ে যায়। কারণ ট্রেনগুলো ঢাকায় আসার পরে ক্লিনিং ওয়াটারিং করা হয়। এজন্য প্রত্যেকটা ট্রেনে অন্তত এক ঘণ্টা সময় লাগে।
তিনি আরও বলেন, আজ থেকে ট্রেনে ঈদযাত্রা শুরু। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া। যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ট্রেনগুলো ১০-২০ মিনিট দেরিতে ছাড়তে পারে।